নিয়োগের তালিকায় (প্যানেল) নামই নেই। অথচ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরি করছেন! প্রার্থীদের নাম নিয়েও গরমিলের কথা উঠেছে। দেখা গিয়েছে, একই নামের দুই প্রার্থীর বাবার নামও এক!
প্রাথমিক শিক্ষক পদে ওই নিয়োগের পরীক্ষা প্রথমে ২০০৯ সালে হয়েছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে তৃণমূল সরকার ২০১১ সালে পুরো প্যানেল বাতিল করে। তার পরে নতুন নিয়োগ হয়নি। শেষমেশ ২০২১ সালে নিয়োগ হয়। সেই নিয়োগেই অনিয়ম এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে মামলা করেন শুভঙ্কর মাঝি-সহ এক দল চাকরিপ্রার্থী।
শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে সেই মামলায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের রিপোর্ট তলব করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২২ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি। এ দিনই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে আমনা পরভিন নামে আর এক প্রাথমিক শিক্ষক পদের চাকরিপ্রার্থীর মামলাও উঠেছিল। সেই মামলায় ইন্টারভিউয়ের ভিডিয়ো রেকর্ডিং পেশ করতে বলেন বিচারপতি। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সেই রেকর্ডিং জমা দিলে এজলাসেই তা চালিয়ে দেখেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু সেই রেকর্ডিংয়ের শব্দ এবং ছবি অস্পষ্ট।
আমনার আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত জানান, ইন্টারভিউয়ে কী প্রশ্ন করা হয়েছিল এবং আমনা কী উত্তর দিয়েছিলেন তা ওই ভিডিয়ো থেকে বোঝা যায়নি। তাই বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর বেলা ২টোয় আমনাকে এজলাসে হাজির হতে হবে।
আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত শুক্রবার আদালতে জানান, ২০২১ সালের নিয়োগে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রবল অনিয়ম এবং স্বজনপোষণ হয়েছে। প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগ হয়েছে। খোদ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবব্রত সরকারের ভাই সেই তালিকায় আছেন। মামলার নথি খতিয়ে দেখে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘‘দু’জন পরীক্ষার্থীর নাম এক হতে পারে। কিন্তু বাবার নামও এক! এ তো হতে পারে না।’’
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কোর্টে জানিয়েছে, অভিযোগ ওঠার পরে ৩১ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে চেয়ারম্যানের ভাইও আছেন। পর্ষদের একটি সূত্র কোর্টের বাইরে দাবি করেছে, ‘ভুল’ করে চেয়ারম্যানের ভাইয়ের নাম ওই তালিকায় ঢুকে গিয়েছিল।
আমনা ২০১৪ সালে টেট দিয়েছিলেন। সে বছর ছ’টি প্রশ্ন ভুল থাকায় ৬ নম্বর পান তিনি। তার ফলে তাঁর নম্বর বেড়ে ৮২ হয় এবং তিনি পাশ করেন। টেট পাশ করেও ইন্টারভিউয়ে ডাক না পাওয়ায় তিনি মামলা করেন। সেই মামলায় ১৭ জুলাই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আমনার ইন্টারভিউ নিতে নির্দেশ দেন এবং তাতে পাশ করলে নিয়োগ করতেও বলেন। ইন্টারভিউ ভিডিয়ো রেকর্ডিং করতেও বলেছিলেন তিনি। আমনার আইনজীবী জানান, ইন্টারভিউ নেওয়ার পরে পর্ষদ জানায় যে আমনা পাশ করতে পারেননি। তার পরেই ভিডিয়ো ফুটেজ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)