বিভিন্ন নদী এবং খালে গত কয়েক মাস ধরে কীটনাশক প্রয়োগ করে অবাধে চলছে মাছ শিকার। হুগলির আরামবাগ মহকুমায় এমনই অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে মৎস্য সম্প্রসারণ দফতরে অভিযোগ জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত মৎস্য দফতর থেকে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ মৎস্যজাবী ও মাছ ব্যবসায়ীদের।
আরামবাগ মহকুমায় দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর এই তিনটি নদী ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল, বিল। অভিযোগ, এক শ্রেণির মৎস্যজীবী মাছ ধরতে এই সব নদী-খাল-বিলে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। মাস দুয়েক ধরে এমনটা চলছে। অথচ জেলা মৎস্য দফতর এ ব্যাপার উদাসীন বলে মহকুমার মৎস্যজীবীদের দাবি। তাঁদের আরও অভিযোগ, এর ফলে তাঁদের রুজিতে টান পড়েছে। একই ভাবে তাঁদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা।
তবে উদাসীনতার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলার সহ মৎস্য অধিকর্তা অভিজিৎ সাহা বলেন, ‘‘নদী বা যে কোনও জলাশয়ে কোনওরকম কীটনাশক বা বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরা বেআইনি। ইতিমধ্যে ব্লক মৎস্য সম্প্রসারণ দফতরগুলিকে এ ব্যাপারে নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে জেলা জুড়ে প্রচারও করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মহকুমার দ্বারকেশ্বর নদীর সালেপুর, রামনগর, মানিকপাট, গোঘাটের জগৎপুর, বালি, মুণ্ডেশ্বরী নদীর হরিণখোলা, মলয়পুর, বাছানরী এবং খানাকুল ১ ও ২ ব্লকের অংশে উদনা, তাঁতিশাল, কনকপুর প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, নদী-খালে কীটাশক ফেলে দিয়ে অবাধে মাছ ধরা চলছে। একই ছবি দেখা গিয়েছে দামোদর নদীর পুড়শুড়ার সাহাপুর, বৈকুন্ঠপুর, আলাটি প্রভৃতি এলাকাতেও। এই সব এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কিছু জেলে আগের রাতে এসে নদীতে, খালে কীটনাশক ছড়িয়ে যাচ্ছে। পরদিন ভোরবেলায় ভেসে ওঠা মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের আশঙ্কা এ ভাবে মাছ ধরা হলে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন প্রক্রিয়া নষ্ট হবে। ফলে মাছ কমে যাবে। তা ছাড়া হারিয়ে যেতে পারে ট্যাংরা, পাবদা, পাঁকাল, চিংড়ি।
মহকুমা মৎস্যজীবী সংগঠনের তরফে জগানন্দ দাস বলেন, “যারা এ ধরনের বেআইনি কাজ করছে তাদের ধরতে চেষ্টা চলছে। এর ফলে সাধারণ মৎস্যজীবীরা সমস্যায় পড়েছেন। মৎস্য দফতরকেও বিষয়টি জানিয়েছি।”
আরামবাগ মহকুমার মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক মহাদেব সুকুল বলেন, “ জেলা মৎস্য দফতরের নির্দেশমত প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় নদী, খাল, জলাশয়ে কীটনাঠক প্রয়োগ করে মাছ ধরা নিষেধ বলে প্রচার চালানো হচ্ছে। তবে কর্মীর অভাবে সর্বত্র নজরদারি চালানো সম্ভব হচ্ছে না।”
কিন্তু এ ভাবে মাছ ধরা কেন?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মৎস্যজীবী জানান, আগে সাধারণভাবে জাল দিয়ে মাছ ধরে মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হত।তাতে দেড় থেকে দু’কেজি মাছ ধরতেই সারাদিন কেটে যেত। এখন নদীর কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় কীটনাশক ফেলার পরে সেখানকার মাছ ভেসে উঠছে। তাতে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক মাছ তুলে নেওয়া যাচ্ছে। মৎস্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এই বেআইনি কাজে ধরা পড়লে ছ’মাস জেল বা দু’হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy