রাঙা: প্রেম দিবস উপলক্ষে গোলাপের পসরা। নিউ মার্কেটে। —নিজস্ব চিত্র ।
লিন্ডসে স্ট্রিটের চেনা বিপণি অথবা এলগিন রোডের শপিং মলের নামী দোকানের চেহারা দেখে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
এমনটা ভাবার কারণ নেই যে কলকাতার কংক্রিট-বুক থেকে যাবতীয় প্রেম উবে গিয়েছে। গোলাপ বা কার্ড বিক্রি কম হলেও ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ উপলক্ষে দামি ফোন, ল্যাপটপ, আইপ্যাডের মতো বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম বিকোচ্ছে হু হু করে।
গড়িয়াহাটের নামী ডিজিটাল বিপণি জুড়ে নানা লোভনীয় অফারের ছড়াছড়ি। কর্মচারীরা বলছিলেন, স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস বা বড়দিনের ছুটির মতোই ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ জুড়েও এখন তাঁদের ‘বিগ ডে’। অন্য দিন এক কোটি টাকার বিক্রিবাটা হলে, এমন দিনে হেসেখেলে ৩০-৪০ লক্ষ টাকা বেশি হবে।
তবে নিউ মার্কেটের ফুলের বাজারের আদি যুগের বিক্রেতা গৌরহরি দাস, গৌতম দাসদের অভিজ্ঞতা ফোনের দোকানের সঙ্গে মিলবে না। তাঁদের আফশোস, গত বার নোটবন্দিতে খানিক ঘা খাওয়ার পরে এ বার বাজার চাঙ্গা হয়েছে ভেবে পসরা সাজিয়েছিলেন! সাধারণ দিনের তুলনায় দশগুণ বেশি গোলাপ মজুত রেখে এখন হাত কামড়াতে হচ্ছে। বাড়তি গোলাপের সিকিভাগও বিক্রি হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: একই দিনে ভোলা-ভ্যালেন্টাইন
তবে চিরকেলে গোলাপের মর্ম প্রেমিক-প্রেমিকারা একেবারে ভুলতে বসেছেন তাও বলা যাবে না। এ বার ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’-তে রাজ্য সরকার চাষির মাঠের গোলাপ গ্রাহকের হাতে তুলে দিতে উদ্যোগী। আজ, বুধবার গ্লোব নার্সারি সঙ্গে যৌথ ভাবে উদ্যান পালন বিভাগ পাঁচটি মোবাইল ভ্যানে ‘মিনিপল’ গোলাপ ফেরি করবে কলকাতা-সহ উত্তর শহরতলিতে। কলেজ স্ট্রিট, কফি হাউস, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সিটি সেন্টার, ইকো পার্ক, নন্দনে গোলাপ ও নানা ফুলের তৈরি তোড়া বিক্রি করা হবে। শিয়ালদহ, কলেজ স্ট্রিট ও নিউ মার্কেটে গ্লোব নার্সারির তিনটি বিপনিতেও বাজার মুল্যে বিক্রি করা হবে গোলাপ। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী আবদুর রেজ্জাক মোল্লা বলেন, ‘‘এই সময় গোলাপের দাম আকাশছোঁয়া থাকে, কিন্তু চাষির হাতে টাকা আসে না। তাই এই উদ্যোগ।’’ দক্ষিণ ভারত ও মহারাষ্ট্র থেকে আসা গোলাপও বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
কিছুটা মন্দা কার্ডের বাজারেও। কেন এই হাল? লিন্ডসে স্ট্রিটের কার্ড বিপণির প্রবীণ কর্তা মধূসূদন সাহাও বলছেন, ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা দামের উপহার, স্মারক যা-ও বা বিকোচ্ছে, কম দামি কার্ডের শুভেচ্ছা কার্যত অপ্রাসঙ্গিক। কার্ড কারবারিদের কারও কারও আবার ব্যাখ্যা, কিছু স্কুলে পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্য বার তা আর ক’দিন বাদে শুরু হয়। কারও কারও ভ্যালেন্টাইন-বিমুখতার সেটাও কারণ হতে পারে।
তবে দোকানের ভিড়টাকেই কলকাতার ভ্যালেন্টাইন-আবেগের মাপকাঠি ধরলেও ডাহা ভুল হবে। অনলাইন কেনাবেচার পসার ইদানীং জাঁকিয়ে বসেছে। উপহারের তালিকায় স্মার্টফোন, বাহারি ঘড়ি থেকে হিরের গয়না— বাদ নেই কিছুই। বেঙ্গালুরু থেকে একটি অনলাইন বিপণির সিনিয়র ডিরেক্টর স্মৃতি রবিচন্দ্রন বললেন, ‘‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র উপহার কেনার উন্মাদনায় দেশের প্রথম পাঁচটি শহরের মধ্যে রয়েছে কলকাতাও।’’ ঘরে ঘরে খাবার সরবরাহের সর্বভারতীয় একটি অ্যাপের তরফেও দাবি, এ দিনে চকলেট, পিৎজা বা রেড ভেলভেট কেক অর্ডার করার প্রবণতা কয়েক বছর ধরেই ৫৫-৫৮ শতাংশ বেশি।
অফার দেওয়ায় পিছিয়ে নেই গয়নার দোকান, রেস্তোরাঁ মায় বাঙালি মিষ্টির দোকানও। ভবানীপুরের এক মিষ্টির দোকান বানিয়েছে হার্টের আকারের হোয়াইট চকলেট ভরপুর সন্দেশ। রেস্তোরাঁর মেনুতেও জুটিতে চাখার রকমারি আকর্ষণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy