Advertisement
E-Paper

ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের অপমৃত্যু, ‘সিনিয়র’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার উলুবেড়িয়া স্টেশনের কাছে রেললাইনের ধার থেকে আকাশ অগ্রবাল (২০) নামে এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের মৃতদেহ মিলেছিল শুক্রবার রাতে। কলেজের পাঁচ ‘সিনিয়র’ ছাত্রের বিরুদ্ধে তাঁকে মারধর এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন পরিজনরা। কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:২৭
আকাশ অগ্রবাল (ইনসেটে)। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের মা। ছবি: সুব্রত জানা।

আকাশ অগ্রবাল (ইনসেটে)। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের মা। ছবি: সুব্রত জানা।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার উলুবেড়িয়া স্টেশনের কাছে রেললাইনের ধার থেকে আকাশ অগ্রবাল (২০) নামে এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের মৃতদেহ মিলেছিল শুক্রবার রাতে। কলেজের পাঁচ ‘সিনিয়র’ ছাত্রের বিরুদ্ধে তাঁকে মারধর এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন পরিজনরা। কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করেছেন।

উলুবেড়িয়ারই একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বি-ফার্ম বিভাগের প্রথম বর্ষে পড়তেন আকাশ। থাকতেন কলেজের হস্টেলে। আদতে গয়ার বাসিন্দা হলেও তাঁর বাবা প্রকাশ অগ্রবাল এবং মা সীমাদেবী দিল্লিতে থাকেন। শনিবার তাঁরা উলুবেড়িয়ায় এসে ওই অভিযোগ দায়ের করেন। এমনকী, পুলিশের বিরুদ্ধেও তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। দোষীদের শাস্তির দাবিতে কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রেরাও এ দিন বিক্ষোভ দেখান।

একযোগে রেল ও রাজ্য পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এ দিন কলেজে উপস্থিত খড়্গপুর বিভাগের রেল পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস তদন্তে কোনও গাফিলতি হচ্ছে না বলে সীমাদেবীদের আশ্বস্ত করেন। রেল পুলিশ সুপার বলেন, “দোষীরা কেউ ছাড়া পাবে না। আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা রুজু করা হয়েছে। মৃতের ঘনিষ্ঠদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” আকাশের লেখা একটি চিঠি তাঁর এক বন্ধুর থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। যেটিকে তদন্তকারীরা আকাশের ‘সুইসাইড নোট’ হিসেবে দেখছেন। সেখানেও ওই পাঁচ ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।

কলেজ কর্তৃপক্ষ আকাশের উপরে ‘সিনিয়র’ ছাত্রদের অত্যাচার বন্ধে উদাসীনতার অভিযোগ মানেননি। তাঁদের দাবি, শুক্রবার আকাশ যখন তাঁর উপরে মারধর হয়েছে বলে বিভাগীয় প্রধানের কাছে অভিযোগ জানাতে যান, তখন বিভাগীয় প্রধান তাঁকে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের কাছে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আকাশ সেখানে যাননি। ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবীন্দ্র দেবনাথের দাবি, “অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে তাঁদের সব নথিপত্র পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের সাসপেন্ডও করা হয়েছে।”

কেন মারধর করা হল আকাশকে?

পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলা নিয়ে ‘ইলেকট্রনিক্স’ এবং ‘সিভিল’ বিভাগের ওই পাঁচ ছাত্রের সঙ্গে কিছু দিন ধরেই গোলমাল চলছিল আকাশের। শুক্রবার বিকেলে এক ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলায় ক্যান্টিনে আকাশের সঙ্গে ওই পাঁচ ছাত্রের বচসা হয়। তার পরে আকাশকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা গিয়ে আকাশকে উদ্ধার করেন। আকাশ বিভাগীয় প্রধানের কাছে অভিযোগ জানাতে যান।

তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অভিযোগ, বিভাগীয় প্রধান আকাশকে অধ্যক্ষের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অধ্যক্ষ আকাশকে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের কাছে যেতে বলেন। কিন্তু আকাশ সেখানে না গিয়ে পুলিশের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে কথা চাউর হয়ে যেতে ওই পাঁচ ছাত্র তাঁকে হুমকি দেয়। ম্যানেজিং ডিরেক্টরের অবশ্য দাবি, তাঁর কাছে আকাশ যাননি। তিনি বলেন, “বিভাগীয় প্রধানের কাছে ওই ছাত্র গিয়েছিলেন। প্রধান বিবাদ থামিয়ে দিয়ে তাঁকে পরিচালন সমিতির কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেন। কিন্তু আকাশ তা করেননি।”

বিকেল ৫টা নাগাদ আকাশ একাই হস্টেলে নিজের ঘরে ফিরে আসেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তাঁকে ডাকতে গেলে তিনি কেঁদে ফেলেন। পরে মাকে ফোন করে গিয়ে তিনি দেখেন মোবাইলে ‘ব্যালান্স’ নেই। তিনি এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে নিয়ে কাছেই মোবাইলের দোকানে ফোন ‘রিচার্জ’ করিয়ে মায়ের সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলেন। তাঁর ওই বন্ধুর দাবি, ‘রিচার্জ’-এর টাকা তিনি মেটাচ্ছিলেন। সেই ফাঁকে লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে একটি ডাউন লোকালের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন আকাশ।

শনিবার আকাশের ওই বন্ধু বলেন, “আকাশ বলছিল, আমাকে অপমান করা হল, কিন্তু কারও কাছে সুরাহা পেলাম না। মনের দুঃখেই ও আত্মহত্যা করল।” আকাশের মা সীমাদেবী বলেন, “ছেলে শুক্রবার ফোনে আমায় বলছিল, এখানে ভাল লাগছে না। এখানে কয়েক জন খুব অত্যাচার করছে। শেষ পর্যন্ত ছেলেটা মারাই গেল। আমি দোষীদের শাস্তি চাই।”

southbengal uluberia akash agarwal seniors suspended accidental death of engineering student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy