Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
জেলা জজের আর্জিতেও বরফ গলল না

এজলাস বয়কট চলছেই

জেলা জজের আর্জিতেও বরফ গলল না। শ্রীরামপুরের দেওয়ানি বিচারক (সিনিয়র ডিভিশন) মন্দাক্রান্তা সাহার বদলির দাবিতে অনড় আইনজীবীরা বৃহস্পতিবারেও তাঁর এজলাসে কাজ করলেন না। তার উপরে বুধবার আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসা এক পুলিশ অফিসার আইনজীবীদের বিরুদ্ধে থানায় হেনস্থার অভিযোগ করা নিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে সরব হয়েছেন আইনজীবীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৩
Share: Save:

জেলা জজের আর্জিতেও বরফ গলল না। শ্রীরামপুরের দেওয়ানি বিচারক (সিনিয়র ডিভিশন) মন্দাক্রান্তা সাহার বদলির দাবিতে অনড় আইনজীবীরা বৃহস্পতিবারেও তাঁর এজলাসে কাজ করলেন না। তার উপরে বুধবার আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসা এক পুলিশ অফিসার আইনজীবীদের বিরুদ্ধে থানায় হেনস্থার অভিযোগ করা নিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে সরব হয়েছেন আইনজীবীরা। ওই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (এসিজেএম) কাছে পাল্টা মামলাও করেন তাঁরা।

মন্দাক্রান্তাদেবীর বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে গত ৭ জানুয়ারি থেকে তাঁর এজলাস বয়কট করে চলেছেন আইনজীবীরা। বঞ্চিত হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার হুগলির জেলা জজ জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় ওই আদালতে আসেন। প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিচারক, পরে বার লাইব্রেরিতে গিয়ে আন্দোলনকারী আইনজীবীদের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন।

সূত্রের খবর, আইনজীবীরা জেলা জজের কাছে অভিযোগে জানান, কয়েক মাস আগে এই আদালতে যোগ দেওয়া ইস্তক (প্রথমে এখানকার এসিজেএম ছিলেন, পরে বর্তমান পদে যোগ দেন) মন্দাক্রান্তাদেবী বেশির ভাগ আইনজীবীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে চলেছেন। অনেক আইনজীবীকে তিনি ইচ্ছে করে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখেন। বয়কট তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়ে জেলা জজ আইনজীবীদের বলেন, গোটা বিষয়টি তিনি কলকাতা হাইকোর্টকে জানাবেন। আইনজীবীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে দুর্ব্যবহার সহ্য করেই তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন। শুধু শ্রীরামপুরই নয়, জেলার বাইরে ওই বিচারককে বদলির দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে আদালতের সরকারি আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেলা জজকে আমরা দাবির বিষয়টি জানিয়েছি। তাঁর আর্জি নিয়ে আলোচ‌না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা আশাবাদী, জেলা জজ কিছু একটা করবেন। তবে, যত দিন না আমাদের দাবি পূরণ হচ্ছে, ততদিন বয়কট চলবে।”

মন্দাক্রান্তাদেবী অবশ্য প্রতিদিনই আদালতে এসেছেন। কিন্তু আইনজীবীরা কাজ না করায় তাঁর এজলাসে মামলার শুনানি হচ্ছে না। আইনজীবীদের একটি সূত্রের বক্তব্য, গত ৭ জানুয়ারি মন্দাক্রান্তাদেবীর এজলাসে একটি মামলার শুনানির সময় বার লাইব্রেরির সম্পাদক রামচন্দ্র ঘোষ তাঁর একটি মামলা শুনানির দাবি জানান। বিচারক তাঁকে জানান, ওই মামলার শুনানি কিছুক্ষণ পরে হবে। কিন্তু রামচন্দ্রবাবু বিষয়টি মানতে পারেননি। বিচারক ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁকে বসিয়ে রাখছেন বলে এজলাস ছেড়ে তিনি ও অন্য আইনজীবীরা বেরিয়ে যান। শুরু হয় বয়কট। বুধবার বয়কটের কথা জেনেও কিছু বিচারপ্রার্থী ওই এজলাসে আসেন। আদালতের নির্দেশ পেয়ে পাণ্ডুয়া থানার এক সাব-ইনস্পেক্টরও আসেন সাক্ষ্য দিতে। বিষয়টি কানে যেতেই তাঁদের অন্ধকারে রেখে সাক্ষ্যগ্রহণ নেওয়া হচ্ছে, দাবি তুলে এজলাসের সামনে বিক্ষোভ দেখান কিছু আইনজীবী। তুমুল হট্টগোলে সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। এজলাস থেকে নেমে পড়েন বিচারক। এজলাস ছেড়ে বেরনোর পরে তাঁকে কিছু আইনজীবী হেনস্থা করেন বলে শ্রীরামপুর থানায় লিখিত অভিযোগে জানান ওই সাব-ইন্সপেক্টর।

আইনজীবীরা পাল্টা ওই সাব-ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে বুধবার পিপি অফিসে গিয়ে দুই আইনজীবীকে হেনস্থা করা, কটূক্তি করা এবং সেখানকার কাচ ভেঙে দেওয়ার মামলা করেছেন এসিজেএমের কাছে। জয়দীপবাবু বলেন, “আমাদের কয়েক জনের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তা প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে পুলিশের মামলার সরকারি কাজ আমরা করব না।” তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আদালত চত্বরে যদি আইনজীবীরা ওই পুলিশকর্মীর গায়ে হাত তুলে থাকে, তা হলে তিনি এসিজেএমকে না জানিয়ে থানায় গেলেন কেন? তাঁর পোশাক ছিঁড়ল না, কিন্তু ভিতরের গেঞ্জি ছিঁড়ল কী করে?” ওই মামলা প্রত্যাহার-সহ আদালতের গোটা পরিস্থিতি নিয়ে এসিজেএমের দ্বারস্থ হয়েছেন আইনজীবীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE