Advertisement
E-Paper

কৌঁসুলিদের বয়কটে নিজের উকিল নিজেই

উকিল-কৌঁসুলি-অ্যাডভোকেট না-থাকলেও যে মামলা চালাতে বাধা নেই, কলকাতা হাইকোর্টে ফের তা পরিষ্কার হয়ে গেল শুক্রবার। বিচারপতির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ বয়কট করছেন আইনজীবীদের একাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৩

উকিল-কৌঁসুলি-অ্যাডভোকেট না-থাকলেও যে মামলা চালাতে বাধা নেই, কলকাতা হাইকোর্টে ফের তা পরিষ্কার হয়ে গেল শুক্রবার। বিচারপতির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ বয়কট করছেন আইনজীবীদের একাংশ। কৌঁসুলি নিয়োগ করা সত্ত্বেও তাঁর গরহাজিরায় এ দিন সেই বেঞ্চে এক বিচারপ্রার্থী নিজেই নিজের মামলা লড়লেন।

ভারত বা বিদেশের সর্বোচ্চ আদালতে এমন নজির বিরল নয়। অনেক ক্ষেত্রেই আইনজীবীরা কোনও কারণে আদালতে হাজির না-থাকলে এ দেশ বা আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপ্রার্থীরা নিজেরাই মামলা লড়েন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের অনেকে মনে করেন, আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে বিচারপ্রার্থীদের নিজেদেরই সওয়াল করার অধিকার রয়েছে। তার ভিত্তিতে বিচারপতির কোনও নির্দেশ দিতেও অসুবিধা নেই। এ দিন হাইকোর্টের বিচারপতি গিরীশ গুপ্তও এক বিচারপ্রার্থীর আর্জির ভিত্তিতে তাঁকে জানিয়ে দেন, তাঁর আদালতে কিছু কৌঁসুলির বয়কট চললেও আবেদনকারী নিজেই নিজের বক্তব্য পেশ করতে পারেন।

দু’দিন ধরে বিচারপতি গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ বয়কট করছেন হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ। বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। এ দিন প্রবাসী চিকিৎসক কুণাল সাহার একটি মামলা শুনানির জন্য বিচারপতি গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে। আবেদনকারী ওই চিকিৎসক জানান, তাঁর আইনজীবী আদালতে হাজির হননি। তবে তিনি নিজেই নিজের বক্তব্য পেশ করতে চান। বিচারপতির কাছে তার অনুমতি চান তিনি।

হাইকোর্টের এক প্রবীণ আইনজীবীর সঙ্গে বিচারপতি গুপ্ত ঠিকঠাক আচরণ করেননি বলে অভিযোগ তুলে এবং তার প্রতিবাদে দু’দিন ধরে তাঁর ডিভিশন বেঞ্চ বয়কট করছেন আইনজীবীদের একাংশ। ওই বেঞ্চে এখন মূলত জামিনের মামলার শুনানি হয়। গত বুধবার জামিন সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানির সময়েই বিচারপতি গুপ্তের কিছু মন্তব্যের জেরে ওই প্রবীণ আইনজীবীর সঙ্গে তাঁর বিবাদ হয় বলে জানায় বার অ্যাসোসিয়েশন।

এর আগে শ্রীরামপুরের বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহার আদালতে দীর্ঘদিন বয়কট চালিয়েছিলেন সেখানকার আইনজীবীরা। ফলে ওই আদালতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। সেখানেও আইনজীবীদের অভিযোগ ছিল, ওই বিচারক আইনজীবীদের একাংশের সঙ্গে যথাযথ আচরণ করছেন না। পরে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপে দুই প্রবীণ বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি নিশীথা মাত্রের মধ্যস্থতায় অচলাবস্থা কাটে।

কিন্তু একই ধরনের অভিযোগে বৃহস্পতিবার এজলাস বয়কট শুরু হয়ে যায় হাইকোর্টেই। বয়কটের প্রথম দিনে বিচারপতি গুপ্তের আদালতে কোনও আইনজীবী মামলা লড়েননি। বিচারপতি গুপ্ত তাঁর কোর্ট অফিসারকে তালিকা ধরে নির্ধারিত মামলাগুলি পরপর তোলার নির্দেশ দেন। দু’-দু’বার মামলাগুলির আবেদনকারী ও আইনজীবীদের ডাকা হয়। কিন্তু কোনও আইনজীবী হাজির হননি। বিচারপতি গুপ্ত এবং তাঁর ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি শিবসাধন সাধু বেলা সাড়ে ১১টায় এজলাস থেকে নেমে যান।

এ দিনও একই প্রক্রিয়ায় পরপর মামলাগুলি তোলা হচ্ছিল। একটি মামলা উঠলে দেখা যায়, প্রবাসী চিকিৎসক কুণালবাবু আদালতকে জানাচ্ছেন, মামলাটির আবেদনকারী তিনি। কিন্তু তাঁর আইনজীবী হাজির নেই। তাই তিনি নিজেই নিজের মামলার শুনানিতে যোগ দিতে চান।

বিচারপতি গুপ্ত জানান, আইনজীবীরা তাঁর আদালত বয়কট করেছেন। তাঁরা ধর্মঘট করছেন। ভিন্‌ রাজ্যে বা এ রাজ্যেও যখন ধর্মঘট হয়, সকলে তাতে যোগ দেন না। কলকাতা হাইকোর্টে তাঁর ডিভিশন বেঞ্চকেও সব আইনজীবী বয়কট করছেন না। আইনজীবীদের যে-অংশটি বয়কট করছেন, তাঁদের কায়েমি স্বার্থ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি।

কুণালবাবু আদালতে আবেদন জানান, তিনি বাইরে থাকেন। এখানে বয়কট যদি চলতেই থাকে, তাঁকে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি দায়ের করার অনুমতি দিক ডিভিশন বেঞ্চ।

বিচারপতি গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ ওই চিকিৎসককে সেই অনুমতি দেয়। তার পরে তালিকাভুক্ত সব মামলা শুনানির জন্য ডেকে দুই বিচারপতিই এজলাস থেকে নেমে যান।

lawyer litigants high court self pleading lawyer strike lawyer absent
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy