Advertisement
E-Paper

সময়ে দেখা নেই বাবুদের, বাইরে দীর্ঘ লাইন

জায়গা-জমি নিয়ে সমস্যা মেটাতে বা জমি সংক্রান্ত তথ্য জোগাড়ের জন্য অফিস খোলার অনেক আগে থেকেই ভিড় লেগে যায় উলুবেড়িয়া ভূমি ও ভূমি সংস্কার (বিএলআরও) দফতরে। কিন্তু অফিসের বাবুরা যথাসময়ে আসেন না বা এলেও তাঁদের কাজে হাত দিতেই অনেক সময় লেগে যায়, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তা যে একেবারেই অমূলক নয়, তার প্রমাণ মিলল সোমবার দফতরে গিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৬
সকাল ১০ টা ২৫: দরজা খোলা হচ্ছে দফতরের। ছবি: সুব্রত জানা।

সকাল ১০ টা ২৫: দরজা খোলা হচ্ছে দফতরের। ছবি: সুব্রত জানা।

জায়গা-জমি নিয়ে সমস্যা মেটাতে বা জমি সংক্রান্ত তথ্য জোগাড়ের জন্য অফিস খোলার অনেক আগে থেকেই ভিড় লেগে যায় উলুবেড়িয়া ভূমি ও ভূমি সংস্কার (বিএলআরও) দফতরে। কিন্তু অফিসের বাবুরা যথাসময়ে আসেন না বা এলেও তাঁদের কাজে হাত দিতেই অনেক সময় লেগে যায়, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তা যে একেবারেই অমূলক নয়, তার প্রমাণ মিলল সোমবার দফতরে গিয়ে।

অফিস খোলার সময় সকাল ১০টা। ততক্ষণে জায়গা-জমি সংক্রান্ত নানা কাজ নিয়ে হাজির কয়েকজন। কিন্তু অফিস না খোলায় দরজার সামনে বসে তাঁরা। ঘড়িতে ১০টা ২০ মিনিট। দেখা গেলে দফতরের চতর্থ শ্রেণির কর্মী অনুপ মালিক পান চিবোতে চিবোতে হাজির হলেন। ১০টা ২৫ মিনিট নাগাদ খুলল দফতরের দরজা। বাইরে এতক্ষণ যাঁরা অপেক্ষা করছিলেন তাঁরাই ভিতরে ঢুকে আলো, পাখা জ্বালিয়ে নিলেন। পৌনে এগারোটা নাগাদ দফতরে ঢুকলেন সার্ভেয়ার জয়ন্ত গোস্বামী। দেরির কারণ জানতে চাইলে সপাট উত্তর, ‘‘মেয়েকে ট্রেনে তুলে দিতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল।” দফতরের বড়বাবু লক্ষ্মীকান্ত দাস যখন ঢুকলেন ঘড়ির কাঁটা তখন ১০ টা ৫১ ছুঁয়ে ফেলেছে। তাঁর বক্তব্য, “এমন দেরি রোজ হয় না। আজ বাড়ির কিছু কাজ সেরে আসতে গিয়ে দেরি হল।” আর এক সার্ভেয়ার স্বপন পর্বত ঢুকলেন ১১টার পর। তাঁর জবাব, “গাড়ি লেট।”

অফিসে রোজ ঝাড়ু দেন শেফালি সাঁতরা। অফিসের বাবুরা চলে এলেও তিনি এলেন ১১টা ২৫ মিনিট নাগাদ। ঢুকেই শুরু হয়ে গেল ঝাড়ু দেওয়া। দেরি কেন? এল ঝাঁঝালো উত্তর, “বাবুরাই দেরি করে আসেন তো আমি তাড়াতাড়ি এসে কী করব?”

উলুবেড়িয়া ভূমি ও ভূমি সংস্কার (বিএলআরও) দফতরের হাল

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

ঘড়িতে প্রায় পৌনে ১২টা। কানে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে ঢুকলেন রেভিনিউ অফিসার সুচেতনা পট্টনায়ক। ছবি তুলতেই তাঁর হুঙ্কার, “কে আপনি। বিনা পারমিশনে আমার ছবি তুললেন। পরিচয়পত্র দেখি।” পরিচয়পত্র দেখানোর পরে কিছু শান্ত। দেরি কেন জানতে চাওয়ায় পাল্টা প্রশ্ন ‘আপনাকে বলব কেন’? বলতে বলতেই তড়িঘড়ি চেয়ারে বলে কাজে হাত দিলেন। দফতরের পিওন রত্না রায় এলেন ১১টা ৫০-এ। ঢুকেই জানান, উলুবেড়িয়া লেভেল ক্রসিংয়ে আটকে যাওয়াতেই দেরি হল। ঘড়ির কাঁটা প্রায় ১২টা ছুইছুই। দফতরে ঢুকলেন তিন কর্মী কল্যাণ ব্যানার্জি, শিবশঙ্কর ভট্টচার্য ও জীবন প্রামাণিক। প্রত্যেকেই জানালেন, আজই প্রথম দেরি হল। চেয়ারে বসে সিগারেট ধরিয়ে দীর্ঘ টান দিলেন কল্যাণবাবু। ততক্ষণে তাঁর কাছে কাজে আসা লোকজনের লাইনটা দীর্ঘ হয়ে গিয়েছে।

পৌনে একটা নাগাদ অফিসে ঢুকলেন বিএলআরও ইমন মুখোপাধ্যায়। দেখে বসতে বলেই তাঁর মন্তব্য, “শরীর খারাপ। সেই সল্টলেক থেকে আসতে হয়। কোয়ার্টার পাইনি। তাই প্রায় দিনই দেরি হয়।” দফতরের কর্মীদের দেরিতে আসার জন্য সাদারণ মানুষের হয়রানির প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “সমস্যাটা বুঝতে পারছি। চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে সকলে ঠিক সময়ে অফিসে আসে।”

ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই কাজে আসা এক যুবকের বিরক্তিভরা মন্তব্য, “দাদা দেখলেন তো! কর্মসংস্কৃতির কি হাল? আমাদের অবস্থাটা তাহলে বুঝুন।” মিউটেশনের জন্য সকাল থেকে এসে বসেছিলেন অনাথকুমার দে। বললেন, “ওরা একে তো ঠিক সময়ে অফিসে আসে না।তার উপর নানা অজুহাতে ঘোরায়। আমাদের হয়রানির শেষ নেই।”

blro office blro office uluberia uluberia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy