Advertisement
E-Paper

নজরদারি নেই, বাড়ছে নার্সিংহোমের দাপট

স্বাস্থ্য দফতরের নিদান প্রতিটি নার্সিংহোমকে প্রতি মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে আগের মাসের সব তথ্য মহকুমা স্বাস্থ্য দফতরে দাখিল করতে হবে। তাতে কত জন ভর্তি হলেন, কত জন মারা গেলেন, চিকিত্‌সক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় থাকবে।

উলুবেড়িয়া

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫০
শহরের একটি নার্সিংহোমে ভিড়।

শহরের একটি নার্সিংহোমে ভিড়।

স্বাস্থ্য দফতরের নিদান প্রতিটি নার্সিংহোমকে প্রতি মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে আগের মাসের সব তথ্য মহকুমা স্বাস্থ্য দফতরে দাখিল করতে হবে। তাতে কত জন ভর্তি হলেন, কত জন মারা গেলেন, চিকিত্‌সক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় থাকবে।

কিন্তু উলুবেড়িয়ার নার্সিংহোমগুলির এ সব তথ্য দেখবে কে? মহকুমা স্বাস্থ্য দফতরে তো লোকই নেই।

শহরের গঙ্গার খাঁড়ির পাশে সাদা রঙের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অফিস মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকের। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টাতেও সেখানে মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক ঈশ্বর চট্টোপাধ্যায় ছাড়া কারও দেখা মিলল না। মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসাবে ঈশ্বরবাবুকে দেখভাল করতে হয় উলুবেড়িয়ার ৯টি ব্লকের স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গ্রামীণ হাসপাতাল, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং শহরের সব নার্সিংহোম। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টার পরেও অফিসে তিনি একা কেন?

ঈশ্বরবাবু বললেন, “কী করব। শুধুমাত্র দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়ে অফিস চালাচ্ছি। তাঁদের মধ্যে একজন হাওড়ায় কাজে গিয়েছেন। অন্য জন ছুটি নিয়েছেন। আজ আমি আপাতত একাই অফিস চালাচ্ছি।” এতে কাজের ক্ষতি হয় না? ঈশ্বরবাবু বলেন, “একা আর কত দিক সামলাব? লোকের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, উলুবেড়িয়া মহকুমা স্বাস্থ্য দফতরে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু সে প্রক্রিয়া কবে মিটবে, এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট ভাবে কোনও তথ্য মেলেনি। আর এই ঢিলেঢালা সরকারি নজরদারির ফলে পোয়াবারো শহরের ও টি রোড জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নার্সিংহোমগুলির। কোনটা আইনি, কোনটা বেআইনি তা বোঝার উপায় নেই। নার্সিংহোম গড়তে হলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। প্রতি বছর তা পুনর্নবীকরণ করতে হয়। কিন্তু জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, উলুবেড়িয়া শহরের বেশিরভাগ নার্সিংহোমই তাদের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করে না। কোন কোন নার্সিংহোম এ ভাবে চলছে তারও কোনও তালিকা তাঁদের কাছে নেই বলে জানান জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। কেননা, সেই তথ্য মহকুমা স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকেই যাওয়ার কথা। কিন্তু তা ঠিকমতো মেলে না বলে জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদেরই একাংশ।

মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে ভাড়ার গাড়ির ভিড়।

অর্থাত্‌ নার্সিংহোমগুলি চলছে তাদের নিয়মেই। এর বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কারও ভুল অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। কোথাও অস্ত্রোপচারের টেবিলেই অ্যানাস্থেটিস্ট দিয়ে অজ্ঞান না করানোর ফলে মারা যাচ্ছেন প্রসূতি। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়েই এই সব গাফিলতির কথা জানা গিয়েছে। এক শ্রেণির নার্সিংহোম রোগীদের সঙ্গে যথেচ্ছ আচরণও করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

রোগীদের অভিযোগ, স্বাভাবিক ভাবে যেখানে প্রসব হওয়ার কথা, সেখানে ‘সিজার’ করিয়েই তবে ছাড়ে অনেক নার্সিংহোম। এ ছাড়া, কোন পরিষেবার জন্য কত খরচ হতে পারে, সে বিষয়টি আগাম রোগীদের অবহিত করা বাধ্যতামূলক বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গেলেও এক শ্রেণির নার্সিংহোম সেই নিয়ম মানে না বলে অভিযোগ। নিয়ম হল, চিকিত্‌সক ও নার্স ছাড়াও প্রতিটি রোগীর জন্য একজন করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রাখতে হবে নার্সিংহোমকে। ঘরের আয়তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শয্যার সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। সর্বক্ষণের জন্য রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) রাখতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ নার্সিংহোমে সেই সব নিয়ম মানা হয় না বলে অভিযোগ।

কর্মিহীন মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর।

শহরে নার্সিংহোম গড়ে ওঠা শুরু বছর কুড়ি আগে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মহকুমা হাসপাতালের চিকিত্‌সকদের একাংশই এই সব নার্সিংহোম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উত্‌সাহ দেন। এমনকী, হাসপাতালে চিকিত্‌সা হবে না, নার্সিংহোমেই যাওয়া উচিত এ সব বলেও এক শ্রেণির চিকিত্‌সক, নার্সিংহোম মালিক এবং দালালদের নিয়ে একটি চক্র গড়ে ওঠে। এই সব নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে চিকিত্‌সায় গাফিলতি-সহ নানা অভিযোগ উঠতে থাকলেও তাদের রমরমা বন্ধ হয়নি। উল্টে দিনের পর দিন তা বেড়ে চলেছে। অথচ বছর দশেক আগেও স্বাস্থ্য দফতর নার্সিংহোমগুলির উপরে নিয়মিত নজরদারি করত। অভিযোগের ভিত্তিতে এক সময়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর উলুবেড়িয়ার ১৯টি নার্সিংহোমের উপরে তদন্ত করে। দেখা যায় ওই সময় অধিকাংশ নার্সিংহোমই স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম না মেনেই চলছিল। ওই তদন্ত কমিটির রিপোর্টে নার্সিংহোমগুলির উপরে আরও কড়া নজরদারির সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সে সব বন্ধ। শেষবার এখানে নজরদারি হয়েছিল ২০১০ সালের গোড়ায়। উলুবেড়িয়ার নার্সিংহোম-মালিকদের সংগঠনের সভাপতি ইনামুর রহমান স্বীকার করেন, কিছু নার্সিংহোম বেআইনি ভাবে চলছে। তিনি বলেন, “আমরা বেশির ভাগ নার্সিংহোম-মালিক ঠিক করেছি কোনও মতেই বেআইনি কিছু করব না। কিছু কিছু নার্সিংহোম বেআইনি ভাবে চলে। তাদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য দফতরের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা হলে সামগ্রিক ভাবে আমাদের বদনাম দূর হবে।”

কিন্তু নজরদারি করবে কে? মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, “নার্সিংহোম শুধু স্বাস্থ্য দফতরের একার নজরদারিতে চলে না। শ্রম দফতর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, দমকল বিভাগ সবারই এটা দায়িত্ব। তবে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ থাকলে অবশ্যই আমরা খতিয়ে দেখি। সেই ধরনের অভিযোগ খুব একটা আসে না।”

(চলবে)

ছবি সুব্রত জানা।

কেমন লাগছে আমার শহর?

আপনার নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-উলুবেড়িয়া’। অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর’, হাওড়া ও হুগলি,
জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০০০১।
ফেসবুকেও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। www.facebook.com/anadabazar.abp

southbengal amar sohor uluberia nurul absar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy