Advertisement
E-Paper

বস্তাবন্দি দেহ মিলল অন্বেষার, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-সহ ধৃত ৩

শুক্রবার রাতে গৃহশিক্ষিকার বাড়ি থেকে পড়ে আর বাড়ি ফেরেনি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী অন্বেষা মণ্ডল। আজ, রবিবার জানা গেল, খুন করা হয়েছে তাকে। দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র-সহ তিন যুবককে এ দিন গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা জেরার মুখে খুনের কথা কবুল করেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৪
খুনের অভিযোগে ধৃত তিন যুবককে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: তাপস ঘোষ।

খুনের অভিযোগে ধৃত তিন যুবককে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: তাপস ঘোষ।

শুক্রবার রাতে গৃহশিক্ষিকার বাড়ি থেকে পড়ে আর বাড়ি ফেরেনি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী অন্বেষা মণ্ডল। আজ, রবিবার জানা গেল, খুন করা হয়েছে তাকে। দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র-সহ তিন যুবককে এ দিন গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা জেরার মুখে খুনের কথা কবুল করেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

শুক্রবার শিক্ষিকার বাড়ি থেকে অন্বেষাকে একা ফিরতে দেখে অপহরণ করে ওই তিন যুবক। তারা পরিকল্পনা করেছিল ওই কিশোরীকে আটকে রেখে তার পরিবারের কাছ থেকে মোটা মুক্তিপণ আদায় করবে। কিন্তু ভয় পেয়ে অন্বেষা চিৎকার জুড়লে লোক জানাজানির আশঙ্কার তার গলা টিপে ধরে ওই যুবকেরা। শ্বাসরোধ হয়ে সেখানেই মারা যায় বছর এগারোর অন্বেষা মণ্ডল।

দেহ কোথায় রাখবে তা ঠিক করতে না পেরে গঙ্গার চরেই তা ফেলে রাখে অভিযুক্তরা। সেখান থেকে বেরিয়ে তিন জনে প্রথমে একটা বিয়েবাড়িতে ঢোকে। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব সেরে ফিরে আসে সেই গঙ্গার চরেই। রাত বাড়লে সেখানে বসেই মদ খায় তারা। তার পর কিশোরীর দেহ একটা চটের বস্তায় ভরে। কিন্তু ওই কিশোরীর পা-দুটো বস্তা থেকে বেরিয়ে থাকায় কোদাল দিয়ে তা ভেঙে বস্তায় পোরে তারা। তার পর মাটি খুঁড়ে বস্তা পুঁতে দেয় গঙ্গার চরে।

অন্বেষাকে খুন করার পর তারা ওই ছাত্রীরই মোবাইল থেকে ফোন করে তার বাড়িতে। প্রথমে ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এর মধ্যে অন্বেষার বাবা পুলিশে অভিযোগ জানালে ফোনের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। শনিবার গঙ্গার ধার থেকে মেলে ওই ছাত্রীর সাইকেল। জিরাট স্মৃতিমন্দিরের কাছে তার গৃহশিক্ষিকার বাড়ির কাছ থেকে উদ্ধার হয় অন্বেষার চটিজোড়াও।


অন্বেষা

কাল বিকেলে অন্বেষার দাদুর ফোনে ফের ফোন করে অপহরণকারীরা। তিন লক্ষ নয়, এ বার তারা তিরিশ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চায় বলে অভিযোগ। বাড়ির লোক এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই জানালে শেষমেশ রফা হয় ১০ লক্ষ টাকায়। পুলিশে গেলে মেয়েকে ফেরত পাওয়া যাবে না, সেই হুমকিও দেয় অচেনা পুরুষকণ্ঠ।

শেষ পর্যন্ত ওই ফোনের সূত্র ধরে শনিবারই রাত ১টা নাগাদ এলাকার বাসিন্দা, দ্বাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের ছাত্র স্বরূপ মজুমদারকে আটক করে পুলিশ। তাকে জেরা করে খোঁজ মেলে হাটতলার বাসিন্দা গৌরব মণ্ডল ওরফে শানু এবং কৌশিক মালিকের। শানুর বয়স বছর তেইশ। স্বরূপ ও কৌশিক এখনও কুড়ি ছোঁয়নি। তিন জনকে জেরা করে এ দিন ভোর চারটে নাগাদ গঙ্গার চরে মাটি খুঁড়ে অন্বেষার বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসু জানিয়েছেন, “মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে এক জনকে আটক করার পর বাকিদের গ্রেফতার করা হয়। খুনের মামলা শুরু হয়েছে।” তিনি জানান, এই ঘটনার সঙ্গে আর কেউ যুক্ত আছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ দিন অন্বেষার খুনের খবর পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসিন্দারা। কোনও ছাত্র কী ভাবে এতটা নৃশংস হতে পারে তা ভেবেই পাচ্ছেন না তাঁরা। শোকে ভেঙে পড়েছেন অন্বেষার বাড়ির লোক ও প্রতিবেশীরা। ওই তিন যুবকের বাড়িতে রবিবার হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। পরে পুলিশ গিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

পুলিশ সূত্রের খবর, মূল অভিযুক্ত গৌরব ওরফে শানু তার পরিচিত কৌশিক ও স্বরূপকে নিয়ে পুরো কাণ্ড ঘটিয়েছে। স্বরূপ জিরাটের একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। শানুর বিরুদ্ধে আগেও অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ উঠেছিল। তবে স্বরূপ ও কৌশিকের নামে পুলিশের খাতায় আগে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। রবিবার তাদের চুঁচুড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক দশ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

southbengal murder balagarh anwesha mondal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy