Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি হলেই কি হাসপাতালে, ধন্দ চরমে

নভেম্বরে এসেও কলকাতা ও তার সংলগ্ন অঞ্চল জুড়ে ডেঙ্গির দাপট নিয়ে চিকিৎসকেরা তটস্থ। কখন, কী ভাবে এই ভাইরাস আক্রমণ করবে, কোন অসতর্কতায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৫

নভেম্বরে এসেও কলকাতা ও তার সংলগ্ন অঞ্চল জুড়ে ডেঙ্গির দাপট নিয়ে চিকিৎসকেরা তটস্থ। কখন, কী ভাবে এই ভাইরাস আক্রমণ করবে, কোন অসতর্কতায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই। আর তাই এই মুহূর্তে নজরদারিই সেরা পন্থা বলে তাঁদের পরামর্শ। নজরদারিতে ত্রুটি থেকে গেলে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। রবিবার রাতে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যুকে ঘিরেও এই নজরদারি সংক্রান্ত অভিযোগই উঠেছে।

শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, কার্যত বিনা চিকিৎসাতেই তার মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, গাফিলতি ছিল না। ভর্তির পরে চিকিৎসার জন্য ২৪ ঘণ্টা সময়ও পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে আরও আগে থেকে নজরদারি জরুরি ছিল। শনিবার রাতে পার্ক সার্কাসের ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল শোভাবাজারের বাসিন্দা, ১০ মাসের সৌপার্য দত্তকে। ভর্তি হওয়ার আগেই তার ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল। প্লেটলেট ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার। তবে রবিবার দুপুরে তা কমে হয় ৫৬ হাজার। বিকেল থেকেই অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সন্ধ্যায় তাকে পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় তার। রাতেই চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে সৌপার্যের পরিবারের লোকেরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁদের বক্তব্য, রবিবার হাসপাতালে কোনও সিনিয়র ডাক্তার ছিলেন না। কার্যত বিনা চিকিৎসাতেই মারা গিয়েছে ওই শিশু।

হাসপাতালের অধিকর্তা অপূর্ব ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁর বক্তব্য, সিনিয়র চিকিৎসকে‌রা ছিলেন। তাঁদের সব চেষ্টা সত্ত্বেও কিছু করা যায়নি। অপূর্ববাবুর ব্যাখ্যা, কোনও কোনও ডেঙ্গির চরিত্র এমনই গোলমেলে যে দ্রুত পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। এ ক্ষেত্রেও শিশুটি ২৪ ঘণ্টাও চিকিৎসার সময় দেয়নি। ভর্তি হওয়ার পর পরই তাকে স্যালাইন দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু সমস্যা হল, ততক্ষণে ফ্লুইড শিরা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছিল। কিছু ক্ষণের মধ্যেই শক সিনড্রোমে চলে যায় সে।

আর ঠিক এখানেই দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। ডেঙ্গি হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার? সাধারণ ভাবে ডেঙ্গির তো আলাদা কোনও চিকিৎসা নেই। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল এবং শরীরে জল কমে গেলে স্যালাইন— এর বাইরে বিশেষ কিছু করার থাকে না বলেই এত দিন চিকিৎসেকরা জানিয়ে এসেছেন। তা হলে সাধারণ মানুষ কী সিদ্ধান্ত নেবেন? ডেঙ্গি নির্ণয়ের পরে রোগীকে কখন হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত, কিংবা আদৌ করা উচিত কি না, কোন কোন মাপকাঠির দিকে নিরন্তর নজরদারি প্রয়োজন, তা বোঝা কী ভাবে সম্ভব?

ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক সৌরেন পাঁজার বক্তব্য, অন্য বারের চেয়ে এ বার ডেঙ্গির চেহারা অনেক বেশি ভয়াবহ। তাই তাঁরাও বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শই দেবেন। সেটা কী ভাবে? তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি ধরা পড়ার পরে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি একেবারেই জল খেতে না চায়, ঝিমিয়ে পড়ে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়, গোটা শরীর লালচে হতে শুরু করে, ভুল বকা শুরু হয়, বমি এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হতে শুরু করে, তা হলে তাকে বাড়িতে না রাখাই শ্রেয়। কারণ সে ক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে তার ওপরে নজর রাখা দরকার।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গি খুব দ্রুত ভয়াবহ হয়ে উঠছে। যে শিশুদের ক্ষেত্রে পুষ্টি কম, তাদের শরীরে ভাইরাস অনেক জোরালো ভাবে আস্তানা গাড়ছে। আবার যারা স্থূলত্বের শিকার, তাদের ক্ষেত্রে ভয়টা অন্য রকম। সেটা কেমন? তাঁরা জানাচ্ছেন, শিরা থেকে ফ্লুইড বেরিয়ে গেলে শরীর ফুলতে শুরু করে। তা দেখে অনেক সময়ে বিপদের আঁচ পাওয়া যায়। কিন্তু স্থূল শিশুদের ক্ষেত্রে সেটা চট করে বোঝা যায় না। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত।

Dengue Mosquito
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy