Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ফ্লাড শেল্টার বেহাল, বর্ষায় ঠাঁই নিয়ে আতঙ্ক হাওড়ার দ্বীপাঞ্চলে

বর্ষার মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। কিন্তু এ বারও হাওড়ার আমতা-২ ব্লকের ‘দ্বীপাঞ্চল’ বলে পরিচিত ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েত এলাকায় বেহাল ফ্লাড শেল্টার দু’টির সংস্কার হল না। তৈরি হয়নি নতুন কোনও ফ্লাড শেল্টারও। ফলে, ফি-বছরের মতো এ বারও আতঙ্কে ওই দ্বীপাঞ্চলের সাতটি গ্রামের বাসিন্দারা। রূপনারায়ণ এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীঘেরা ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকা প্রায় প্রতি বছরই বর্ষায় প্লাবিত হয়।

ফ্লাড শেল্টার হিসাবে ব্যবহার হলেও ছাদ নেই দোতলার।—নিজস্ব চিত্র।

ফ্লাড শেল্টার হিসাবে ব্যবহার হলেও ছাদ নেই দোতলার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০১:৪৩
Share: Save:

বর্ষার মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। কিন্তু এ বারও হাওড়ার আমতা-২ ব্লকের ‘দ্বীপাঞ্চল’ বলে পরিচিত ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েত এলাকায় বেহাল ফ্লাড শেল্টার দু’টির সংস্কার হল না। তৈরি হয়নি নতুন কোনও ফ্লাড শেল্টারও। ফলে, ফি-বছরের মতো এ বারও আতঙ্কে ওই দ্বীপাঞ্চলের সাতটি গ্রামের বাসিন্দারা।

রূপনারায়ণ এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীঘেরা ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকা প্রায় প্রতি বছরই বর্ষায় প্লাবিত হয়। নদীর জল ফুলে উঠে ভাসিয়ে দেয় গ্রামবাসীদের ঘরদোর, খেত-খামার। দুর্গত মানুষকে আশ্রয় নিতে হয় কোনও উঁচু বাড়ি বা স্কুলে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য কয়েক দশক আগে তৈরি বেহাল ফ্লাড শেল্টার দু’টির সংস্কার বা নতুন করে তা তৈরির দাবি গ্রামবাসীদের বহু দিনের। জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে আমতা-২ ব্লকে ১টি ফ্লাড শেল্টার তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। তা হওয়ার কথা ব্লক অফিস চত্বরে। কিন্তু ভাটোরা বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা।

তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকেই ব্লকে একটি ফ্লাড শেল্টার তৈরির আবেদন জানানো হয় জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরে। সমিতির দাবি, ভাটোরার বেহাল ফ্লাড শেল্টার দু’টির কথা তাদের গোচরে নেই। সংস্কারের জন্য কোনও আবেদনও জানানো হয়নি। সমিতির সভাপতি মিঠু বারুইয়ের দাবি, “নতুন ফ্লাড শেল্টার তৈরির জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই, ব্লক অফিস চত্বরে তা তৈরির জন্য আবেদন জানানো হয়।” প্রায় একই বক্তব্য বিডিও ইন্দ্র নস্করেরও। তবে, ভাটোরা থেকে কোনও আবেদন এলে তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

ভাটোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের অর্ধেন্দু আলু বলেন, “এলাকায় একটি ফ্লাড শেল্টারের প্রয়োজন রয়েছে। এখানে তা তৈরির জন্য জমিও রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি এ ব্যাপারে আমাদের জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হত। যাই হোক, আমরা ব্লক প্রশাসনকে লিখিত আবেদন জানাব।” জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) আরশাদ হাসান ওয়ারসির আশ্বাস, ব্লক প্রশাসন ফ্লাড শেল্টারের জন্য আবেদন জানালে বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিভিসি-র নিয়মমতো আমতা-২ ব্লক এলাকা ‘স্পিল জোন’ হিসেবে চিহ্নিত। অর্থাৎ, নদীর যে পাড়ে স্থায়ী বাঁধ দেওয়া যায় না, তার মধ্যে পড়ছে ওই ব্লক এলাকা। কিন্তু, বর্ষায় দুই নদীর জল বাড়লে বা ডিভিসি জল ছাড়লে প্লাবিত হয় ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকার পাঁচটি গ্রাম। সমস্যায় পড়েন প্রায় ৪০ হাজার গ্রামবাসী। দু’টি পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা ফ্লাড শেলাটর দু’টির ছাদ আর নেই। দেওয়ালও ভেঙে পড়ে মাঝেমধ্যেই। তাই সেই জায়গা দু’টি প্রায় পরিত্যক্তই। আমতা-২ ব্লকে পাঁচটি ফ্লাড শেল্টার থাকলেও সেগুলি দূরবর্তী এলাকায় হওয়ায় ভাটোরার কেউই মানুষ সেখানে যেতে চান না। তাঁরা আশ্রয় নেন এলাকারই কারও উঁচু বাড়ি বা স্কুলে।

অশোক পাল নামে উত্তর ভাটোরার এক বাসিন্দা বলেন, “নদীতে জল বাড়তে থাকলেই কোথায় গিয়ে উঠব ভেবে বুকে কাঁপুনি ধরে। সব সময় তো আর লোকের বাড়ি ওঠা যায় না।” সমীর গায়েন নামে আর এক গ্রামবাসীর কথায়, “হয় প্রশাসন দ্রুত বেহাল ফ্লাড শেল্টার দু’টি সারাক, না হলে নতুন তৈরি করুক। প্রতি বছর বর্ষায় আতঙ্কে থাকতে কার ভাল লাগে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal flood shelter uluberia amta block 2
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE