Advertisement
E-Paper

সৌজন্যের মধ্যেই প্রশ্নের খোঁচা অমিতকে

প্রশ্নটা করলেন জাপানের দূতাবাসের এক কূটনীতিক। বলুন তো, আমরা জাপানের শিল্পপতিদের কী বলে পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি করতে রাজি করাব? শিল্পের সহায়ক কী নীতি রয়েছে? নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাবতীয় ছাড়পত্র মিলবে কি?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৮

প্রশ্নটা করলেন জাপানের দূতাবাসের এক কূটনীতিক। বলুন তো, আমরা জাপানের শিল্পপতিদের কী বলে পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি করতে রাজি করাব? শিল্পের সহায়ক কী নীতি রয়েছে? নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাবতীয় ছাড়পত্র মিলবে কি?

অমিত মিত্র যুক্তি দিলেন, শিল্প-সহায়ক নীতি রয়েছে। দরকারে সেই নীতিতে রদবদলও হতে পারে। ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেই সময়ের মধ্যে সরকারের সাড়া না মিললে ছাড়পত্র মঞ্জুর বলে ধরে নেওয়া যাবে। শিল্পের সাহায্যে সরকার কতটা সক্রিয়, তা বোঝাতে অমিত উদাহরণ দিলেন, হলদিয়ায় জাপানি সংস্থা মিৎসুবিশি কেমিক্যালস বিনিয়োগ করেছে। তার সমস্যা মেটাতে প্রায় দশ বছরের কর ছাড় দিয়েছে রাজ্য সরকার।

জাপানের কূটনীতিক ধন্যবাদ জানালেন। কিন্তু মিৎসুবিশি যে এখনও সমস্যায় রয়েছে, তা মনে করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘আশা করি, মিৎসুবিশির অন্যান্য সমস্যার দিকও আপনারা দেখবেন!’’

সমস্যা যে রয়েছে এবং সব কিছুর পুরোপুরি সমাধান এখনও করা যায়নি— এ কথা প্রশাসনের অনেকেই মানেন। এই তালিকায় একদম সামনের সারিতে রয়েছে জমি। ক্ষমতার আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, বেসরকারি শিল্পের জন্য তাঁরা জমি অধিগ্রহণ করবেন না। সেই নীতিতে এখনও অনড় সরকার। তবে এখন সরকারের বক্তব্য, বেসরকারি সংস্থা জমি কিনলে তাকে সাহায্য করা হবে। এর পাশাপাশি ১৪ ওয়াই ধারা যাতে বাধা না হয়, সে জন্য জমির ঊর্ধ্বসীমায় ছাড় দিতে ‘কেস টু কেস’ বিচার করার কথাও বলেছে সরকার। কিন্তু শিল্পপতিদের দাবি, জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনের মাধ্যমে এই নিয়ন্ত্রণই বা সরকার কেন নিজের হাতে রাখবে? বরং অন্য রাজ্যের মতো ধারাটি তুলে দিক তারা। তা হলেও জমি কেনার ব্যাপারে কিছুটা সুরাহা হবে। লগ্নি আসবে।

বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসছে। এই অবস্থায় তৃণমূল সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন, নিজেদের শিল্পবন্ধু ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে না পারলে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাই, নতুন জমানায় শিল্পের সহায়ক নীতি নেওয়া হয়েছে, এটাও দেখাতে চাইছেন মমতা-অমিত জুটি। জানুয়ারি মাসে, বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে কলকাতায় ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’। তাকে সামনে রেখে রাজ্যে শিল্পের ছবিটা কতটা ‘উজ্জ্বল’, সেটাই আপাতত প্রমাণ করতে চাইছেন তাঁরা। আজ তার প্রস্তুতি হিসেবেই দিল্লিতে ‘ইনভেস্টমেন্ট রোড শো’ করতে এসে শিল্পপতিদের ‘লাল কার্পেট’ পেতে রাজ্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র।

নতুন লগ্নিকারী হয়তো আসছেন না। কিন্তু আগেই যাঁরা রাজ্যে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের ‘সুখকর অভিজ্ঞতা’ শোনানোর জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজন মিত্তল, সিদ্ধার্থ বিড়লা, জ্যোৎস্না সুরি, ওয়াই কে মোদী, হর্ষ নেওটিয়া, পুনীত ডালমিয়া, রাজ্যবর্ধন কানোরিয়া— সৌজন্যের খাতিরে সকলেই প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন মমতার সরকারকে। এক সুরে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি করে কাউকেই আফশোস করতে হয়নি।

সব থেকে বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছে অবশ্যই মমতার বন্‌ধ-ধর্মঘট বিরোধী নীতি। গত সপ্তাহে শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটেরও কড়া সমালোচনা করেছিলেন। ধর্মঘট ব্যর্থ করতে কোনও চেষ্টারও কসুর করেননি তিনি। পশ্চিমবঙ্গে যে ভাবে ধর্মঘট বা বন্‌ধ একেবার কমে এসেছে, তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন সকলে।

তবে সৌজন্য আর প্রশংসাই শুধু ছিল না। প্রশ্নও উঠেছে। যেমন শিল্প নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাপানের কূটনীতিক। তেমনই কানোরিয়া কেমিক্যালস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার রাজ্যবর্ধন কানোরিয়া অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যুতের দাম নিয়ে। তাঁর যুক্তি, রাজ্যে তাঁর চটকলের জন্য প্রতি ইউনিট ৮ টাকা দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। যা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। যেখানে রাজ্যেই কয়লার খনি রয়েছে, সেখানে বিদ্যুতের দাম এত বেশি হওয়ার কোনও যৌক্তিকতাই নেই। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে আরও প্রতিযোগিতা এলে বিদ্যুতের দামও কমতে পারে। অমিতবাবু নানা রকম যুক্তি দিয়েও তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি।

ভারতী এন্টারপ্রাইজের ভাইস চেয়ারম্যান তথা এমডি রাজন মিত্তল আবার অনুযোগ করেছেন, কারখানা তৈরি করলে অন্য রাজ্যে কোনও শিল্পপতি যে কদর পান, পরিষেবা ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে ১০ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করেও তিনি তা পান না। তাঁর যুক্তি, ‘‘রাজ্য সরকার স্মার্ট সিটি-র পরিকল্পনা নিয়েছে ঠিকই। কিন্তু অপটিকাল ফাইবার বা ডিজিটাল সংযোগ ছাড়া স্মার্ট সিটি হবে না।’’

বণিকসভা ফিকি ও পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের অনুষ্ঠানে রাজ্যকে তুলে ধরার পাশাপাশি পেপসিকো, অ্যামচ্যাম (আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন ইন্ডিয়া), কাজারিয়া সেরামিক্স-এর মতো কিছু সংস্থার শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানেও অমিত আশ্বাস দিয়েছেন, রাজ্যে বিনিয়োগ করলে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন অমিত। যুক্তি দিয়েছেন, মমতার ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর সরকার গরিবদের বন্ধু। কিন্তু তার সঙ্গে শিল্পবন্ধু হওয়ার কোনও ফারাক নেই।

দিনের শেষে পাওনা? ভারত হোটেলসের সিএমডি জ্যোৎস্না সুরি নিজেই বলেন, তিনি কলকাতায় ললিত গ্রেট ইস্টার্নের পর শান্তিনিকেতনের ‘থিম সিটি’-তে লগ্নিতে আগ্রহী। শিল্পোন্নয়ন নিগম সূত্রের খবর, অশোক কাজারিয়া রাজ্যে সেরামিক টাইলস-এর কারখানা করতে আগ্রহী। অ্যামচ্যাম-এর সঙ্গে অমিতবাবুর তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে লগ্নি নিয়ে কথা হয়েছে। অ্যামচ্যাম-এর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর শিবানী রায়না বলেন, ‘‘কলকাতায় শিল্প সম্মেলনে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। আমরা তা খতিয়ে দেখছি।’’ অমিতবাবুর দাবি, পেপসিকো রাজ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বড় মাপের বিনিয়োগ করেছে। এখন কারখানার সম্প্রসারণ করতে চাইছে। জমি? সমস্যা হবে না। শিল্পোন্নয়ন নিগম জমি দিতে রাজি। সিঙ্গুর-অধ্যায়কে অতীত প্রমাণ করতে টাটা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার রাজ্যে বিনিয়োগের খবরও শুনিয়েছেন অমিত মিত্র।

বণিকসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘একটা বড় মাপের বিনিয়োগ দরকার পশ্চিমবঙ্গে। শুধু টাকার অঙ্কে নয়, প্রভাবের মাপকাঠিতেও। তা হলেই তার দেখাদেখি আরও বিনিয়োগকারী রাজ্যে উৎসাহ দেখাবেন।’’ বিধানসভা ভোটের আগে মমতা-অমিত তার সন্ধান পান কি না, সেটাই দেখার।

industrialist feel good factor industrialists question industrialist dissatisfied amit mitra state investment policy state industrial policy land acquisition policy land acquisition ceiling
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy