Advertisement
০২ মে ২০২৪

নিরাপত্তা চেয়ে এসপি অফিসে মগরার নির্যাতিতা

এক সপ্তাহ আগে মগরার এক মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু তার পরেও ধৃতদের শাগরেদরা তাঁকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন নির্যাতিতা। থানার উপরে ‘আস্থা’ রাখতে না পেরে নিরাপত্তার দাবিতে মঙ্গলবার তিনি ‘নারী নির্যাতন বিরোধী নাগরিক কমিটি’র নেতৃত্বে পুলিশ সুপারের (এসপি) অফিসে স্মারকলিপি দিলেন। তার আগে বিক্ষোভ এবং পরে মিছিলও হয়। তাতে সামিল হয়েছিলেন ওই মহিলার কিছু পড়শি এবং এসইউসি-র কিছু নেত্রী ও কর্মীরা।

জেলা পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ মহিলাদের। ছবি: তাপস ঘোষ।

জেলা পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ মহিলাদের। ছবি: তাপস ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৩
Share: Save:

এক সপ্তাহ আগে মগরার এক মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু তার পরেও ধৃতদের শাগরেদরা তাঁকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন নির্যাতিতা। থানার উপরে ‘আস্থা’ রাখতে না পেরে নিরাপত্তার দাবিতে মঙ্গলবার তিনি ‘নারী নির্যাতন বিরোধী নাগরিক কমিটি’র নেতৃত্বে পুলিশ সুপারের (এসপি) অফিসে স্মারকলিপি দিলেন। তার আগে বিক্ষোভ এবং পরে মিছিলও হয়। তাতে সামিল হয়েছিলেন ওই মহিলার কিছু পড়শি এবং এসইউসি-র কিছু নেত্রী ও কর্মীরা।

মগরার নমাজগড়ের বাসিন্দা, বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলা চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে আয়ার কাজ করেন। গত ২৩ নভেম্বর তাঁর ‘নাইট ডিউটি’ ছিল। রাত ৯টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাস ধরতে জি টি রোডের দিকে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, গ্রামেরই চার যুবক নির্জন রাস্তায় মুখে রুমাল চাপা দিয়ে তাঁকে টেনে একটি দিঘির ধারে নিয়ে যায়। গণধর্ষণের পরে গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা এবং ব্লেড দিয়ে হাত চিরে অত্যাচারও চালায়। ঘণ্টা দু’য়েক পরে কোনও মতে হাসপাতালে পৌঁছে সহকর্মীদের কাছে ঘটনার কথা বলেন। তাঁর অভিযোগ পেয়ে রাতেই ভৈরব মণ্ডল, রাখা‌ল দাস, সন্তোষ ডাকুয়া এবং খোকন দেবনাথ নামে অভিযুক্ত চার জনকে গ্রেফতার করে মগরা থানার পুলিশ। নির্দিষ্ট ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও রুজু হয়।

তার পরেও কারা তাঁকে শাসাচ্ছে, সে ব্যাপারে মঙ্গলবার বিক্ষোভ-মিছিলের পরে জানতে চাইলে নির্যাতিতা কারও নাম করেননি। শুধু জানান, ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রাস্তা থেকেও কানে আসছে। তবে, এ নিয়ে থানাতেও কোনও অভিযোগ জানাননি। তিনি বলেন, “ধৃতদের শাগরেদরা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। খুনের হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে অন্য জায়গায় থাকছি। থানায় যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। পুলিশ ওদের গতিবিধি জানে। ইচ্ছে করেই ব্যবস্থা নেয় না।”

পুলিশ অভিযোগ মানেনি। পুলিশের দাবি, ঘটনার পর থেকে ওই গ্রামে এবং আশপাশে প্রতিদিন বেশ কয়েক বার করে টহল দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসু বলেন, “ঘটনার কথা কানে আসতেই পুলিশ তত্‌পর হয়ে হাসপাতালে গিয়ে মহিলার বক্তব্য রেকর্ড করে। নির্দিষ্ট ধারায় তদন্ত শুরু হয়। এক দিনে অভিযুক্তদের ধরা হয়। এখ‌ন কেন থানায় আসতে ওই মহিলা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন, কেনই বা বাড়ি ঢুকতে পারছেন না, সেটা উনিই বলতে পারবেন। এ নিয়ে কোনও অভিযোগ এলে নিশ্চয়ই তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ দিন পুলিশ সুপারের অফিসে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন নির্যাতিতার ছেলে এবং ভাই-ও। নির্যাতিতার অভিযোগ, এলাকার কিছু যুবক ‘অসামাজিক’ কাজের জন্য তাঁর ছেলে ও ভাইকে দলে টানতে চেয়েছিল। তিনি আপত্তি জানানোয় তাঁর উপরে নির্যাতন চালিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। একই সুরে নির্যাতিতার ছেলেও দাবি করেন, “ওই যুবকদের অনেক শত্রু। তাই সারা রাত ওদের বাড়ির সামনে পাহারা দিতে বলেছিল। না দেওয়ায় প্রতিশোধ নিল।” তবে, তিনিও কারও নাম বলেননি। নির্যাতিতার ভাইয়ের অভিযোগ, “তখনও হুমকির কথা পুলিশকে জানিয়েছিলাম। পুলিশ কিছু করেনি।”‘নারী নিগ্রহ বিরোধী নাগরিক কমিটি’র রাজ্য সম্পাদিকা কল্পনা দত্ত বা এসইউসি নেত্রী লিলি পালদের ক্ষোভ, “অভিযুক্তদের আড়াল করা হচ্ছে।” তাঁদের দাবি, “অবিলম্বে নির্যাতিতার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হোক। যারা হুমকি দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” এসইউসি নেতা সন্তোষ ভট্টাচার্যও বলেন, “এক জন মহিলা নিজের উপর অত্যাচারের কথা বলছেন। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এর থেকেই এলাকার পরিস্থিতি বোঝা যায়। এলাকায় সন্ত্রাস বন্ধ করুক প্রশাসন।”

নির্যাতিতার পড়শি একাধিক মহিলার দাবি, নির্যাতিতার পাশে দাঁড়ানোয় তাঁরাও হুমকি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। অভিযুক্তেরা শাসক দলের মদতপুষ্ট বলেও তাঁদের অভিযোগ। শাসক দলের নেতারা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। নির্যাতিতার বাড়ির কাছেই থাকেন জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের মানস মজুমদার। তিনি বলেন, “এলাকায় নিরাপত্তার অভাব রয়েছে, এটা ঠিক নয়।” এলাকার বিধায়ক, তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। এসইউসি-র পাশাপাশি সিপিএমও এই চক্রান্তে সামিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE