Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Baruipur Central Jail

বন্দিদের ইটবৃষ্টি বারুইপুর জেলে

বারুইপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার।—ফাইল চিত্র।

বারুইপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ০৪:০৯
Share: Save:

বন্দি-বিক্ষোভের জেরে সোমবার উত্তপ্ত হল বারুইপুর জেল। বিকেল থেকে শুরু হয় ইটবৃষ্টি । জখম হন জেল অফিসার। হাজির হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী।

জেল সূত্রের একাংশের দাবি, মোবাইল উদ্ধারের জন্য সোমবার জেলের বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশি চলাকালীন কয়েকটি মোবাইল উদ্ধার করেন কারা কর্মী-অফিসারেরা। অভিযোগ, মোবাইল উদ্ধারে বন্দিদের মারধর করেন জেল কর্তৃপক্ষের দু-একজন পদাধিকারী। জেলের একটি সূত্রের দাবি, এ নিয়ে গোলমালের সূত্রপাত হলে বিকেল থেকে বন্দিদের বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই পরিস্থিতিতে বন্দিদের বোঝানোর কাজ শুরু করেন জেলের কর্মী-অফিসারেরা। কিন্তু তাতে কাজের কাজ হয়নি। বন্দিরা তাদের অবস্থানে অনড় থাকেন। একসময় বন্দিদের তরফে ইট ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। সেই ইটের আঘাতে জেলের এক পদস্থ অফিসার মাথা ফাটে। আরেকজন কারা কর্মীও আহত হয়েছেন বলে খবর। আহতদের বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত শনিবার হাওড়া জেলা জেলে ‘কাটমানি’র অভিযোগে সরব হয়েছিলেন এক বন্দি। এ দিন সেই একই অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে বারুইপুর জেলও। বন্দি ঘনিষ্ঠদের আরেকটি অংশের দাবি, জেলে ‘কাটমানি’র পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তারই প্রতিবাদ জানিয়েছেন বন্দিরা। কারা কর্তৃপক্ষ এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, মোবাইল উদ্ধারে তল্লাশি চলায় অনেক বন্দি সমস্যায় পড়েছেন। সে কারণে পরিকল্পিতভাবে সংশোধনাগারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে অশান্ত করার চেষ্টা হয়েছে।

এদিনের বিক্ষোভ সামলাতে বারুইপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও তা থামাতে পুলিশকর্মীদের বেগ পেতে হয়। যার প্রেক্ষিতে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আরও দু’টি থানার পুলিশ পৌঁছয়। বারুইপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসুর পাশাপাশি ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান। জেল সূত্রে দাবি, ঘণ্টা চারেক পরে বিক্ষোভে রাশ টানা গেলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত গড়িয়ে যায়। বন্দিদের বিক্ষোভের জেরে সেখানে আটকে পড়েন জেলের মধ্যে নির্মাণ কাজে যুক্ত থাকা কর্মীরা।

এর আগেও বারুইপুর জেলে গোলমাল হয়েছে। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি বারুইপুর জেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনের এক মাসের মাথাতেই দু’দল বন্দির মধ্যে গোলমাল হয়। তারপরে জানুয়ারির শেষে ফের দু’দল বন্দিদের মারামারি হয়। জেলের আলো-পাখা-আসবাবপত্র ভাঙচুর হয়। সূত্রের খবর, তারপর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার টংতলায় অবস্থিত জেলের পরিস্থিতি শান্তই ছিল।

এ দিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে রাতে বারুইপুর সংশোধনাগারে যান ডিজি অরুণ গুপ্ত। সংশোধনাগারে এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে বারুইপুরের পুলিশ সুপার রশিদ মুনির জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা জেল সুপারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভ ছাড়া তেমন কিছু ঘটেনি। গন্ডগোলের মাত্রা নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে যে সব কথা শোনা যাচ্ছিল তা ভিত্তিহীন বলা হয়েছে।

পুলিশের দাবি, গন্ডগোলকে কেন্দ্র করে জেল ভাঙা, গুলিচালনা বা দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ কিছু হয়নি। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বন্দিদের দাবিদাওয়া নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন। গন্ডগোল নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা পুলিশের একটি দল‌ও সেখানে মোতায়েন রয়েছে।

রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস জানিয়েছেন, বারুইপুর সংশোধনাগারের গন্ডগোল সম্পর্কে তিনি অবহিত। ঠিক কী ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। রাতে বারুইপুর সংশোধনাগারের উদ্দেশে রওনা দেন কারামন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE