Advertisement
E-Paper

এখনও জলমগ্ন তিন ব্লকের কিছু পঞ্চায়েত, চাষে ক্ষতির আশঙ্কা

বৃষ্টি আর ডিভিসি-র ছাড়া জলে সম্প্রতি প্লাবিত হয় হুগলির হরিপাল, জাঙ্গিপাড়া এবং আরামবাগ মহকুমার খানাকুলের কয়েকটি পঞ্চায়েতের নিচু এলাকা। এত দিনেও জমা জল সে ভাবে না নামায় চাষে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। হরিপাল, জাঙ্গিপাড়াকে ভাসিয়েছে ডাকাতিয়া খাল, খানাকুল-২ ব্লকের নিচু এলাকায় ঢুকেছে মুণ্ডেশ্বরীর জল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:১৮
চাষের জমি। কিন্তু এখন আর তা বোঝার উপায় নেই। ছবি: দীপঙ্কর দে।

চাষের জমি। কিন্তু এখন আর তা বোঝার উপায় নেই। ছবি: দীপঙ্কর দে।

বৃষ্টি আর ডিভিসি-র ছাড়া জলে সম্প্রতি প্লাবিত হয় হুগলির হরিপাল, জাঙ্গিপাড়া এবং আরামবাগ মহকুমার খানাকুলের কয়েকটি পঞ্চায়েতের নিচু এলাকা। এত দিনেও জমা জল সে ভাবে না নামায় চাষে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

হরিপাল, জাঙ্গিপাড়াকে ভাসিয়েছে ডাকাতিয়া খাল, খানাকুল-২ ব্লকের নিচু এলাকায় ঢুকেছে মুণ্ডেশ্বরীর জল। তবে, ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসেব এখনও করে উঠতে পারেনি প্রশাসন। জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন, “কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা ইতিমধ্যেই গ্রামে গ্রামে গিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” কৃষি-বিজ্ঞানীরা জানান, ওই সব জায়গার চাষিরা যদি বন্যা-সহনশীল ধান চাষ করে থাকেন, তা হলে তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে, প্রথাগত ভাবে যে আমনের চাষ হয়, তা দিন সাতেক জলে ডুবে থাকলে ক্ষতি হতে পারে।

উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি এ বার ঝাড়খণ্ড এবং বিহারেও ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। গঙ্গায় জলস্তর বেড়েছে। জল বাড়ে ডিভিসি-র জলাধারগুলিতেও। সেই কারণে ডিভিসি তাদের পাঞ্চেত এবং মাইথন জলাধার থেকে পর্যায়ক্রমে জল ছাড়া শুরু করে। ফলে, ডিভিসি-র সেচখালগুলি এখন ডুবু ডুবু। কোথাও আবার খালের বাঁধ টপকে নিচু এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করে। জেলা প্রশাসন এবং কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারে বর্ষার মরসুমের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ধানের বীজতলা তৈরিতে কিছুটা দেরি হয়। পরে আবার বীজতলা তৈরি হলে এক দিকে বৃষ্টি, অন্য দিকে ডিভিসি-র ছাড়া জল চিন্তার ভাঁজ ফেলে চাষিদের কপালে। হরিপালের ডাকাতিয়া খালের একটি জায়গায় নদীবাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢোকে সম্প্রতি। বেশ কয়েক হেক্টর চাষের জমি ডুবে গিয়েছে। সেচ দফতর বালির বাঁধ দিয়ে কোনওক্রমে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কৃষিজমি থেকে জল নামার কোনও পরিস্থিতি তৈরি না হওয়ায় ধানের বীজতলা এবং চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছে জেলা কৃষি দফতর। হরিপালে ডাকাতিয়া খালের সংস্কার হলেও পাশের জাঙ্গিপাড়ায় সেই কাজ অসম্পূণর্র্ থেকে গিয়েছে। একই ভাবে হাওড়াতেও ওই খালের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়নি। সাতের দশকের গোড়ায় রাজ্যের তৎকালীন সেচমন্ত্রী গনিখান চৌধুরীর আমলে সেই কাজ শুরু হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু হাওড়ায় গিয়ে তা থমকে যায়। রাজ্যের বর্তমান সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় খালটি সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছেন। কিন্তু এ বার বর্ষা চলে আসায় তা শেষ করা যায়নি। সেই কারণে এ বারেও ওই খালের ধারের চাষজমি থেকে সহজে জল বের হচ্ছে না বলে সেচ দফতরের কর্তারা মনে করছেন। তা ছাড়া, হরিপালে এখনও ‘ইনস্পেকশন’ বাঁধের কাজ হয়নি। ফলে, বাঁধের উপযুক্ত দেখভাল করা সম্ভব হয় না। একটু বেশি বৃষ্টি এবং ডিভিসি জল ছাড়লেই এই দুইয়ের যোগফলে নদী উপচে নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় চাষ। জাঙ্গিপাড়ার আকনা এবং রসিদপুর অঞ্চলেও কৃষিজমিতে জল জমেছে। এই পরিস্থিতিতে যে সমস্ত চাষিদের বিমা রয়েছে, তা সমীক্ষা করে তাঁদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে কৃষি দফতর। যদিও জল পুরোপুরি না নামলে সেই কাজ সম্পূর্ণ করা কার্যত অসম্ভব বলে জানাচ্ছেন দফতরের আধিকারিকেরাই।

মুণ্ডেশ্বরীর জল ঢুকেছে খানাকুল-২ ব্লকের শাবলসিংহপুর, মাড়োখানা এবং পোল-১ ও পোল-২ পঞ্চায়েত এলাকায়। কৃষি দফতরের দাবি, বহু ক্ষেত্রেই বার বার বলা সত্ত্বেও নদী তীরবর্তী এলাকাতেই চাষিরা বীজতলা তৈরি করেন এবং চাষ করেন। কোনও বার সেই চাষ বেঁচে যায়। নদী উপচে গেলে কোনও বার চাষ বাঁচে না। ফলে, এ ব্যাপারে চাষিদের সচেতনতাও সমান দায়ী। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিও এবং গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী ব্লক আধিকারিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যদিও এখনই সে ভাবে বিপদের সম্ভাবনা নেই।

risk of crop losses flooded three blocks chuchura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy