Advertisement
০৮ মে ২০২৪
লিলুয়া হোম

অত্যাচার সইতে না পেরেই পালাই, অভিযোগ তরুণীর

বাবা ছেড়ে গিয়েছেন। মা প্রয়াত। সম্পত্তির লোভে মামারা যৌন নির্যাতন চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় সহায়-সম্বলহীন তরুণীকে লিলুয়া হোমে পাঠিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু হোমে গিয়েও নারকীয় অত্যাচার সহ্য করতে হবে, সেটা তখন জানতেন না তিনি।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৫৬
Share: Save:

বাবা ছেড়ে গিয়েছেন। মা প্রয়াত। সম্পত্তির লোভে মামারা যৌন নির্যাতন চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় সহায়-সম্বলহীন তরুণীকে লিলুয়া হোমে পাঠিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু হোমে গিয়েও নারকীয় অত্যাচার সহ্য করতে হবে, সেটা তখন জানতেন না তিনি। প্রাণে বাঁচতে শেষ পর্যন্ত হোম থেকেও পালিয়েছেন তিনি। কিন্তু পরিচয়পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি-সহ বেশ কিছু জরুরি কাগজপত্র হোমে রয়ে গিয়েছে। সেগুলো ফিরে পেলে নতুন করে আর এক বার বাঁচার লড়াই শুরু করবেন তিনি।

২৪ বছরের মেয়েটি তাঁর কাগজপত্র ফেরত চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন ব্যারাকপুর আদালতের কাছে। হোমে থাকাকালীন তাঁর উপরে অন্য নারীরা কী অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছেন, আবেদনপত্রে লেখা আছে সেই কাহিনিও। ১৮ তারিখের মধ্যে লিলুয়া হোমের জবাব চেয়েছে আদালত। যুবতীর একটাই আকুতি, ‘‘আমাকে আমার মতো করে বাঁচতে দিক এ সমাজ!’’ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা মেয়েটি চান নিজে রোজগার করে গ্রাসাচ্ছাদন করতে।

নিজেই জানালেন, ছোটবেলায় বাবা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। মা মারা যান, তখন মাত্র বছর দশেক বয়স। বড়মামাই তুলে এনেছিলেন অসহায় কিশোরীকে। চলছিল পড়াশোনাও। সেটা ভালো চোখে দেখেননি অন্য দুই মামা। চার বছর আগে সবে কলেজে ঢুকেছেন মেয়েটি, এই সময়ে মারা গেলেন বড়মামাও। সম্পত্তির ভাগ দিতে হবে, এই আশঙ্কায় এ বার শুরু হল অন্য দুই মামার অত্যাচার। মামাবাড়ি থেকে পালিয়ে তরুণী পুলিশের দ্বারস্থ হলেন। বিমানবন্দর থানায় নথিভুক্ত করলেন যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। পুলিশ তাঁকে, তাঁর সমস্ত পরিচয়পত্র-শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত কাগজপত্র সমেত পাঠিয়ে দিল লিলুয়া হোমে।

হোমে গিয়ে কী দেখলেন তরুণী? তাঁর অভিযোগ, সেখানে বছরে একটা মাত্র জামা মেলে। তা-ও চুরি হয়ে যায়। নালিশ করলে চুলের মুঠি ধরে মার। অত্যাচার চরমে নিয়ে যেতে চাইলে জামাকাপড় খুলে রেখে দেওয়া হয়। যুবতীর বয়ান অনুযায়ী, প্রায় ৩০ বছর বয়সী জনা ১২ মহিলা হোমে কর্তৃত্ব চালান। অভিযোগ জানালে মারধর বেড়ে যায়। কমবয়সীদের উপরে চলে যৌন অত্যাচারও।

হোম থেকে পালিয়ে খুঁজে খুঁজে বাবার ঠিকানায় পৌঁছলেন। সেই বাবা, যিনি ছেড়ে গিয়েছিলেন ছোটবেলায়। কাকদ্বীপে আশ্রয় মিললেও সেখানে আবার শুরু হল সৎ মায়ের অত্যাচার। ছ’মাসের বেশি সেখানেও থাকতে পারেননি তরুণী। পালিয়ে কলকাতায় এসে আরজিকর হাসপাতালে যেখানে রোগীর আত্মীয়েরা রাত কাটান, সেখানে তিন দিন ছিলেন। কিন্তু খিদের জ্বালা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে রাজারহাটের এক সহৃদয় ব্যক্তির চোখে পড়ে গেলেন। আপাতত তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেই রয়েছেন যুবতী। স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে সামান্য একটি চাকরি পাওয়ার আশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখনও তাঁর সব পরিচয়পত্র হোমেই রয়েছে। সেখান থেকে গিয়ে সেগুলো আনতে পারছেন না। কারণ, হোমের খাতায় তিনি পলাতক। তাঁর আইনজীবী সব্যসাচী রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘ও নিজে হোম থেকে কাগজ নিতে যাবে সে উপায় নেই। কারণ ওর আশঙ্কা, ওকে দেখলে ওরা আবার জোর করে সেখানে রেখে দেবে। আবার অত্যাচার শুরু হবে।’’

হোমের অতিরিক্ত সুপার কল্পনা সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমাদের কাছে ওই যুবতীর পরিচয়পত্র বা অন্য কোনও অরিজিনাল কাগজপত্র নেই। অত্যাচারের কাহিনিও ঠিক নয়। মেয়েদের মধ্যে মারপিট হয় ঠিকই। হোম তো এ ভাবেই চলে।’’ এখন আদালতে গিয়ে তাঁরা কী বলেন, সেটাই দেখার। ইতিমধ্যে রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রকের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা কিন্তু বলেন, ‘‘খুবই গুরুতর অভিযোগ। এ রকম চলতে পারে না। আমরা ব্যাপারটা খতিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE