Advertisement
E-Paper

বন্যার্তদের জন্য প্রতি ব্লকে ফ্লাড শেল্টার হচ্ছে হুগলিতে

বন্যা দুর্গতদের আশ্রয় দিতে হুগলির প্রতি ব্লকে ফ্লাড শেল্টার তৈরি করছে রাজ্য সরকার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাঙ্গিপাড়া, পুড়শুড়া ও বলাগড়ে ওই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বেশ কয়েকটি জায়গায় কাজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। প্রতি ব্লকেই ফ্লাড শেল্টার হবে তিন তলা ভবনের। প্রথম তলটি ফাঁকা থাকবে। দোতলা এবং তিন তলায় ১০ বাই ২০ ফুট আয়তনের দু’টি করে ঘর থাকবে। প্রতিটি ঘরের সামনে থাকবে শৌচাগার। প্রত্যেকটির খরচ ধরা হয়েছে ৪৫ লক্ষ টাকা করে। টাকা দিচ্ছে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০১:০০
জাঙ্গিপাড়ায় তৈরি হওয়া ফ্লাড শেল্টার।—নিজস্ব চিত্র।

জাঙ্গিপাড়ায় তৈরি হওয়া ফ্লাড শেল্টার।—নিজস্ব চিত্র।

বন্যা দুর্গতদের আশ্রয় দিতে হুগলির প্রতি ব্লকে ফ্লাড শেল্টার তৈরি করছে রাজ্য সরকার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাঙ্গিপাড়া, পুড়শুড়া ও বলাগড়ে ওই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বেশ কয়েকটি জায়গায় কাজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। প্রতি ব্লকেই ফ্লাড শেল্টার হবে তিন তলা ভবনের। প্রথম তলটি ফাঁকা থাকবে। দোতলা এবং তিন তলায় ১০ বাই ২০ ফুট আয়তনের দু’টি করে ঘর থাকবে। প্রতিটি ঘরের সামনে থাকবে শৌচাগার। প্রত্যেকটির খরচ ধরা হয়েছে ৪৫ লক্ষ টাকা করে। টাকা দিচ্ছে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।

জেলার মধ্যে মূলত আরামবাগ মহকুমা বন্যাপ্রবণ। এ ছাড়াও, তারকেশ্বর, বলাগড়, জাঙ্গিপাড়া-সহ বিভিন্ন ব্লকের বেশ কিছু জায়গাও বন্যাপ্রবণ বলে পরিচিত। এই সব জায়গায় কার্যত ফি-বছর বর্ষায় ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে হয় মানুষকে। আরামবাগ মহকুমার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে দ্বারকেশ্বর, দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদী। বর্ষায় তিনটি নদীই ফুলেফেঁপে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তার উপর ডিভিসি জল ছাড়লে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে দাঁড়ায়। নদীর দু’কুল ছাপিয়ে জল ঢুকে একের পর এক গ্রাম ভাসায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রচুর কাঁচাবাড়ি। জল ঢুকে পড়ায় এক তলা পাকা বাড়িও নিরাপদ থাকে না। এলাকার উঁচু স্কুলবাড়িগুলিতে ঠাঁই নিতে হয় বন্যার্তদের। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। বছর কয়েক আগে জলবন্দি মানুষকে উদ্ধারে আরামবাগ মহকুমায় সেনা নামাতে হয়েছিল। ফ্লাড শেল্টার হলে বন্যাদুর্গত মানুষ সেখানে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবেন বলে প্রশাসনের কর্তাদের অভিমত।

রাজ্য সরকারের এই কাজে স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তি পেয়েছেন জেলার বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ। জাঙ্গিপাড়া ব্লকের গুটিসিংটির বাসিন্দা, বছর পঁয়ষট্টির সনাতন পাত্র বলেন, “দামোদরে জল বাড়লেই আতঙ্ক শুরু হয়, এই বুঝি সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে। ফ্লাড শেল্টার হয়ে গেলে পরিবার নিয়ে সেখানে ঠাঁই নিতে পারব।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, আরামবাগের হরিণখোলায় ফ্লাড শেল্টার তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। খানাকুল-১ ব্লকে একটি ফ্লাড শেল্টার রয়েছে। সেটি সংস্কারের পাশাপাশি ওই ব্লকে আরও একটি ফ্লাড শেল্টার তৈরি করা হবে। কাজের টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। খানাকুল-২ ব্লকেও ফ্লাড শেল্টারের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। গোঘাট-১ ব্লকেও কাজের অনুমোদন হয়ে গিয়েছে সরকারি স্তরে। তারকেশ্বর পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ফ্লাড শেল্টার তৈরি হওয়ার কথা। হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) আবিদ হোসেন বলেন, “বলাগড়, পুড়শুড়া, জাঙ্গিপাড়ায় ফ্লাড শেল্টার তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আপাতত জেলার প্রতিটি ব্লকেই একটি করে ওই ধরনের বাড়ি তৈরি করা হবে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক আরও জানান, ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের মডেল অনুযায়ী ফ্লাড সেন্টারগুলি তৈরি হচ্ছে। একটি ফ্লাড শেল্টারে ৪০-৫৪টি পরিবার থাকতে পারবে।

বলাগড় ব্লকের চরকৃষ্ণবাটি, গুপ্তিপাড়া, সোমড়া, বলাগড়, জিরাটের বেশ কিছু জায়গা বন্যাপ্রবণ। ওই ব্লকে কয়েকটি ফ্লাড শেল্টার থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ ছিল। দামোদরের জল ঢুকে জাঙ্গিপাড়ার রশিদপুর পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়। দোতলা বাড়ির ছাদ বা স্কুলবাড়ির উপর ভরসা করতে হয় মানুষকে। অনেকে বাঁধের উপর অস্থায়ী ছাউনিতে আশ্রয় নেন। মানুষের পাশাপাশি থাকে গরু-ছাগলের মতো গৃহপালিত পশুও। ওই অবস্থায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার জন্য বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা দেখা দেয়। ফ্লাড শেল্টারে সেই সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে ব্লক প্রশাসনের দাবি। বিডিও সুদীপ্তনারায়ণ ওঝা বলেন, “ইতিমধ্যেই ৭০ শাতংশ কাজ শেষ। বাকি কাজও যাতে তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় তার চেষ্টা চলছে।”

তবে বন্যাদুর্গতদের জন্য ফ্লাড শেল্টার তৈরি করা হলেও সেগুলির দেখভাল কী ভাবে হবে সে প্রশ্নও উঠেছে। এর জবাবে জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় ব্লক প্রশাসন ওই বাড়িগুলির দেখভাল করবে। বন্যার সময় ছাড়া অন্য মরসুমে আইসিডিএস সেন্টার বা অন্য কোনও প্রকল্পে কাজে বাড়িগুলি কাজে লাগানো হবে।

serampore prakash pal flood shelters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy