দোকানে ঢুকে চাঁপদানির ব্যবসায়ী শ্যামবাবু শর্মাকে খুনের ২৪ ঘণ্টা পরেও, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। খুনের কারণ নিয়েও তদন্তকারীরা কিছুটা ধন্দে। কেননা, শ্যামবাবুর দোকান থেকে অভিযুক্ত কিছু নিয়ে যায়নি। কোনও রকম হুমকি বা পুরনো শত্রুতার কথাও তদন্তকারীরা জানতে পারেননি। খুনের কারণ নিয়ে অন্ধকারে নিহতের পরিবারের লোক।
ইদানীং বৈদ্যবাটিতে বসবাস শুরু করলেও শ্যামবাবু আদতে ভদ্রেশ্বরের চাঁপদানির নুড়ি লেনের বাসিন্দা। পৈতৃক বাড়ি লাগোয়া তাঁর আলমারির কারখানা ও দোকান রয়েছে। সোমরাত রাতে দোকান বন্ধ করার আগে তিনি হিসাব দেখছিলেন। রাত পৌনে দশটা নাগাদ সেখানে হানা দেয় এক দুষ্কৃতী। দোকান্যে ঢুকে খুব কাছ থেকে শ্যামবাবুকে লক্ষ করে পরপর দু’টি গুলি চালায় সে। একটি গুলি শ্যামবাবুর মাথায় লাগে, অন্যটি পেটের ডান দিকে। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি লুটিয়ে পড়েন। গুলির আওয়াজে আশপাশের লোকজন এবং শ্যামবাবুর পরিবারের সদস্যেরা চলে আসেন। খবর পেয়ে চন্দননগরের এসডিপিও সৈকত ঘোষ ও ভদ্রেশ্বর থানার ওসি অনুদ্যুতি মজুমদার বাহিনী নিয়ে পৌঁছন। শ্যামবাবুকে চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই তিনি মারা যান।
শ্যামবাবুর দোকানের এক কর্মচারী ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁর বয়ান অনুয়ায়ী পুলিশ পিন্টু সাউ নামে নিহতের এক প্রতিবেশীকে খুঁজছে। পিন্টুর বিরুদ্ধে খুনের লিখিত অভিযোগও দায়ের হয়েছে। পুলিশকে ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, পিন্টু সাউকে হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেছেন তিনি। ঘটনার পরই পিন্টু এলাকা ছেড়ে পালায়। পুলিশ রাতভর তল্লাশি চালিয়েও তার নাগাল পায়নি। কিন্তু কেন ওই যুবক শ্যামবাবুকে মারতে যাবে? তদন্তে নেমে পুলিশ ওই মৃত্যুর সম্ভব্য কারণ নিয়ে কিছুটা ধন্দে। এর নেপথ্যে মহিলা-যোগ থাকার সম্ভাবনা পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “পিন্টুর সঙ্গে তাঁদেরই সম্পর্কিত এক বিধবা মহিলার সম্পর্ক ছিল। তা নিয়ে শ্যামবাবু রাগারাগি করতেন। প্রতিবেশী এবং অগ্রজ হিসেবে পিন্টুকে ওই সম্পর্ক না রাখার জন্য নিষেধও করতেন। তা থেকেই সম্ভবত রাগ হয়েছিল পিন্টুর।” পাশাপাশি আরও একটি সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন ওই পুলিশ কর্তা। তিনি বলেন, সম্প্রতি পিন্টু একটি ডাকাতির পরিকল্পনা করার জন্য গ্রেফতার হয়। পরে জামিন পায়। তার পরেই সম্ভবত পিন্টুর সন্দেহ হয় শ্যামবাবু তাঁকে গ্রেফতারের জন্য কলকাঠি নেড়েছিল। আর সেই কারণে সে খুন করতে থাকতে পারে।”
ইদানীং বৈদ্যবাটিতে বসবাস শুরু করলেও ব্যবসার প্রয়োজনে চাঁপদানিতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল শ্যামবাবুর। তিনি এক আত্মীয়ের চিকিত্সার প্রয়োজনে মুম্বই থেকে সোমবারই ফেরেন। নিহতের দাদা দুর্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘ঘটনা আমরা কিছু বুঝতেই পারিনি। কর্মচারীর চিত্কারে বেরিয়ে এসে দেখি দোকানের মধ্যে ভাই পড়ে রয়েছে। কী কারণে ভাইকে পিন্টু মারল কিছুই আমরা বুঝতে পারছি না।’’ শ্যামবাবুর স্ত্রী ঊষাদের্বী বলেন, ‘‘পিন্টু মাঝেমধ্যে ওঁকে ফোনে বিরক্ত করত। কিন্তু স্বামী কখনও পিন্টুর সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করতেন না। পিন্টু নানা অসামাজিক কার্যকলাপ করত। কিন্তু যে প্রাণে মেরে ফেলবে বুঝতেও পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy