কোনওটায় গ্রন্থাগারিক নেই। চালাচ্ছেন গ্রুপ-ডি কর্মীরা। আবার কোনওটি গ্রন্থাগারিক ও কর্মীর অভাবে বছরের পর বছর বন্ধ। বস্তুত হাওড়া জেলার অধিকাংশ গ্রন্থাগারেই বর্তমানে এমন অবস্থ। অথচ গ্রন্থাগারগুলির বিল্ডিং, আসবাবপত্র, বই-সহ পরিকাঠামোগত উন্নয়নে চলতি আর্থিক বছরে জেলা গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ করেছে ৩ কোটি টাকা। কিন্তু যেখানে গ্রন্থাগারিক ও কর্মীর অভাবে গ্রন্থাগারগুলি মৃতপ্রায়, সেখানে গ্রন্থাগারিক বা কর্মী নিয়োগ না করে অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নতির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গ্রন্থাগার কর্মীরাই। তাঁদের দাবি, উন্নয়ন অবশ্যই দরকার কিন্তু উন্নয়নের ফসল যাতে সকলে পায় তার ব্যবস্থা আগে করলেই ভাল হয়। যদিও জেলা গ্রন্থাগার কর্তাদের দাবি, তাঁরা শুধু সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করছেন। গ্রন্থাগারিক বা কর্মী নিয়োগের বিষয়টি সরকার দেখবে।
জেলা গ্রন্থাগার সূত্রের খবর, হাওড়ায় ছোট বড় মিলিয়ে, সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মিলিয়ে ১৩৬টি গ্রন্থাগার রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি গ্রন্থাগারেই গ্রন্থাগারিক ও কর্মী নেই। ৪০-৫০টি গ্রন্থাগার চলছে গ্রুপ-ডি কর্মী দিয়ে। জেলায় বিভিন্ন গ্রন্থাগারে ১১৮টি পদ ফাঁকা রয়েছে। গ্রন্থাগার কর্মীদের অভিযোগ, শূন্য পদ পূরণের ব্যাপারে গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের নজরই নেই। অথচ গ্রন্থাগারের নতুন ভবন নির্মাণ, সংস্কার, বইপত্র, আসবাবপত্র কেনা অর্থাৎ পরিকাঠামোর উন্নতিতে বরাদ্দ করছে কোটি কোটি টাকা। তাঁদের আরও অভিযোগ, বহু গ্রন্থাগার রয়েছে যেখানে বর্তমান পরিকাঠামো মোটামুটি ঠিকই রয়েছে। পাঠক-পাঠিকারাও গড়ে ৩০-৪০ জন করে আসেন। কিন্তু পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে নাভিশ্বাস উঠছে ওই সব গ্রন্থাগারে কর্মীদের। যেমন সাঁকরাইলের থানামাকুয়া পাঠাগার, অভয়নগর পাঠাগার, বাউড়িয়া বুড়িমালির পাবলিক লাইব্রেরি, পাঁচলার বালক সংঘ পাঠাগার। এই সব গ্রন্থাগার চলছে শুধু গ্রুপ ডি-র কর্মী দিয়ে। আবার উদয়নারায়ণপুর তরুণ সংঘ পাঠাগার চলছে শুধু গ্রন্থাগারিক নিয়ে। কোনও কাজে তিনি হাওড়া জেলা গ্রন্থাগারে এলে সমস্যায় পড়তে হয় পাঠক-পাঠিকাদের। অথচ জেলার মধ্যে অন্যতম বড় গ্রন্থাগার এটি।
পশ্চিমবঙ্গ সাধারণ গ্রন্থাগারকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, রাজ্যে ৫৫২০টির মধ্যে ২২১৩টি পদ খালি। সরকার সেগুলিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করুক। সরকার গ্রন্থাগারগুলির পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য যে ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটা প্রশংসনীয়। তা সত্ত্বেও কর্মীর ঘাটতি থাকলে ওই উন্নয়নের সুফল পাঠক-পাঠিকারা পাবেন না। এটা সরকারের ভেবে দেখা উচিত।” হাওড়া জেলা গ্রন্থাগারিক তুষার কান্তি চট্টোপাধ্যায় বলেন, সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। পরিকাঠামোর উন্নতি হয়ে থাকলে তো ভালই। তবে সেই সঙ্গে কর্মী নিয়োগ হলে পাঠক-পাঠিকারা আরও ভাল পরিষেবা পাবেন।” গ্রন্থাগারের উন্নতির বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব গ্রন্থাগারিকের। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে গ্রন্থাগারিক না থাকায় গ্রুপ ডি-র কর্মীরাই সেই সমস্ত কাজ সামলাচ্ছেন। যার মধ্যে রয়েছে অর্থের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও। যদিও শুধু হাওড়া নয়, রাজ্যের অন্য জেলাতেও গ্রন্থাগারগুলির বেশিরভাগেরই এমন অবস্থা বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।