বাগনানের ঘোড়াঘাটায় নিবিড় মৎস্যচাষ। ছবি: সুব্রত জানা।
কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। খাদ্যরসিক বাঙালির পাতে ন্যায্য মূল্যে মাছের জোগান বাড়ানোর জন্য মৎস্যচাষে নতুন কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করল হাওড়া জেলা মৎস্য দফতর।
ইতিমধ্যে উলুবেড়িয়া, বাগনান, আমতা ও পাঁচলার ৭টি পুকুরে নিবিড় পদ্ধতিতে মৎস্যচাষ সফল হয়েছে বলে দাবি জেলা মৎস্য আধিকারিকদের। আগামী দিনে তাদের লক্ষ্য জেলার সব ব্লকের পুকুরে মৎস্য চাষ করে বছরে বিঘা পিছু এক মেট্রিক টনেরও বেশি মাছ উৎপাদন করা। এ বিষয়ে মৎস্যজীবিদের উৎসাহিত করতে তাঁদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছে মৎস্য দফতর। শিল্পায়ন ও নগরায়নের প্রভাবে জেলায় পুকুর, ডোবার সংখ্যা ক্রমশ কমছে। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে নোংরা, দূষিত জল পুকুরে পড়ায় সেই সব পুকুরও মাছ চাষের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় গ্রামীণ এলাকার পুকুরে মাছের উৎপাদন বাড়াতে নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষের উপর জোর দিচ্ছে মৎস্য দফতর।
মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিবিড় মৎস্যচাষ বলতে একই পুকুরে ২ থেকে ৩ বার মাছ ছাড়া এবং ২-৩ বার মাছ ধরা বোঝায়। আগে মাছচাষিরা পুকুরে বা কোনও জলাশয়ে বছরে একবারই মাছ ছাড়তেন এবং বছরভর ধরে তা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু নয়া পদ্ধতিতে মাছের উৎপাদন বাড়বে। ফলে বাজারের চাহিদাও মেটানো যাবে। তা ছাড়া এ ফলে ভিনরাজ্য থেকে মাছ আমদানির পরিমাণও কমবে বলে মৎস্য দফতরের আধিকারিকদের দাবি। হাওড়ার মুখ্য মৎস্য আধিকারিক অমলেন্দু বর্মন বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে গ্রামীণ এলাকার ৪টি পুকুরে নিবিড় মৎস্যচাষ শুরু করেছি এবং তার সঙ্গে প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা করেছি। চলতি বছরে আরও তিনটি পুকুরে এটা শুরু করা হবে। আমাদের লক্ষ্য জেলার প্রত্যেকটি ব্লকে নয়া পদ্ধতির মাছ চাষ ছড়িয়ে দেওয়া।”
জেলা মৎস্য বিভাগের ট্রেনিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, “নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে প্রোটিন জাতীয় খাবার একটু বেশি দিতে হয়। জলে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য অ্যারেসন পদ্ধতির (উঁচু থেকে জল ফেলে বুদবুদ তৈরি করা) ব্যবস্থা রাখতে হয়।”
নিবিড় পদ্ধতিতে বিশেষত ‘কার্প’ জাতীয় মাছ চাষ করা হয়। অর্থাৎ রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকাপ, আমেরিকান রুই-সহ ছয় প্রকার মাছ চাষ করা হয়। তা ছাড়া বাটা মাছও ছাড়া হয় তিনটি পর্যায়ে। একবিঘা পুকুরে প্রায় একহাজার থেকে তিন হাজার পর্যন্ত চারাপোনা ছাড়া হয় বলে জানা গিয়েছে। গত তিন বছরে উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের দু’টি পুকুরে নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয়েছে। এতে প্রতি বছর খরচ হয়েছে ৭৭ হাজার টাকা। মাছ বিক্রি বাবাদ আয় হয়েছে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা।
নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেন এমনই এক মৎস্যজীবী উলুবেড়িয়ার অভিজিত পালুই বলেন, “আগে যেখানে এক বিঘা জমিতে বছরে ৫ থেকে ৬ কুইন্টাল মাছ উৎপাদন করতে পারতাম, সেখানে নতুন পদ্ধতিতে ১১ কুইন্টালের বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে।” মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, কমপক্ষে ৫০ জন মৎস্যচাষি নতুন পদ্ধতিতে মাছচাষে উদ্যোগী হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy