E-Paper

পড়শি রাজ্য থেকে কি ভাড়াটে খুনি

গাড়ি ফেলে রেখে কী ভাবে, কোন পথে খুনিরা চম্পট দিল, সোমবার রাত পর্যন্ত তার হদিস তাঁরা পেয়েছেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:০৮
বর্ধমান মেডিক্যাল থেকে ব্রতীন মুখোপাধ্যায়কে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী

বর্ধমান মেডিক্যাল থেকে ব্রতীন মুখোপাধ্যায়কে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী

আততায়ীরা কি তবে গাড়ি ফেলে রেখে পড়শি কোনও রাজ্যে পালিয়েছে? পুলিশ মহলে এই প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে এখন। এর বড় কারণ, কয়লা অঞ্চলে খুন-জখমের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে বিহার বা ঝাড়খণ্ড থেকে পেশাদার খুনি ভাড়া করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। রাজেশ ওরফে রাজু ঝায়ের খুনের ক্ষেত্রেও যে ভাবে পুরো কাজটি সারা হয়েছে, তাতে ভাড়াটে খুনির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু পুলিশ প্রকাশ্যে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করছেন না। উল্টে, গাড়ি ফেলে রেখে কী ভাবে, কোন পথে খুনিরা চম্পট দিল, সোমবার রাত পর্যন্ত তার হদিস তাঁরা পেয়েছেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গিয়েছে।

এরই মধ্যে, নতুন করে ধন্দ তৈরি হয়েছে রাজুর সঙ্গী ব্রতীন মুখোপাধ্যায় এবং এসইউভি চালক নুর হোসেনের বয়ানের ফারাক নিয়ে। এসইউভি-তে গরুর কারবারি আব্দুল লতিফও ছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন নুর হোসেন। কিন্তু ব্রতীন লতিফের উপস্থিতি স্বীকার করেননি, এমনকি তাঁকে চেনেনই না বলে দাবি করেছেন। নুর ও ব্রতীনকে এক সঙ্গে বসিয়ে ঘণ্টা পাঁচেক জেরা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। দু’জনের বয়ান শুনে দুই আততায়ীর ছবি আঁকানো হয়। তবে জেরার পরে জখম ব্রতীন এবং নুর হোসেনকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের দাবি, সোমবার বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে ব্রতীন জানান, তিনি আব্দুল লতিফকে চেনেন না। রাজুর সঙ্গে থাকলেও, তাঁর ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। যদিও পুলিশ জেনেছে, লতিফের ওই সাদা এসইউভি-তে আগেও কয়েক বার চড়েছেন রাজু। নানা সময়ে গাড়িতে লতিফের সঙ্গে ব্রতীনও ছিলেন। লতিফের গাড়ির চালককে শুক্রবার রাতে দুর্গাপুরে আসার কথা জানিয়ে ফোন করেন ব্রতীনই। তবু কেন লতিফকে চিনতে ব্রতীন অস্বীকার করছেন? পুলিশ জানায়, তদন্তের স্বার্থে ব্রতীনকে তো বটেই, নুর হোসেনকেও ফের যে কোনও সময়ে ডাকা হবে। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, “তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

পুলিশ জানায়, আততায়ীদের গাড়িতে চালক-সহ চার জন ছিল। তাদের মধ্যে এক জনের মুখে মাস্ক ছিল, অন্য দু’জনের মুখ খোলা। ঘটনার সময়ে শুধু চালকই গাড়িতে বসেছিল। পুলিশের দাবি, জায়গাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় সিসি ক্যামেরা ফুটেজে আততায়ীদের ছবি স্পষ্ট নয়। এক্সপ্রেসওয়েতে পালশিট টোলপ্লাজ়া ও নাকাবন্দি এড়াতে তারা গাড়ি নিয়ে শক্তিগড়ের রাস্তায় ঢুকে পড়ে। কিন্তু থানার পরে আর রাস্তা না দেখে ঘুরে কিছুটা গিয়ে রাস্তার ধারে নীল গাড়িটি ফেলে রেখে পালায় তারা।

প্রশ্ন উঠেছে, ঘটনাস্থলে আরও দু’টি গাড়ির উপস্থিতি নিয়ে। পুলিশ সূত্রের খবর, সিসিটিভি ফুটেজ়ে একটি গাড়িকে রাজুদের গাড়ির কিছুটা আগে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। আবার, আততায়ীদের গাড়ির পিছনেও আর একটি গাড়ি দেখা গিয়েছে। সেটিতেই আততায়ীরা পরে চম্পট দেয় কি না, প্রশ্ন উঠেছে। পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় গাড়িটির নম্বরপ্লেট অনুযায়ী, সেটির মালিক কলকাতা সংলগ্ন এলাকার এক বাসিন্দা। তবে ঘটনার সঙ্গে এই গাড়ি দু’টির যোগ নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত নয়।

পুলিশের দাবি, আততায়ীরা পেশাদার। তাদের গাড়িটি থেকে দু’টি ৭ এমএম পিস্তল, ১২ রাউন্ড কার্তুজ মিলেছে। গোটা পাঁচেক ভুয়ো নম্বরপ্লেটও ছিল। যেখানে গাড়িটি মেলে, সেখান থেকে প্রায় ৭০০ মিটারের মধ্যে শক্তিগড় স্টেশন। আততায়ীরা ট্রেনে পালিয়ে যেতে পারে। তদন্তকারীদের ধারণা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ বা হরিয়ানা থেকে আসতে পারে তারা। পুলিশের কয়েকটি দল ইতিমধ্যে ভিন্‌ রাজ্যে রওনা দিয়েছে। শক্তিগড় স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজও পরীক্ষা করা হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Raju Jha Crime Murder

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy