Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দু’বছর ধরে শিশুশ্রমিক স্কুলে বেতন অমিল

যে সব শিশুশ্রমিক কাজের চাপে পড়াশোনা করেনি বা স্কুলছুট, তাদের জন্য গোটা হাওড়া জেলায় ৩৪টি বিশেষ স্কুল রয়েছে। কিন্তু প্রায় দু’বছর ধরে বেতন না-মেলায় সেই সব স্কুলে পড়ানোয় উত্‌সাহ হারাচ্ছেন শিক্ষকেরা। অনেকেই স্কুলে অনিয়মিত হয়ে পড়ছেন। ফলে, ব্যাহত হচ্ছে পঠনপাঠন। বেতন বা স্কুল চালানোর প্রয়োজনীয় খরচ না মেলায় ক্ষুব্ধ ওই সব স্কুলের কর্মীরাও।

নুরুল আবসার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০১:২৫
Share: Save:

যে সব শিশুশ্রমিক কাজের চাপে পড়াশোনা করেনি বা স্কুলছুট, তাদের জন্য গোটা হাওড়া জেলায় ৩৪টি বিশেষ স্কুল রয়েছে। কিন্তু প্রায় দু’বছর ধরে বেতন না-মেলায় সেই সব স্কুলে পড়ানোয় উত্‌সাহ হারাচ্ছেন শিক্ষকেরা। অনেকেই স্কুলে অনিয়মিত হয়ে পড়ছেন। ফলে, ব্যাহত হচ্ছে পঠনপাঠন। বেতন বা স্কুল চালানোর প্রয়োজনীয় খরচ না মেলায় ক্ষুব্ধ ওই সব স্কুলের কর্মীরাও।

স্কুলগুলি চালানো হয় কেন্দ্রীয় শ্রম দফতর এবং সর্বশিক্ষা মিশনের যৌথ উদ্যোগে ‘জাতীয় শিশু শ্রম উন্নয়ন প্রকল্প’-এর অধীনে। স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে স্কুলগুলি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষক এবং কর্মীদের বেতন ও স্কুল চালানোর খরচ আসে ‘জাতীয় শিশু শ্রম উন্নয়ন প্রকল্প’ থেকে। হাওড়া জেলায় জেলাশাসকের নেতৃত্বাধীন ‘জেলা শিশুশ্রমিক পুনর্বাসন তথা কল্যাণ কমিটি’-র তত্ত্বাবধানে স্কুলগুলি চলে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির কর্ণধারদের ক্ষোভ, তাঁরা কমিটির কাছে টাকার জন্য বার বার আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।

ওই কমিটির পক্ষে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) আরশাদ হোসেন ওয়ারসি সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “দিল্লির কাছে আমরাও স্কুলগুলি চালানোর জন্য টাকা চেয়ে বহু আবেদন করেছি। কিন্তু কেন টাকা আসছে না বলতে পারব না।” দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গে হাওড়াতেও ২০০৮ সাল থেকে স্কুলগুলি খোলা হয়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাই স্কুলবাড়ি নির্বাচন করে এবং শিক্ষকদের নিয়োগ করে। স্কুলগুলিতে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সের শিশুশ্রমিকেরাই পড়াশোনা করে। পঠনপাঠন চলে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। স্কুল খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত। স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলও দেওয়া হয়। যে সব শিশুশ্রমিক পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কাজে নেমে পড়েছে তাদের খুঁজে এনে স্কুলগুলিতে ভর্তি করিয়ে দেওয়ারও দায়িত্ব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির। এক-একটি স্কুলে গড়ে ৫০ জন করে পড়ুয়া থাকে। তাদের মধ্যে অনেকেই পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে সাধারণ স্কুলে ভর্তি হয়।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি জানিয়েছে, এক-একটি স্কুলে গড়ে তিন জন করে শিক্ষক থাকেন। তাঁদের মধ্যে এক জন বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেন। এ ছাড়াও আছেন এক জন করণিক এবং এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। কিন্তু এত কিছুর পরেও শিক্ষক ও কর্মীদের বেতন দিতে না-পারার জন্য স্কুলগুলি চালাতে গিয়ে তাদের বেশ সমস্যা হচ্ছে। মিড-ডে মিলের চালও গুদাম থেকে নিজেদের খরচে স্কুলে বহন করে আনতে হচ্ছে, যে খরচ কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়ার কথা বলে তাদের দাবি। শ্যামপুরের কুলটিকরি গ্রামে একটি শিশুশ্রমিকদের স্কুল চলে। পড়ুয়ার সংখ্যা জনা পঞ্চাশ। পড়াশোনার সঙ্গে বাড়িতে তারা জরির কাজও করে। কিন্তু মাসের পর মাস শিক্ষকদের বেতন না হওয়ায় পঠন-পাঠন চলছে ঢিমেতালে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, শিক্ষকেরা নিয়মিত স্কুলে আসেন না। তা সত্ত্বেও স্কুলে পড়ুয়াদের হাজিরা ভালই বলে তাঁদের দাবি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির কর্ণধার দীপ প্রামাণিক বলেন, “দিনের পর দিন বেতন না পেয়ে শিক্ষকেরা কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়েন, আমাদের কিছু করার নেই। তবে, শিক্ষকেরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই পড়ান। আমরাও চাঁদা তুলে তাঁদের কিছুটা হাত-খরচ দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এ ভাবে আর কতদিন চালানো যায়?”

আর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা উলুবেড়িয়া এবং বাগনানে চারটি স্কুল চালায়। ওই সংস্থার কর্ণধার মন্টু শীল বলেন, “আমাদের স্কুল থেকে পড়াশোনা করে সাধারণ স্কুলে ভর্তি হয়ে বহু ছাত্রছাত্রী ভাল ফল করেছে। কিন্তু শিক্ষকেরা বেতন না পাওয়ায় ক্রমশ পড়ানোয় উত্‌সাহ হারাচ্ছেন। ভবিষ্যতে যদি এক সঙ্গে বকেয়া মেলে, সেই আশায় তাঁরা এখনও স্কুলে আসছেন।” আমতার সরপাই গ্রামের একটি শিশুশ্রমিক স্কুলের এক শিক্ষিকা বলেন, “আমাদের স্কুলটি যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালায় তাদের কাছেও টাকা নেই। ফলে, মিড ডে মিলের চাল আমাকেই গাঁটের কড়ি খরচ করে স্কুল পর্যন্ত বহন করে আনতে হচ্ছে। একেই বেতন পাচ্ছি না, তার উপরে এ যেন মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE