Advertisement
E-Paper

সহায়ক মূল্যে ধান কিনতে গড়িমসি, বিপাকে চাষিরা

জেলায়-জেলায় সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনা ব্যাপক ভাবে শুরু না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের চাষিরা। এই নিয়ে বহু জেলাতেই চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। হাওড়ায় রাস্তা অবরোধ করে ধান পুড়িয়ে প্রতিবাদ করেছে বাম কৃষক সংগঠন। জালন্ধরের আলুবীজের উপর নির্ভর করে ইতিমধ্যেই ঠকেছেন বহু চাষি। তার মধ্যেই ধান নিয়ে সমস্যার জেরে সঙ্কট ঘোরালো হয়েছে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩৭

জেলায়-জেলায় সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনা ব্যাপক ভাবে শুরু না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের চাষিরা।

এই নিয়ে বহু জেলাতেই চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। হাওড়ায় রাস্তা অবরোধ করে ধান পুড়িয়ে প্রতিবাদ করেছে বাম কৃষক সংগঠন। জালন্ধরের আলুবীজের উপর নির্ভর করে ইতিমধ্যেই ঠকেছেন বহু চাষি। তার মধ্যেই ধান নিয়ে সমস্যার জেরে সঙ্কট ঘোরালো হয়েছে।

রাজ্য কৃষি দফতরের হিসেবই বলছে, এই মরসুমে ধানের ফলন বেশ ভাল। চাষিরা আশায় ছিলেন, রাজ্য সরকার সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু করলে খোলা বাজার চাঙ্গা হবে। দর উঠবে ধানের। চাষিদের আর অভাবী বিক্রি করতে হবে না। ধান বিক্রির টাকা থেকে আলু চাষের খরচ উঠে আসবে। সহায়ক মূল্যে চাষিদের থেকে ধান কেনার জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই চালকল মালিকদের নির্দেশ দিয়েছে। প্রতি কুইন্ট্যাল ধানের দাম গত মরসুমের ১৩২০ টাকা থেকে কিছুটা বাড়িয়ে এ বার ১৩৬০ টাকা করা হয়েছে। চালকলে ধান আনার খরচ হিসেবে বস্তা (৬০ কেজি) প্রতি বাড়তি ১৫ টাকা দিতেও বলা হয়েছ।

কিন্তু রাজ্যের প্রধান ধান উত্‌পাদক জেলা হুগলি, বর্ধমান, বীরভূম-সহ গোটা উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গে সেই ভাবে সরকারি স্তরে ধান কেনা এখনও শুরুই হয়নি। বিচ্ছিন্ন ভাবে কোনও কোনও জেলায় ক্যাম্প হলেও সার্বিক প্রয়োজনের তুলনায় তা নগণ্য। রাজ্যে প্রথম ক্ষমতায় এসে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক নিজে জেলায়-জেলায় সরকারি ধান কেনার ক্যাম্প পরিদর্শন করতে যেতেন। সেই উদ্যোগেও ভাটা পড়েছে।

সরকারের তরফে অবশ্য ক্যাম্প না হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। কৃষি দফতর সূত্রের দাবি, প্রতিটি জেলার বিডিও, মহকুমাশাসক, জেলাশাসক অথবা ফুড কন্ট্রোলারের মধ্যে যে কারও কাছে আর্জি জানালেই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি প্রতিনিধিরা চাষির কাছ থেকে ধান নিয়ে যাবেন। দূরত্বও আর বাধা নয়। ৫০ অথবা ১০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ক্যাম্প করলেও চালকল মালিকদের তার খরচ দিয়ে দেওয়া হবে। রাজ্যের ৪৪টি কৃষক মান্ডির যে কোনওটিতে গিয়েও চাষিরা দিনের যে কোনও সময়ে সরাসরি ধান বিক্রি করতে পারবেন। হাতে-হাতেই তাঁরা নগদ পেয়ে যাবেন। এ ছাড়াও প্রতিটি ব্লকে চাষিদের জন্য দু’টি করে টোল-ফ্রি নম্বর রয়েছে। ধান বিক্রির জন্য তাতেও যোগাযোগ করা যাবে।

“১১৫০ টাকা কুইন্ট্যাল দরে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। না হলে আলু চাষ করতে পারব না।
এক কুইন্ট্যাল ধান চাষ করতে গিয়ে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা খরচ হয়েছে। এর পরে আবার
পাঁচ কেজি করে লেভি দিতে হচ্ছে।” হানিফ মল্লিক, চাষি

ধনেখালির চাষি হানিফ মল্লিক অবশ্য বলেন, “১১৫০ টাকা কুইন্ট্যাল দরে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। না হলে আলু চাষ করতে পারব না। এক কুইন্ট্যাল ধান চাষ করতে গিয়ে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা খরচ হয়েছে। এর পরে আবার পাঁচ কেজি করে লেভি দিতে হচ্ছে।” ধান চাষ করেই সংসার চালান বর্ধমানের মন্তেশ্বরের রবীন্দ্রনাথ বসু। তিনিও বলেন, “এ বার ধানের দাম অত্যন্ত কম। পাওনাদারদের টাকা মেটাতে ধান ওঠার পরেই বিক্রি করে দিতে হয়। তার মধ্যে এ বার সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।” বৈঁচির চাষি আব্দুল কাশেমও বলেন, “বাজারে ১২০০ টাকায় ধান বিক্রি করছি। তার সঙ্গে এক কেজি করে বাড়তি ধান দিতে হচ্ছে। না হলে মোট ওজনের উপরে তিন শতাংশ বাদ দিচ্ছে। ধান বিক্রি না হলে আলু চাষ করতে পারব না। কিন্তু কোথাও কোনও সরকারি উদ্যোগ দেখছি না।” ময়নাগুড়ির রামসাই পঞ্চায়েতের পানবাড়ি গ্রামের চাষি কমল রায়ের ক্ষোভ, “ধান কেনার জন্য সরকারি শিবির যে কোথায় হচ্ছে, কে জানে! কম দামে খোলা বাজারেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।”

কৃষিকর্তারা অবশ্য ধানের অভাবী বিক্রির অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের পাল্টা দাবি, খাদ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জঙ্গলমহলের তিন জেলায় ক্যাম্পে গিয়েছেন। এই সপ্তাহে তাঁর উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়ার কথা। সেখান থেকে ফিরে বর্ধমান এবং হুগলিতে ক্যাম্প পরিদর্শন করে পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য বৈঠকে বসবেন। খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, “বৃহস্পতিবারই বর্ধমানে খোলা বাজারে ১৪১০ টাকা কুইন্ট্যাল দরে ধান বিক্রি করেছেন চাষিরা। বিরোধীরা সস্তা রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। আমি বিভিন্ন জেলায় গিয়েছি এবং আবারও যাব।”

subsidiary price southbengal gautam bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy