Advertisement
০৫ মে ২০২৪

এখন অবিশ্বাসেই ভরসা জওয়ানের স্ত্রী অঞ্জলির

মায়ের ডাক শুনে লাফাতে লাফাতে ছুটে এসেছিল ফ্রক পরা একরত্তি মেয়েটা। ওর নাম অনুভবা। আর মেয়ে কাছে আসতেই বাড়ির উঠোনে দাঁড় করিয়ে রাখা টিভি ক্যামেরার সামনে তাকে টেনে নিয়ে এলেন তার মা। অনুরোধ করলেন, ‘ওর ছবিও তুলুন, ওর বাবা টিভিতে দেখতে পাবে।’’

দার্জিলিঙের বাড়িতে মৃত জওয়ান ভবন তামাঙ্গের স্ত্রী অঞ্জলি ও কন্যা অনুভবা। ছবি: রবিন রাই।

দার্জিলিঙের বাড়িতে মৃত জওয়ান ভবন তামাঙ্গের স্ত্রী অঞ্জলি ও কন্যা অনুভবা। ছবি: রবিন রাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৬
Share: Save:

মায়ের ডাক শুনে লাফাতে লাফাতে ছুটে এসেছিল ফ্রক পরা একরত্তি মেয়েটা। ওর নাম অনুভবা। আর মেয়ে কাছে আসতেই বাড়ির উঠোনে দাঁড় করিয়ে রাখা টিভি ক্যামেরার সামনে তাকে টেনে নিয়ে এলেন তার মা। অনুরোধ করলেন, ‘ওর ছবিও তুলুন, ওর বাবা টিভিতে দেখতে পাবে।’’

কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে সিয়াচেনের তুষার উপত্যকায় ততক্ষণে কফিনে মুড়ে ফেলা হয়েছে অনুভবার বাবার দেহ। শুক্রবার সকালে লাদাখের তুরতুক এলাকায় তুষার ধসে চাপা পড়ে গিয়েছিলেন সেনা জওয়ান ভবন তামাঙ্গ। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। দুপুরে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। এ দিন বিকেলেই সেই খবর পৌঁছে যায় দার্জিলিঙের লপচা চা বাগানের কোটি গোয়ান এলাকার কাঠ আর কংক্রিটের সবজে বাড়িটায়।

‘‘এই তো হোলির দিন সকালে কথা ওর সঙ্গে কথা হল, এমন ভাবে সব শেষ হয়ে যেতে পারে নাকি?’’ শোক জমে অবিশ্বাস ভবনবাবুর স্ত্রী অঞ্জলিদেবীর গলায়। আর সেই অবিশ্বাসেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতে বারবার মেয়েকে টেনে নিয়ে আসছেন টিভি ক্যামেরার সামনে। ছ’বছরের মেয়েকে বলছেন, ‘‘এখানে দাঁড়া, তোর বাবা সিয়াচেন থেকে টিভিতে তোকে দেখবে।’’ কখনও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন সেনা বাহিনীর সেকেন্ড ইলেভেন গোর্খা রেজিমেন্টের হাবিলদার ভবন তামাঙ্গের স্ত্রী অঞ্জলি দেবী। তিরিশ বছর বয়সি জওয়ান ভবন বছর খানেক ধরে লাদাখে রয়েছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। স্ত্রী-মেয়ে ছাড়াও বৃদ্ধ বাবা-মা ভাই-বোনেরা রয়েছেন বাড়িতে। খারাপ মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য সবসময়ে ফোনে সংযোগ পাওয়া যেত না। বুধবার সকালে শেষবার স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন অঞ্জলিদেবী। শুক্রবার সকাল থেকে একাধিকবার চেষ্টার পরে দুপুরের দিকে ফোনে সংযোগ মেলে বলে অঞ্জলি দেবী জানিয়েছেন। সে সময় ভবনের কোনও এক সহকর্মী জানান, পায়ে সামান্য চোট লাগায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বিকেলে সেনা অফিস থেকে ফোন করে সরকারি ভাবে ওই জওয়ানের মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়। তারপর থেকেই বদলে গিয়েছে চা বাগানের কোলে ওই বাড়ির চালচিত্র। শোকে বাকরূদ্ধ ভবনবাবুর মা পুষ্পলতাদেবী। হোলির দিন সকালে কর্মস্থল থেকে স্বামী তাঁকে সর্তক করে দিয়েছিলেন, মেয়ে যেন বেশি রং না খেলে, শরীর খারাপ হবে। ক্রমাগতই ঠোঁট দু’টো নড়ছিল অঞ্জলিদেবীর। ‘‘মেয়েকে আমাকে দেখে রাখতে বলল, নিজে কি আর দেখবে না।’’

এ দিনই তুরতুকে তুষার ধসে নিখোঁজ জওয়ান সুনীল রাইয়ের দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ladakh avalanche
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE