পুরসভার জলের গাড়ি ঘিরে ভিড়। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র।
বিনা নোটিসে পদ্মপুকুর জলপ্রকল্প থেকে জল সরবরাহ বন্ধ করে দিল হাওড়া পুরসভা। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নির্জলা রইল গোটা শহর। শুধু তা-ই নয়, কবে জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ মিটবে, এ দিন তা-ও নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেননি পুরকর্তারা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার উত্তর হাওড়ার সালকিয়া এলাকার ধর্মতলায় মাটির নীচে থাকা পাইপলাইনে ফাটল দেখা দেয়। ওই ফাটল সারাতে গিয়েই জলপ্রকল্প থেকে জল সরবরাহ বন্ধ করে দিতে হয়। এ ব্যাপারে পুরকর্তাদের বক্তব্য, পাইপলাইনের যে জায়গায় ফাটল হয়েছে, তার সাত ফুট উপরেই রয়েছে বড় নর্দমা। প্রকল্প থেকে জল সরবরাহ করা হলে পানীয় জলের সঙ্গে নর্দমার জল মিশে জল দূষিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে বহু মানুষ বিপদে পড়তে পারেন।
হাওড়া পুরসভার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, “জলে দূষণ হতে পারে ভেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এত বড় ঝুঁকি আমরা নিতে পারি না। তাই বাধ্য হয়েই সমস্ত হাওড়ায় জল বন্ধ করা হয়েছে।”
পাইপলাইনের একটা ফাটল মেরামত করতে গিয়ে বটানিক্যাল গার্ডেন থেকে লিলুয়া এই বিস্তৃত এলাকা দিনভর নির্জলা হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। জল নিতে টিউবওয়েলের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। অভিযোগ, এ দিন আচমকা জল সরবরাহ বন্ধ করে দিলেও পুরসভা বিকল্প উপায়ে জলের ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে জল সরবরাহের কোনও ব্যবস্থা করেনি। শুধুমাত্র এ দিন দুপুরে উত্তর হাওড়ার ধর্মতলায় যে জায়গায় পাইপ ফেটেছিল, সেখানে কয়েকটি জলের গাড়ি পাঠায় পুরসভা। এ ছাড়া শহরের অন্যত্র পুরসভার জলের গাড়ির দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর হাওড়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সালকিয়ার ধর্মতলা লেনে বেহাল নিকাশির জন্য গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাস্তায় জল জমে ছিল। এর মধ্যে দিন কয়েক আগে রাস্তার ধারে বড় নর্দমার ঠিক নীচ দিয়ে যাওয়া পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের পাইপ লাইন কোনও ভাবে ফেটে গিয়ে তা নর্দমার জলের সঙ্গে মিশে যায়। এর ফলে ওই এলাকায় পানীয় জল সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরে এলাকার কাউন্সিলর ও হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ বাণী সিংহরায়কে এ ব্যাপারে জানালেও তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি। তার ফলে এলাকার মানুষকে ওই পাঁক জল ঘেঁটে যেমন যাতায়াত করতে হচ্ছে, তেমনি পানীয় জলও মিলছে না। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখান এলাকার মানুষ।
যদিও এলাকার মানুষের এই অভিযোগ মানতে নারাজ বাণীবাবু। তিনি বলেন, “নর্দমার নীচে থাকা জলের পাইপ ফেটে সমস্যা হয়েছিল। পুরনো ওই পাইপ লাইনে ভাল্ভ না থাকায় জল আটকানো যাচ্ছিল না। তাই এলাকা ভেসে গিয়েছে। ওই পাইপ লাইনে এখন ভাল্ভ লাগানো হচ্ছে। এ জন্যই দেরি হচ্ছে।”
পুরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, পাইপ ফাটার খবর পাওয়ার পরেই পুর-ইঞ্জিনিয়াররা গিয়ে কাজ শুরু করেন। যেহেতু দীর্ঘ দিন আগে করা ওই পাইপলাইনের উপরেই নর্দমা গিয়েছে, ওই নর্দমা ভেঙে সাত ফুট নীচে থাকা পাইপলাইনে কাজ করতে গিয়ে অনেকটা সময় লেগে যায়।
জল দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ অরুণ রায়চৌধুরী বলেন, “দীর্ঘ ৩৪ বছর আগে করা এই পাইপলাইনের কোনও মানচিত্র নেই। কোথা দিয়ে পাইপ লাইন গিয়েছে, তা না খুঁড়ে বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকী, পাইপের যে সব জায়গায় ভাল্ভ লাগানো প্রয়োজন, তা লাগানো হয়নি। তাই কোনও এলাকায় জল বন্ধ করার প্রয়োজন হলে তা করা যায় না। পুরোটাই বন্ধ করতে হয়।”
কিন্তু পাইপের ফাটল সারিয়ে কবে জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে?
অরুণবাবু জানান, যুদ্ধকালীন তত্পরতায় পাইপ মেরামতির কাজ চলছে। একটা ভাল্ভ বসানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “বুধবার থেকে যাতে শহরে জল সরবরাহ স্বাভাবিক করা যায়, তার চেষ্টা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy