Advertisement
E-Paper

ঝাঁ চকচকে হাসপাতাল ভবন নয়, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি চান শহরবাসী

হাসপাতালের ঝাঁ-চকচকে নতুন ভবন। রোগী কল্যাণ সমিতির সৌজন্যে রোগীদের জন্য ২৪ ঘন্টা জেনারেটরের ব্যবস্থা। নিয়ম করে রোগীরা আসেন। ভিড় থাকে প্রসূতি-সহ অন্য রোগীদের। আবার তাঁরা ‘রেফার’ হয়ে ফিরেও যান দূরে চুঁচুড়া জেলা সদর হাসপাতালে। কিন্তু এমন ছবির পরেও মগরা ব্লক হাসপাতালে আপনি স্বাগত।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৪০
চুঁচুড়া-মগরা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সু-চিকিত্‌সা পরিষেবার আশায় বাসিন্দারা। ছবি: তাপস ঘোষ।

চুঁচুড়া-মগরা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সু-চিকিত্‌সা পরিষেবার আশায় বাসিন্দারা। ছবি: তাপস ঘোষ।

হাসপাতালের ঝাঁ-চকচকে নতুন ভবন। রোগী কল্যাণ সমিতির সৌজন্যে রোগীদের জন্য ২৪ ঘন্টা জেনারেটরের ব্যবস্থা। নিয়ম করে রোগীরা আসেন। ভিড় থাকে প্রসূতি-সহ অন্য রোগীদের। আবার তাঁরা ‘রেফার’ হয়ে ফিরেও যান দূরে চুঁচুড়া জেলা সদর হাসপাতালে। কিন্তু এমন ছবির পরেও মগরা ব্লক হাসপাতালে আপনি স্বাগত।

একদিকে বাঁশবেড়িয়া অন্য দিকে চুঁচুড়া পুরসভা। ২৫ বর্গ কিলোমিটারের মগরা শহর আড়ে বহরে এখন অনেকটাই বেড়েছে। যার মধ্যে আড়াই বর্গ কিলোমিটার এলাকা ঢুকে রয়েছে বাঁশবেড়িয়া পুর এলাকায়। গঙ্গা, সরস্বতী আর কুন্তী তিন তিনটে নদী ঘিরে রেখেছে শহরের জীবনযাত্রাকে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ডিগ্রি কলেজ, সরকারি কী নেই শহরে! যা নেই তা হল, পরিকাঠামো।

মগরা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীদের সুষ্ঠ চিকিত্‌সায় ন্যূনতম স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জরুরি। হাসপাতালের দরজাও সারাদিন খোলা। তবে দেখা মিলবে না চিকিত্‌সকের। কারণ তাঁর পদ শূন্য। নেই শল্য চিকিত্‌সকও। নেই চিকিত্‌সার প্রয়োজনীয় ইসিজি, এক্স-রে’র ব্যবস্থা। সুলভ ওষুধের দোকান।

এলাকার মানুষের সঙ্গত প্রশ্ন, ‘‘তা হলে ‘নেই’ হাসপাতাল শুধু শুধু আছে কেন? কেবল রোগীদের অন্যত্র রেফার করতে?” অনেকে হাসপাতালের রোগ খঁুজতে গিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত একশ্রেণির কর্মীদের ‘মানসিকতা’কেও দায়ী করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, “সেবার মানসিকতাই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে এসে যেন রোগীর বাড়ির লোকজন খুব অন্যায় করেছেন, এমনই ব্যবহার স্বাস্থ্য কর্মীদের। আর্থিক ভাবে সচ্ছ্বল হলে হয় তাঁদের নার্সিংহোমে ঠেলা হচ্ছে। আর একেবারে গরিবগুরবো হলে ঠাঁই হচ্ছে চুঁচুড়া হাসপাতাল।” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সঙ্গে সুষ্ঠ পরিবেশও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শুধু অভিযোগের তালিকা চাপিয়ে দিলে তর্ক বাড়ে। মানসিকাতা বদল জরুরি রোগীর বাড়ির লোকজনেরও। চিকিত্‌সা এমন একটা পরিষেবা যাতে শেষ পর্যন্ত মানুষের প্রাণ রক্ষা নাও করা যেতে পারে। তাই বলে অঘটন ঘটে গেলে পরিষেবায় যুক্ত মানুষজনের প্রাণ নিতে হবে সেই মানসিকতার পরিবর্তনটাও জরুরি।”

বস্তুত, মগরা ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের রোগ নির্ণয় করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকা স্বাস্থ্য দফতরকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন অনেকে। কিন্তু কেন? এই দায় চাপানোর নেপথ্যে সারবত্তাই বা কী?

চিকিত্‌সা পরিষেবার পুরোটাই নির্ভর করে একটা ডাক্তার থেকে নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি কার্যক্ষম ‘টিম’-এর উপর। এমনটাই মত চিকিত্‌সা পরিষেবা নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের। সরকারি হাসপাতালে প্রায়শই পরিষেবা নিয়ে নানা সমস্যা হয়। ক্ষিপ্ত মানুষজন চড়াও হন চিকিত্‌সক, স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর। অনেক সময় রোগীর প্রতি অবহেলার নানা অভিযোগও ওঠে। একাধিক শিশুমৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। আর এমন অবস্থার জন্যই সাধ্য না থাকলেও ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ঘটিবাটি বেচেও মানুষজন বেসরকারি হাসপাতালের শরণাপন্ন হন।

তবে শহরে স্বাস্থ্য পরিষেবার এমন বেহাল চিত্র জেনেও চিকিত্‌সা পরিষেবার সঙ্গে জড়িতদের চেয়ে সামগ্রিক পরিকাঠামোকেই দায়ী করেছেন মগরাবাসী। তাঁদের বক্তব্য, জনসংখ্যা বেড়েছে। সেইসঙ্গে চাহিদা চিকিত্‌সা ক্ষেত্রে নানা আধুনিক প্রযুক্তির। কিন্তু এখানে সে সব কোথায়? তাঁদের দাবি, ৩০ শয্যার ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে অবিলম্বে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত করতে হবে। যে দাবির সঙ্গে এক মত শাসকদলের স্থানীয় (মগরা-১) পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রঘুনাথ ভৌমিকও। তিনি বলেন, “শয্যার সংখ্যা বাড়লে সরকারি খাতায় হাসপাতালের মান বাড়বে। বাড়বে চিকিত্‌সকের সংখ্যা। তা হলে আর এখনকার মতো হাসপাতালে আসা রোগীদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরে দৌড়তে হবে না। এক ছাদের তলায় তাঁরা সেই পরিষেবা পাবেন।”

মগরাবাসীর এই দাবি পূরণে স্বাস্থ্য দফতর আদৌ উদ্যোগী হবে কি না তা সময় বলবে।

(চলবে)

gautam bandopadhay mogra health service amar shohor southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy