Advertisement
১৬ মে ২০২৪

বাস উঠিয়ে, ট্রেন ছাপিয়ে ভিড় আসছে ২১শে-র

তৃণমূলের থেকে বাস ছিনিয়ে নিচ্ছে তৃণমূল! সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ট্রেনের সংরক্ষিত কামরার আসন। ধর্মতলায় কাল, বৃহস্পতিবার ‘একুশের সমাবেশ’।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০৪:৫২
Share: Save:

তৃণমূলের থেকে বাস ছিনিয়ে নিচ্ছে তৃণমূল! সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ট্রেনের সংরক্ষিত কামরার আসন। ধর্মতলায় কাল, বৃহস্পতিবার ‘একুশের সমাবেশ’। দল বেঁধে তাতে সামিল হওয়ার জন্য বিভিন্ন রুটের বাস তুলে নেওয়াকে ঘিরে এখন ধুন্ধুমার দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায়। উত্তরবঙ্গে আবার হুড়োহুড়ি ট্রেনে জায়গা পাওয়া নিয়ে। আর তাতেই বিভ্রাট বাড়ছে সাধারণ যাত্রীদের।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা একুশে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশকে ঘিরে ফি বছরই কম-বেশি বিভ্রাটে পড়তে হয় মানুষকে। কিন্তু বাস্তবের ছবি বলছে, এ বারের হিড়িক হয়তো বা আগের থেকেও এক দাগ বেশি!

কেন? মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধর্মতলায় সমাবেশ-মঞ্চের প্রস্তুতি দেখতে এসে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এ বারের বিশেষত্বই হল আগের বারের উপস্থিতির রেকর্ড ছাপিয়ে যাওয়া!’’ আর দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের কথায়, ‘‘স্বাভাবিক কারণেই এ বার উৎসাহ বেশি। গত চার দশকে কোনও রাজনৈতিক দল বিধানসভা নির্বাচনে একার ক্ষমতায় ২১১টি আসন পায়নি। সেই বিজয়োৎসবটাও বকেয়া রয়েছে। সেই উৎসাহ-আগ্রহের প্রতিফলনই জেলায় জেলায় কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে।’’

মুকুলেরা যাকে ‘উৎসাহ’ বলছেন, সেটাই এখন বিড়ম্বনারও কারণ। জেলায় জেলায় বিভিন্ন রুট থেকে বাস তুলে নেওয়া শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। আবার বাস তুলে নেওয়াকে ঘিরে তৃণমূলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বেধেছে টানাপড়েনও! যেমন, দুপুরে তৃণমূল কর্মীরা চন্দ্রকোণার রাস্তায় বাস আটকাতে শুরু করেন। যাত্রীদের নামিয়ে বলা হয়, এই গাড়ি নিয়ে একুশের সমাবেশে যাওয়া হবে। কাকুতি মিনতি করেও রেহাই মেলেনি। কিছু বাসের ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে, একুশের জন্য ওই গাড়ি দলের অন্য একটি গোষ্ঠী আগেই বায়না করে রেখেছিল। সেই বায়নার কাগজ দেখালেও রেহাই মিলছিল না! শেষমেশ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে মীমাংসার চেষ্টা হয়েছে।

দক্ষিণবঙ্গে যখন বাস নিয়ে তৃণমূলেই এমন কাড়াকাড়ি, তখন উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় আসার সব ট্রেনে তিলধারণও মুশকিল হয়েছে। কোচবিহার থেকে শিয়ালদহমুখী যে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস দুপুরে ছেড়েছে, তার সিংহভাগই ছিল তৃণমূলের দখলে। যাত্রীদের বক্তব্য, স্লিপার ক্লাসের সংরক্ষিত আসনে একুশের সভাগামী তৃণমূল কর্মীরা বসেছেন, যাঁদের কারওরই আসন সংরক্ষিত নয়। আর যাঁরা আসন সংরক্ষণ করেছেন, তাঁদের তৃণমূল কর্মীদের কাছে অনুরোধ করতে হচ্ছে আসনের একটা কোণে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে বসার জন্য। তৃণমূলের লোকজন সগর্ব চিৎকার করছেন, ‘‘আজ রিজার্ভেশন হবে না!’’

এই পরিস্থিতিতে সংরক্ষিত আসনের টিকিট থাকা সত্ত্বেও এক মহিলা ফালাকাটা স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠতে পারেননি। ভুক্তভোগী যাত্রীদের একাংশ জানান, ওই ট্রেনে বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনও ছিলেন। তিনি ট্রেনে ওঠার আগে দলীয় কর্মীদের বলেন, তাঁদের জন্য বিশেষ ট্রেন আসবে। তাঁরা যেন সেটায় ওঠেন। কারণ, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে জায়গা নেই। তবে সঙ্গে এটাও বলেন, যদি এর পরেও তাঁরা পারেন, তা হলে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসেই উঠবেন। যাত্রীরা আরও জানাচ্ছেন, অভিযোগ জানানোর জন্য রেলের হেল্পলাইন ১৩২২-এ ফোন করলে টিকিট পরীক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কামরায় টিকিট পরীক্ষকের দেখা মিলছে না।

শুক্রবারের আগে এই পরিস্থিতি থেকে নিস্তার মেলার সম্ভাবনা যে নেই, তা ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূল নেতারা স্বীকার করছেন। সঙ্গে জানাচ্ছেন, জেলা থেকে আসা কর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে গিয়ে চাপে রাজ্য নেতারাও। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ। সভাস্থলে সকালে ও দুপুরে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে দু’বার বৈঠক করেছেন সুব্রত বক্সীরা। ঠিক হয়েছে, সমাবেশের দিন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন ২৩ জন ডেপুটি কমিশনার, ৬০ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও ১৬০ জন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ অফিসার। তাঁদের অধীনে ৪০০ এসআই ও ৪৫০ জন এএসআই-সহ পুলিশ বাহিনী মোতায়েন থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC rally Passenger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE