Advertisement
১৬ মে ২০২৪

বাগান, নিগমের সংগঠন নিয়ে কোন্দল তৃণমূলের

তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র কর্তৃত্ব নিয়ে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় আর দোলা সেনে’র ‘লড়াই’ এ বার ছড়িয়ে পড়ল উত্তরবঙ্গেও। চা বাগিচার শ্রমিক সংগঠনের পর উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের শ্রমিক, কর্মচারী সংগঠন নিয়ে তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতানেত্রীর কোন্দল শুরু হয়েছে।

এই সেই চিঠি।

এই সেই চিঠি।

কৌশিক চৌধুরী l
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২২
Share: Save:

তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র কর্তৃত্ব নিয়ে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় আর দোলা সেনে’র ‘লড়াই’ এ বার ছড়িয়ে পড়ল উত্তরবঙ্গেও। চা বাগিচার শ্রমিক সংগঠনের পর উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের শ্রমিক, কর্মচারী সংগঠন নিয়ে তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতানেত্রীর কোন্দল শুরু হয়েছে। লড়াই শুধু বাগবিতন্ডা বা সংগঠনের অন্দরে থেমে থাকেনি, তৃণমূল বিধায়ক তথা আইএনটিটিইউসি-র রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি শোভনদেববাবুর এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে তৃণমূলের দোলাদেবীর নেতৃত্বাধীন সংগঠনটি বৈধ নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আগামী দিনে তাঁকে যাতে মান্যতা না দেওয়া হয়, সেই কথাও চিঠিতে তৃণমূলের ওই নেতা উল্লেখ করেছেন। চিঠির কপি নিগমের প্রত্যেক বোর্ড সদস্যকেও পাঠানো হয়েছে।

নিগম সূত্রের খবর, গত ১১ জানুয়ারি শোভদেববাবু নিগমের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীকে ওই চিঠি দিয়েছেন। তিনি যে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ ড্রাইভার্স এবং তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ের কথা বলেছেন সেটির সভানেত্রী দোলাদেবী। সেখানে শোভনদেববাবুর এনবিএসটিসি-র তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারী সংগঠনই নিগমের একমাত্র তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারী সংগঠন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এনবিএসটিসি’র অন্দরে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। শাসক দলের কোন সংগঠন নিগমে আগামী দিনে কাজ করবে তা নিয়ে সংগঠনের সদস্যদের মধ্যেই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি ছড়িয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যেও। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান সৌরভবাবু অবশ্য এখনও চিঠিটি দেখেননি বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও সংগঠনের স্বীকৃতির বিষয়টি নিগমের প্রশাসনিক বিষয়। অফিসারেরা সাধারণত এ সব দেখেন। তবে আমি এখনও এই ধরনের চিঠি হাতে পায়নি। তা পেলে কী জন্য এ সব বলা হচ্ছে তা দেখব।’’

তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেববাবু অবশ্য পরিষ্কার ভাবে দোলীদেবীদের সংগঠন বৈধ নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আম চিঠি দিয়েছি। ওঁরা তা পেয়ে যাবেন। তবে যে সংগঠন কাজ করছে সেটি বৈধ নয়। অন্য কারও রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে তৃণমূলের সংগঠন করা যায় না।’’ তিনি জানান, ২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তনের পর জেলায় জেলায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনে ভাঙন ধরে। বাম মনোভাবাপন্ন নেতানেত্রীরা দলে এসেছেন। এনবিএসটিসি-র ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কোচবিহারের নিগমের সদর দফতর থাকায় সেখানে ফরওয়ার্ড ব্লকের একসময় একটি সংগঠন ছিল। পরে বাম শ্রমিক নেতারা তৃণমূলে আসেন। তাঁরা তৃণমূলের নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। কিন্তু সেটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর বাম। এ ভাবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ধার নিয়ে তৃণমূলের কোনও সংগঠন চলতে পারে না।

এনবিএসটিসিতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৩৮৪২ জন কর্মী, অফিসার আছেন। ২০১১ সালের আগে নিগমে সিটু এবং ইনটাকের শ্রমিক সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। সেই তুলনায় তৃণমূলের সংগঠন প্রথম দিকে শক্তিশালী ছিল না। শোভনদেববাবুর সংগঠন কাজ শুরু করলেও তার সদস্য সংখ্যা কম ছিল। পরবর্তীতে তৃণমূল ক্ষমতায় আসতেই নিগমের মুখ্য সংগঠন হিসাবে সামনে আসে তৃণমূলের দোলাদেবীর সংগঠন। সেখানে শোভনদেববাবুর সংগঠনটির লোকজন কম বলাই চলে। বর্তমানেও দোলাদেবীকে সভানেত্রী রেখে তৃণমূলের প্রতিটি জেলা সভাপতিদের সহ সভাপতি করে নিগমের ডিভিশন ধরে ধরে সংগঠনটি রয়েছে। তৃণমূলের সংগঠন বলতে কর্মীরা এই সংগঠনটিকেই বোঝেন। সম্প্রতি তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠন নিয়েও একই সমস্যা ছিল। এই নেতানেত্রীরা নিজেদের মত করে আলাদা করে সংগঠন চালাচ্ছিলেন। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে একটি মাত্র সংগঠন তৈরি হয়।

দোলীদেবী শোভনদেববাবুর লেখা চিঠিকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ। তাঁরা কথায়, ‘‘আমি বহু সংগঠন দেখাশুনো করি। ১-২টি নয়। আর সব সংগঠনই তৃণমূলের— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে চলে। তাই কে কী বলল তা নিয়ে আমরা ভাবি না। ’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC internal clash nb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE