Advertisement
E-Paper

শেষ যাত্রায় বীরভূমের রাজেশ, কফিন পৌঁছতেই ভেঙে পড়ল ভিড়

শুক্রবার খুব সকাল থেকেই ফের ভিড় বাড়তে শুরু করে গ্রামে। রাজেশের দেহ আসার কথা ছিল সকাল সাড়ে সাতটায়। কিন্তু জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পানাগড় সেনা ছাউনি থেকে বের হওয়ার পরে বহু জায়গায় এলাকার মানুষ অপেক্ষা করেছিলেন বীরভূমের এই বীর জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

পাপাই বাগদি 

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২০ ০২:২৬
ভিড়ে ঠাসা পথে বাড়ি থেকে শেষযাত্রায় রাজেশ ওরাং। বেলগড়িয়া গ্রােম শুক্রবার সকালে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

ভিড়ে ঠাসা পথে বাড়ি থেকে শেষযাত্রায় রাজেশ ওরাং। বেলগড়িয়া গ্রােম শুক্রবার সকালে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

হাজার হাজার মানুষের চোখের জলে শেষ বিদায় নিলেন রাজেশ ওরাং। শুক্রবার জনপ্লাবনের মাঝে নিজের গ্রামের মাটিতে, নিজের বাড়ির কাছেই সমাধি দেওয়া হল এই সেনা জওয়ানকে। তাঁর দেহ যখন সমাধি দেওয়া হচ্ছে, তখন চারপাশে স্লোগান উঠল, ‘রাজেশ ওরাং অমর রহে’।

দূর-দূরান্ত থেকে জেলার বীর সন্তানকে একবার চোখের দেখা দেখতে হাজার হাজার মানুষ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভিড় জমিয়েছিলেন মহম্মদবাজারের বেলগড়িয়া গ্রামে। দিনের শেষে তাঁদের ফিরতে হয়েছিল নিরাশ হয়েই। কারণ, রাত পর্যন্ত গ্রামে আসেনি চিনা হামলায় নিহত সেনা জওয়ান রাজেশের মরদেহ। শুক্রবার খুব সকাল থেকেই ফের ভিড় বাড়তে শুরু করে গ্রামে। রাজেশের দেহ আসার কথা ছিল সকাল সাড়ে সাতটায়। কিন্তু জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পানাগড় সেনা ছাউনি থেকে বের হওয়ার পরে বহু জায়গায় এলাকার মানুষ অপেক্ষা করেছিলেন বীরভূমের এই বীর জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। যার কারণে প্রায় দু’ঘন্টা পরে অর্থাৎ সাড়ে ন’টা নাগাদ বেলগড়িয়া পৌঁছয় রাজেশের কফিনবন্দি দেহ।
সামনে দু’টি রাজ্য পুলিশের বাইক, তার পরে পুলিশ ভ্যান এবং সব শেষে সেনাবাহিনীর কনভয়ের পরেই ছিল রাজেশের কফিন নিয়ে সেনা ট্রাক। মানুষের ভিড় তখন ভেঙে পড়েছে সেখানে। অনেকেকেই দেখা গিয়েছে গাছে উঠে দেখতে। সেই ভিড়ে না ছিল করোনা সংক্রমণ রুখতে দূরত্ব-বিধি পালন না ছিল অধিকাংশের মুখে মাস্ক। সকাল থেকেই গ্রামে ছিলেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ-সহ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। প্রথমেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে বানানো মঞ্চে নামানো হয় কফিনবন্দি রাজেশকে। সেখানে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিয়ম মেনে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। একে একে উপস্থিত সরকারি আধিকারিকেরা জাতীয় পতাকায় মোড়া কফিনে মাল্যদান করেন।

এর পরে সেনা জওয়ানরা কফিন কাঁধে তুলে প্যারেড করে নিয়ে যান বাড়িতে। সেখানে প্রায় আধ ঘণ্টা রাখা হয় এবং কফিন খুলে পরিবারকে দেখানো হয় রাজেশের দেহ। আর কেউ স্থির থাকতে পারেননি। কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজেশের মা মমতা ওরাং, বাবা সুভাষ, বোন শকুন্তলা এবং অন্য আত্মীয়-পরিজনেরা। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে একটা সময় জ্ঞান হারান রাজেশের মা ও বোন। পারিবারিক নিয়ম মেনে গঙ্গাজল, তুলসী পাতা, দূর্বাঘাস ও ধান দেওয়া হয় রাজেশকে।

এর পরে রাজেশের কফিন কাঁধে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার-সহ কয়েক জন নিয়ে যান সমাধিস্থলে। সেখানে প্রথমেই রাজ্য পুলিশের পক্ষ ‘গান স্যালুট’ দেওয়া হয়। পরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও তিন বার গুলি চালিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর রাজেশের মৃতদেহ কফিন বন্দি করেই সমাধি দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের ভিড়ে তখন তিল ধারণেরও জায়গা নেই। ফের উঠল স্লোগান, ‘রাজেশ ওরাং অমর রহে’। সমাধির পরে রাজেশের মায়ের হাতে সেনাবাহিনীদর পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয় রাজেশের টুপি, বেল্ট, পোশাক ও ব্যাচ। সঙ্গে কফিনের গা জড়িয়ে থাকা জাতীয় পতাকা। এ ছাড়াও তাঁর হাতে সেনার তরফে তুলে দেওয়া হয় একটি বড় অঙ্কের চেক। সব শেষে ফিরে যান সেনা জওয়ানেরা।

বিকেল নেমেছে। সারা দিন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ক্লান্ত পা-গুলি ঘরমুখো। সুনসান বেলগড়িয়া থেকে গেল রাজেশ ওরাংয়ের স্মৃতি বুকে নিয়ে।

India China Ladakh Rajesh Orang Martyr
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy