মাছে-ভাতে বাঙালির পাতে ইলিশের নানা পদ বরাবরই অন্য মাত্রা যোগ করে। সে ইলিশ ভাজা, ভাপা, ঝোল, টক যাই হোক না কেন। কিন্তু এ বার কলকাতা হোক বা জেলার বাজার, মাঝারি থেকে বড় মাপের ইলিশের জোগান না-থাকায় সেই রসনাতৃপ্তিতে বঞ্চিত বাঙালি।
ভোজন রসিক থেকে মাছ ব্যবসায়ী সকলেরই আশা ছিল বর্ষার মরসুমে মিলবে ভাল মানের ইলিশ। মরসুমের শুরুতে ঝিরঝিরে বৃষ্টি সঙ্গে পূবালি হাওয়ার জেরে রুপোলি শস্যের জোগানেও ঘাটতি হবে না বলেই ভেবেছিলেন মৎস্যজীবীরাও। কিন্তু শেষ কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিপাত সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে বলেই দাবি দিঘা, ডায়মন্ডহারবার, নামখানা, কাকদ্বীপ, রায়দিঘির মৎস্যজীবী ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের। তবে মাঝারি ও বড় ইলিশ না মিললেও বাজার ছেয়ে গিয়েছে ছোট ইলিশে। তার দামও আকাশ ছোঁয়া।
তবে শুধু ইলিশ নয়। ভারী বর্ষায় বাজারে অন্য মাছেরও জোগান কম এবং বাইরের রাজ্য থেকে আমদানি হওয়া মাছের দামও বেশি বলেই জানাচ্ছেন কলকাতা ও পাশ্ববর্তী জেলার বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা। বাংলার সমুদ্রে এখন পশ্চিমী হাওয়া বইছে। জলের টানও আরবসাগরের দিকে। ফলে মাঝারি ও বড় ইলিশ চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ, মায়ানমার, তাইল্যান্ডের দিকে।
পাশাপাশি সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে না পারায় মিলছে না অন্যান্য মাছও। আবার প্রবল বৃষ্টিপাতে ওড়িশা,
অন্ধ্রপ্রদেশ থেকেও মাছ আমদানি হচ্ছে না। পাতিপুকুরের মাছ ব্যবসায়ী উত্তম হাজরা বলেন, ‘‘অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আগে তিন দিনে গাড়ি আসতো, এখন ছয় দিনে আসছে।’’
পাতিপুকুর, মানিকতলা, গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট-সহ প্রায় সব বাজারেই এখন ২০০ গ্রাম থেকে খুব বেশি হলে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মিলছে। যেমন পাতিপুকুর বাজারে ২০০ গ্রামের ইলিশ ২৫০ টাকা, ৪০০ ও ৫০০ গ্রামের দাম ৭০০ টাকা আর ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। আবার মানিকতলা বাজারে ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ইলিশের দাম ৬০০ থেকে ৮০০টাকা। আর কখনও সখনও এক বা দেড় কেজির ইলিশ মিললেও তার দাম ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
ডায়মন্ডহারবারের পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী বিজয় সিংহ বলেন, ‘‘যে গুটিকয়েক বড় ইলিশ বাজারে মিলছে সেগুলি মায়ানমার এবং গুজরাটের নর্মদা নদীর।’’ কয়েক দিন আগে পর্যন্ত ছোট ইলিশ মিললেও তা-ও আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলেই জানালেন হাওড়া পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদও।
তবে মৎস্যজীবীদের ছোট ইলিশ ধরে নেওয়ার প্রবণতার ফলেও বাজারে বড় মাছের জোগান কম বলেই মনে করেন মানিকতলা বাজারের ব্যবসায়ী প্রদীপ মণ্ডল। মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন স্রোতের কারণে এগোনো যাচ্ছে না গভীর সমুদ্রে। শেষ সাত দিন কোনও ট্রলারই সমুদ্রে যায়নি। দিঘার মৎস্য ব্যবসায়ী বীরু হুসুন বরাই বলেন, ‘‘শঙ্করপুর, দিঘা, রসুলপুর মিলিয়ে প্রায় এক হাজার ট্রলার রয়েছে। সকলেই তো বসে রয়েছেন। তা হলে মাছ আসবে কোথা থেকে।’’
মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, কাকদ্বীপ নামখানায় ট্রলার নামতে না-পারায় পমফ্রেট, ভোলা জাতীয় সামুদ্রিক মাছও ধরা যাচ্ছে না। আবার ওড়িশায় প্রবল বৃষ্টিতে সেখান থেকে চিংড়ির জোগানও কমেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আসা রুই, কাতলার দামও অন্য সময়ের থেকে প্রায় ৩০-৪০ টাকা বেশি। তবে এই সময়ে কোনও অনুষ্ঠান না থাকায় নাগপুর, মুম্বই থেকে আসা পার্শে, পাবদার দাম অন্য সময়ের থেকে তুলনায় কম বলেই দাবি ব্যবসায়ীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy