Advertisement
১৯ মে ২০২৪

কৃষি সমবায়ের অডিট নিয়ে জটে ঋণ থেকে বঞ্চিত চাষি

ঋণ না মেলায় কেউ চাষের জমির এলাকা কমিয়ে দিচ্ছেন। কেউ বা মহাজনের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কেউ আবার কোনও উপায় না দেখে প্রশাসনের দরবারে গিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ করছেন। প্রায় দু’বছর ধরে আরামবাগের বাছানরী কৃষি উন্নয়ন সমিতি থেকে চাষের জন্য ঋণ না মেলায় বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট চাষিরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৮
Share: Save:

ঋণ না মেলায় কেউ চাষের জমির এলাকা কমিয়ে দিচ্ছেন।

কেউ বা মহাজনের দ্বারস্থ হচ্ছেন।

কেউ আবার কোনও উপায় না দেখে প্রশাসনের দরবারে গিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

প্রায় দু’বছর ধরে আরামবাগের বাছানরী কৃষি উন্নয়ন সমিতি থেকে চাষের জন্য ঋণ না মেলায় বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট চাষিরা। ওই সমিতির সদস্যসংখ্যা ৮০০-রও বেশি। কিন্তু ওই সমিতিতে গত পাঁচ বছর কোনও অডিট হয়নি। ফলে, অডিট রিপোর্ট জমা পড়েনি জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে। তাই নিয়মমতো ব্যাঙ্কও ঋণ দিচ্ছে না। সমবায়টি এখন কার্যত তালাবন্ধই থাকে। অডিট সমস্যা মিটিয়ে সমবায়টিকে সচল করার দাবিতে চাষিদের ক্ষোভ-বিক্ষোভও বাড়ছে।

জেলা সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’বছরের বেশি অডিট বাকি থাকলে সেই সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া বিধিবদ্ধ নিয়ম। বাছানরী সমবায়ের ২০০৯-১০ অর্থবর্ষ থেকে অডিট বাকি। চাষিরা ঋণ শোধ করলেও অতীতে একবার ঋণ বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু আর ঋণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

জেলা সমবায় সমূহের সহকারী নিবন্ধক শাশ্বত বসুচৌধুরী বলেন, “অডিট না হওয়ার জন্য সমিতির সাধারণ সদস্যেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, এটা কাম্য নয়। বাছানরীর বিষয়টি সমবায় দফতরের অডিট বিভাগের নজরে আনা হয়েছে।” সংশ্লিষ্ট অডিট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সমীর বটব্যাল জানান, ওই সমবায়ে কিছু সমস্যা ছিল। তা কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হবে। ওই সমবায়ে অডিটের দায়িত্বে থাকা কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “কাজের মাঝপথে কর্মীদের বদলি হয়ে যাওয়া-সহ কিছু কারণে অডিটে দেরি হচ্ছে।”

কিন্তু ২০০৯-১০ অর্থবর্ষ থেকেই বাছানরী কৃষি সমবায়ে অডিট বন্ধ কেন?

সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি সহায়ক মূল্যে আলু কেনাকে কেন্দ্র করে ২০১০ সালের জুলাইতে আরামবাগের কয়েকটি কৃষি সমবায় সমিতির সঙ্গে বাছানরী সমবায়টিরও তৎকালীন পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। কয়েক দফা তদন্তের পর ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসনের তরফে আরামবাগ থানায় ১৩ জনের নামে এফআইআর দায়ের হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাছানরী সমবায়ের তৎকালীন সভাপতি, সম্পাদক এবং ম্যানেজারও। সেই মামলা এখনও চলছে। তখন থেকেই বাছানরীতে অডিট বন্ধ। তবে, ব্লক সমবায় দফতরের তদ্বিরের জেরে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে আলু চাষের জন্য ঋণ পেয়েছিলেন চাষিরা। কিন্তু তার পরে তা আর মিলছে না।

ইতিমধ্যে সমবায়ের পরিচালন সমিতিরও পরিবর্তন হয়েছে। বামেদের হাত থেকে বোর্ড গিয়েছে তৃণমূলের হাতে। এত দিন অডিট না হওয়া নিয়ে সমিতির সম্পাদক সুকুমার পাল অডিট বিভাগের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “নানা বাহানায় অডিট সম্পূর্ণ করা হচ্ছে না। আমরা প্রথম থেকেই বলছি, ত্রুটি-বিচ্যুতি-দুর্নীতি থাকলে নিদ্বির্ধায় উল্লেখ করে অডিট শেষ করা হোক।” একই সুরে সমবায় কর্তৃপক্ষও দাবি করেছেন, তিন বছর ধরেই অডিট সম্পূর্ণ করা নিয়ে টালবাহানা চলছে। ব্লক সমবায় দফতরের সার্কেল ইনস্পেক্টর সুজন দে বলেন, “অডিট বাকি থাকার জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ দেয়নি। অতীতে হস্তক্ষেপ করা গেলেও আর তা করা যাচ্ছে না। অডিট সংক্রান্ত সমস্যার জন্য চাষিরা ঋণ না পাওয়ায় এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।”

চাষিদের মধ্যে অমর দে বলেন, “কেন যে এত জটিলতা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। ঋণ না-মেলায় চাষের জমি কমিয়ে দিতে হচ্ছে।” গোপালচন্দ্র পাল নামে আর এক চাষি বলেন, “মহাজনের কাছে চড়া সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া তো চাষের আর কোনও উপায় নেই। অবিলম্বে সমবায়টি চালু হওয়া দরকার।” একই অভিমত প্রকাশ করেছেন স্বপন ঘোষ, সুধাংশু মণ্ডলের মতো অনেক চাষিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arambag
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE