মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে অনুপনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতির গর্ভস্থ শিশুর মাথা ছিন্ন হওয়ার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে ‘ভুল ভাবে’ ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে দাবি করল স্বাস্থ্য দফতর।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনার সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ জানান, গর্ভেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে অস্ত্রোপচার এড়াতে চিকিৎসকেরা অনেক সময়ে মৃত শিশুর গলা আগে ছিন্ন করে বার করেন। একে বলে ‘ডি-ক্যাপিটেশন’ প্রক্রিয়া। মায়ের জীবনরক্ষার এটাই প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল।
বস্তুত, গত রবিবার আনন্দবাজারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মুর্শিদাবাদের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাসের যে বক্তব্য ছাপা হয়েছিল, তাতে তিনিও বলেছিলেন, “প্রাথমিক রিপোর্টে জেনেছি, শিশুটি তিন-চার দিন আগেই মারা গিয়েছিল। তাই প্রসবের সময়ে এই ঘটনা ঘটেছে।”
গত শুক্রবার ধুলিয়ানের ওই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা আলোতি বিবি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হাজির ছিলেন আলোতির বাবা বানু শেখ। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, খানিক পরে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং নার্সেরা তাঁকে জানান, মেয়ের অবস্থা খারাপ এবং গর্ভস্থ শিশুর ‘গলা কাটা মাথা’ তাঁর হাতে দিয়ে দেন। প্রসূতি এবং কাপড়ে মোড়া মাথাটি নিয়ে তাঁরা জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে যান। সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে পাঠানো হয়। সেখানেই অস্ত্রোপচার করে মৃত শিশুর মুণ্ডহীন ধ়ড় বের করা হয়। শনিবার তাঁরা ধুলিয়ান ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও সমশেরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ জানান।
প্রশ্ন হল, প্রসূতির জীবনরক্ষার জন্য যদি গর্ভস্থ মৃত শিশুর মাথা ছিন্ন করা হয়ে থাকে, এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে বাড়ির লোককে আগাম জানানো হয়েছিল কি? তাঁদের কি ‘কাউন্সেলিং’ করা হয়েছিল? তা না হলে, আচমকা কারও হাতে শিশুর ছিন্ন মাথা এনে দিলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হওয়াই তো স্বাভাবিক! স্বাস্থ্য কমিশনার দাবি করেন, আগে থেকে বাড়ির লোককে জানানো হয়েছিল।
যা শুনে বানু শেখ টেলিফোনে পাল্টা বলেন, ‘‘পুরোপুরি বাজে কথা। আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। কী অবস্থায় শিশুটি রয়েছে, তা জানতে আলট্রোসোনোগ্রাফি রিপোর্ট পর্যন্ত দেখেননি চিকিৎসক। সকালে সেই পরীক্ষা করানো হয়েছিল। জামাই ওই রিপোর্ট আনতে গিয়েছিল। তা আসার আগেই নার্সেরা শিশুর মাথা কাপড়ে মুড়ে আমার হাতে দিয়ে দেয়।’’
অভিজ্ঞ শল্য চিকিৎসকদের মতে, পরিস্থিতি জটিল হতে থাকলে রিপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত
অপেক্ষা করার সময় না-ও মিলতে পারে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার করতে হয়। কিন্তু মৃত শিশুটির দেহের ময়নাতদন্ত কেন করানো হয়নি? স্বাস্থ্য কমিশনারের বক্তব্য, বাড়ির লোক চাননি বলেই সেটা করা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy