Advertisement
E-Paper

‘দাদা’র নির্দেশ কই! টান কারবারে

দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যার নাম উল্লেখ করেছেন, সেই লালার বয়স বছর পঁয়তাল্লিশ। বাবা ছিলেন ইসিএলের কয়লাখনির শ্রমিক।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০৫:১৯
জল জমে রয়েছে অবৈধ খোলামুখ খনিতে। নারায়ণকুড়িতে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

জল জমে রয়েছে অবৈধ খোলামুখ খনিতে। নারায়ণকুড়িতে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

‘দাদা’ থেকেও আপাতত ‘নেই’। তাই লকডাউন পর্বের গোড়ার দিকের মতো ফের এ রাজ্যে কিছুটা থমকে গিয়েছে অবৈধ কয়লার কারবার—এমনই দাবি কারবারিদের।

সম্প্রতি কলকাতায় এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘লালা’র (পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ার ভামুরিয়া গ্রামের আদি বাসিন্দা অনুপ মাজি) বাড়ি-অফিসে তল্লাশির উল্লেখ করে কটাক্ষ করেছিলেন। শাহের সফরের সময়েই রাজ্যে বেআইনি কয়লা কারবারের সূত্র ধরে ‘লালা’র নানা ডেরা-বাড়ি-ফ্ল্যাটে আয়কর দফতরের অভিযান হয়। এবং তিনি যথেষ্ট সহায়তা করেন বলেই আয়কর সূত্রের দাবি। কিন্তু তার পর থেকে ‘দাদা’র সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে দাবি অবৈধ কয়লার কারবারিদের একাংশের। তাঁদের দাবি, কয়লা চোরা কারবারের পিরামিডের ‘শীর্ষ বিন্দু’ বেপাত্তা হওয়ায় ঘেঁটে গিয়েছে ‘সাপ্লাই চেন’।

দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যার নাম উল্লেখ করেছেন, সেই লালার বয়স বছর পঁয়তাল্লিশ। বাবা ছিলেন ইসিএলের কয়লাখনির শ্রমিক। মাধ্যমিকের আগেই পড়া ছেড়ে লালা ছোটখাটো ব্যবসা করে পরিবারকে সাহায্য করতেন। কয়লার কারবারে নাম জড়ানোর পর থেকে ‘রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায়’ থাকতে তিনি অভ্যস্ত বলে দাবি ভামুরিয়া সূত্রের। দাবি, সে সুবাদেই লালার ‘উত্থান’ কয়লা-পিরামিডে। ‘সিন্ডিকেট’-এ।

পশ্চিম বর্ধমানের কয়লার চোরা কারবারের এক ‘চাঁই’ বলেন, ‘‘সিন্ডিকেটের একেবারে নীচের তলার বাসিন্দা অপেক্ষাকৃত ‘ছোট’ কারবারিরা। তাঁরা বিভিন্ন কুয়ো-খাদ, খোলামুখ খনি থেকে শ্রমিক খাটিয়ে কয়লা তুলে কুলটি, রানিগঞ্জের পঞ্জাবি মোড়, বক্তারনগর, কাঁকসায় সিন্ডিকেটের অফিসে প্রতি টন ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। সে কয়লাই প্রায় ৪৫০০ টাকা প্রতি টন দরে খদ্দেরের কাছে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন সিন্ডিকেটের প্রতিনিধি অর্থাৎ, ‘বড়’ কারবারিরা। সবটাই দাদার নির্দেশে হয়েছে এত দিন।’’

আয়কর-হানার পরে কী হল? অবৈধ কয়লার কারবারিদের দাবি, ৬ নভেম্বর থেকে লালার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন তাঁদের। না তাঁকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে, না অফিসে লোক পাঠিয়ে কথা বলা যাচ্ছে। বন্ধ সব রকম ‘নির্দেশ’ আসা।

‘নির্দেশ’ না-আসায় চোরাই কয়লা পশ্চিম বর্ধমানের কোন স্পঞ্জ আয়রন কারখানা, ‘বয়লার’ থাকা ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা, চুন ভাটি বা বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হুগলি, দুই চব্বিশ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তরবঙ্গের কোন ইটভাটায় যাবে, তা জানা যাচ্ছে না। যদি তা কোনও ভাবে জানাও যায়, তার পরেও পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারির ভয় থাকছে। ‘কারবার’ চালু থাকলে, পথে ‘দাদার প্যাড (অবৈধ কারবারে প্রচলিত রসিদ) আছে’ বললেই কাজ হয়, দাবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ট্রাক-ডাম্পার চালকের। সেই সঙ্গে প্রচুর কয়লা কাটা হলে, ‘দাদা’র নির্দেশ কই!

অপেক্ষাকৃত ‘ছোট’ খাদান মালিকেরা যদি সরাসরি কোনও ক্রেতাকে তা বিক্রি করতে চান, তবে গড়ে সওয়া এক লাখ টাকা দরে নির্দিষ্ট সঙ্কেতের ‘প্যাড’ কিনতে হয় সিন্ডিকেটের কাছ থেকে। ‘দাদা’র নির্দেশ না মেলায় সে ‘প্যাড’ও মিলছে না।

তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় সরকারের আতশকাচের তলায় এ রাজ্যের কয়লার চোরা কারবার এসেছে বুঝতে পেরে, ব্যবসার অন্য ‘কেষ্ট-বিষ্টু’রাও নিজেদের মোবাইল এবং সিম-কার্ড বদলে ফেলেছেন। অনেকে গা-ঢাকাও দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে চোরাকারবারিদের একাংশের দাবি, পশ্চিম বর্ধমানের পাঁচ হাজারেরও বেশি অবৈধ কুয়ো-খাদে কয়লা তোলা বন্ধ। লকডাউন ও বর্ষার পরে, আসানসোল, সালানপুর, বারাবনি, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ ও অণ্ডালে ১৬টি অবৈধ খোলামুখ খনি থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে (খরচ ২০-২৫ লক্ষ টাকা) ফের কয়লা তোলার তোড়জোড় হয়েছিল। এখন তা-ও বন্ধ। একাধিক কারবারির দাবি, ‘‘দাদাকে না পাওয়াটাই চাপের আসল কারণ।’’ যোগাযোগের বহু চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি লালা। জবাব আসেনি মেসেজের।

যদিও আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের কর্তাদের দাবি, পুলিশের নিয়মিত অভিযানের দৌলতে পশ্চিম বর্ধমানে বেআইনি কয়লার কারবার অনেক দিনই বন্ধ। খনির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফেরও বক্তব্য, কয়লার অবৈধ কারবারের খবর পেলেই তারা অভিযান চালায়।

তথ্য সহায়তা: শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

Coal Illegal Coal Mine
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy