E-Paper

রোগীর সঙ্গে মানবিক আচরণই সুস্থতার সহায়ক

স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া রোগীকে মানসিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করে নিজের জগতে বিচরণ করায়। একা কথা বলা, একা হাসা, অদ্ভুত শব্দ শোনা, নিজস্ব কল্পনার বৃত্তে একতরফা ভালবাসা বা অকারণ সন্দেহ করাই এর লক্ষণ।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৫ ০৬:১৯
স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া মনের জটিল অবস্থা।

স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া মনের জটিল অবস্থা। —প্রতীকী চিত্র।

থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তের শর্করার মতোই দীর্ঘমেয়াদি অসুখ স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া। তফাত একটিই, স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া মনের জটিল অবস্থা। সময়ে রোগ ধরা পড়লে, নিয়মিত ওষুধ খেলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চললে রোগ সম্পূর্ণ সারিয়ে স্বাভাবিক জীবনেও ফেরা যায়।

স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া রোগীকে মানসিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করে নিজের জগতে বিচরণ করায়। একা কথা বলা, একা হাসা, অদ্ভুত শব্দ শোনা, নিজস্ব কল্পনার বৃত্তে একতরফা ভালবাসা বা অকারণ সন্দেহ করাই এর লক্ষণ। আরও একটি লক্ষণ ‘সোশ্যাল উইথড্রয়াল’। রোগী অন্যের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দেন, কোনও কাজেই আগ্রহ পান না। পরিচ্ছন্নতা বা পোশাকের বোধ চলে যায়। ‘হ্যালুসিনেশন’ ও ‘ডিলিউশন’ও স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার উপসর্গ, যা অন্যান্য মানসিক রোগ থেকে এটিকে আলাদা করে। ২৪ মে ‘বিশ্ব স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়। যদিও এই রোগের সচেতনতার পথে অনেকটাই হাঁটা বাকি, মানছেন চিকিৎসক ও মনোবিদেরা।

গবেষণা বলছে, স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার জন্য দায়ী বেশ কিছু জিন। এই রোগের চিকিৎসায় জিনগত গবেষণা চলছে। গত পাঁচ বছরে খান সাতেক নতুন ওষুধ এসেছে, যাতে আশাপ্রদ ফল মিলছে। মনোরোগ চিকিৎসকের নজরদারি ছাড়া রোগের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন থেরাপি। এই রোগ কিছু ক্ষেত্রে বংশগত। তবে, রোগীর ৫০ শতাংশ জিনের অধিকারী যাঁরা (অর্থাৎ, বাবা-মা বা ভাই-বোন), তাঁদের কেউ স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হলে আশঙ্কা থাকে এই রোগ হওয়ার। আবার বাবা-মা বা ভাই-বোনের এই রোগ থাকলেও কেউ আক্রান্ত না-ও হতে পারেন। তেমনই, পরিবারের কেউ আক্রান্ত না হলেও কারও স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া হতে পারে।

‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’র মনোরোগ শিক্ষক-চিকিৎসক সুজিত সরখেল বলছেন, ‘‘নিজেকে আলাদা করা, একা হাসা বা কথা বলা, কল্পনার জগতে থাকা, সন্দেহপ্রবণতা, অদ্ভুত শব্দ শোনা, যা অন্য কেউ শুনছেন না, অসংলগ্ন কথা বলা, ঘর থেকে বেরোতে অনীহা, পোশাকে ও চেহারায় পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং সর্বোপরি নিজের এই পরিবর্তনের কথা স্বীকার না করা— এ সব লক্ষ করলেই মনোরোগ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’’ তাঁর মতে, নিয়মিত ওষুধ খেয়ে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করার এবং স্বাভাবিক জীবনে ফেরার বহু উদাহরণ রয়েছে। তবে, স্বেচ্ছায় ওষুধের ডোজ় কমালে বা বন্ধ করে দিলে স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া ফিরে আসতে পারে। ওষুধ কম-বেশি করা বা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত শুধু চিকিৎসকই নেবেন।

মনোরোগ চিকিৎসক এবং ‘এশিয়ান ফেডারেশন অব সাইকায়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন’-এর জেনারেল সেক্রেটারি গৌতম সাহার বক্তব্য, কিছু ক্ষেত্রে আজীবন ওষুধ খেলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। থাইরয়েড, রক্তচাপের ওষুধও আজীবন খেতে হয়। গৌতম বলেন, ‘‘মানসিক রোগ মানেই স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া নয়। মানসিক রোগ সারে না, এটিও ভুল। স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া সারে না, এমন ধারণাও ভুল। ৭৫ শতাংশ স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার রোগী নিয়মিত ওষুধে সেরে ওঠেন। যে ২৫ শতাংশ সেরে ওঠেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে দেরিতে চিকিৎসা, চিকিৎসা মাঝপথে বন্ধ করা বা পরিবারের অসহযোগিতা ও ধৈর্যের অভাব বড় কারণ।’’

‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’র বিভাগীয় প্রধান, মনোবিদ বিদিতা ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এই রোগে থেরাপির গুরুত্ব যথেষ্ট। কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি, টোকেন ইকনমি থেরাপি, ডান্স অ্যান্ড মুভমেন্ট থেরাপি, মিউজ়িক থেরাপি, আর্ট থেরাপির মতো বিভিন্ন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। যে রোগীকে বিছানা থেকে নামানো যাচ্ছে না, তাঁকে টোকেন ইকনমি থেরাপি প্রয়োগ করে ভাল সাড়া মেলে। যেমন, তাঁর হয়তো আইসক্রিম পছন্দ। বলা হল, একটু হাঁটলে টোকেন পাবেন। পাঁচটি টোকেনের বদলে মিলবে আইসক্রিম।’’ চিকিৎসক ও মনোবিদদের মতে, স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া সম্পর্কে অসম্পূর্ণ ব্যাখ্যা বা পুরনো ধারণায় আটকে না থেকে রোগী ও তাঁর পরিবারের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ আক্রান্তের পরিবেশকে সহজ করে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Disease medical treatment Mental disease

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy