Advertisement
E-Paper

ইমরান নিয়ে সতর্ক করেন রাজ্যের গোয়েন্দারাও

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির রিপোর্ট তো ছিলই, রাজ্য সরকারের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগও অভিযোগের আঙুল তুলেছিল আহমেদ হাসান ইমরানের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোয়েন্দা পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারের মাধ্যমে ক্যানিং থানার নলিয়াখালিতে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় ইমরানের যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছিল স্বরাষ্ট্র দফতরকে।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৪

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির রিপোর্ট তো ছিলই, রাজ্য সরকারের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগও অভিযোগের আঙুল তুলেছিল আহমেদ হাসান ইমরানের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোয়েন্দা পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারের মাধ্যমে ক্যানিং থানার নলিয়াখালিতে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় ইমরানের যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছিল স্বরাষ্ট্র দফতরকে। তার পরেও চলতি বছরের গোড়ায় ইমরানকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ফেব্রুয়ারির ভোটে বাম-কংগ্রেসের ভোট ভাঙিয়ে জিতেও যান ইমরান।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

ইমরানের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তুলেছিল ডিআইবি? সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী অফিসার তাঁর রিপোর্টে বলেছেন, ২০১৩-র ২০ ফেব্রুয়ারি ভোরে নলিয়াখালিতে মৌলানা রহুল কুদ্দুস নামে এক নেতাকে গুলি করে খুন করা হয়। এর ঘণ্টাখানেক পরেই এলাকায় মাইক বাজিয়ে উস্কানিমূলক প্রচার শুরু করে কয়েকশো যুবক। এই প্রচারের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন জীবনতলা থানা এলাকার তিন বাসিন্দা। এঁরা ইমরানের অনুগামী বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।

তদন্তকারী অফিসার লিখেছেন, “...এঁদের কারও কারও সঙ্গে পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা, সিমি-র (স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া) প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক জনৈক আহমেদ হাসান ইমরানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ...ওই ব্যক্তি এখন এসআইও-র (স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন) সদস্য। জানা গিয়েছে, এই ইমরান পার্ক সার্কাস থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলিম যুবককে বোমা এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র-সহ নলিয়াখালিতে পাঠানোর ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। এই যুবকরা সেখানে বহু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, লুঠপাট চালায়।”

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই দিন সকাল থেকে দুপুর থেকে পর্যন্ত নলিয়াখালিতে প্রায় ৩০০ বাড়ি ভাঙচুর করে বা আগুন লাগিয়ে লুঠপাট করা হয়েছিল। এবং শুধু পার্ক সার্কাস নয়। কলকাতার রাজাবাজার-মেটিয়াবুরুজ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট-বাসন্তী এলাকা থেকেও বহু সশস্ত্র যুবককে সে দিন নলিয়াখালিতে পাঠিয়েছিলেন ইমরান।

গোয়েন্দা পুলিশ খবর পেয়েছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে কয়েক জন সংখ্যালঘু নেতার সঙ্গে বৈঠক করে কী ভাবে সংঘর্ষ সংগঠিত করেছেন, তা বিস্তারিত জানান ইমরান। ভবিষ্যতে ওই এলাকায় কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা হবে, সেই বিষয়ে পরিকল্পনার কথাও অন্য নেতাদের জানান তিনি।

গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য মিলেছে। তদন্তে নেমে ইমরানের চারটি মোবাইল নম্বরের হদিস পান গোয়েন্দারা। ওই চারটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইমরান ওই দিন সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুধু ওই দিনের সংঘর্ষ সংগঠিত করাই নয়, ইমরান বিপুল পরিমাণ বিদেশি অর্থ নিয়ে এসে এ রাজ্যে মৌলবাদের প্রচারে কাজে লাগান। রাজ্যের বহু প্রত্যন্ত এলাকায় সংঘর্ষ সংগঠিত করার কাজেও এই অর্থ খরচ করা হয়।

এই রিপোর্ট সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ইমরানের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোনে পাওয়া যায়নি। এসএমএসের জবাবও দেননি তিনি।

নলিয়াখালিতে সংঘর্ষের পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলা গোয়েন্দা দফতরের এক ইনস্পেক্টর ঘটনার সরেজমিন তদন্ত রিপোর্ট দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারের কাছে জমা দেন। দু’এক দিনের মধ্যেই ওই রিপোর্টটি রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠানো হয়।

এই গোয়েন্দা রিপোর্টের কথা কি তবে মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না? রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে যিনি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ প্রতিরোধ করা জন্য বারবার আবেদন করেন, তিনিই কী ভাবে এমন পুলিশ রিপোর্ট থাকা এক জনকে রাজ্যসভায় পাঠালেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা শুক্রবার জানান, “ওই রিপোর্ট মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবের পাশাপাশি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হয়েছিল।” ফলে ইমরান সম্পর্কে কিছু না-জেনেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন, পুলিশ কর্তাদের একাংশই তা মানতে নারাজ।

saradha scam cbi tmc suvasish ghotok imran warns state agents state news online state new
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy