Advertisement
E-Paper

অনেক প্রতিশ্রুতিই ভাঁওতা, ক্ষুব্ধ জমিদাতারা

সংশয় ছিল। তবু সাত বছর ধরে জ্বলছিল আশার আলো। এক লহমায় শালবনির গোটা স্বপ্নটাই ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পের কাজ আপাতত স্থগিত থাকছে বলে রবিবার কলকাতায় জানিয়েছেন চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সজ্জন জিন্দল। এত বড় প্রকল্পের এমন পরিণতি সম্পর্কে কোনও আন্দাজ ছিল না শালবনির মানুষের। সংবাদমাধ্যমেই বিষয়টা জেনেছেন তাঁরা।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
আপাতত তালাবন্দি স্বপ্নের প্রকল্প। সোমবার শালবনিতে জিন্দলদের প্রকল্প এলাকায়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

আপাতত তালাবন্দি স্বপ্নের প্রকল্প। সোমবার শালবনিতে জিন্দলদের প্রকল্প এলাকায়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

সংশয় ছিল। তবু সাত বছর ধরে জ্বলছিল আশার আলো। এক লহমায় শালবনির গোটা স্বপ্নটাই ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে।

শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পের কাজ আপাতত স্থগিত থাকছে বলে রবিবার কলকাতায় জানিয়েছেন চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সজ্জন জিন্দল। এত বড় প্রকল্পের এমন পরিণতি সম্পর্কে কোনও আন্দাজ ছিল না শালবনির মানুষের। সংবাদমাধ্যমেই বিষয়টা জেনেছেন তাঁরা। অথচ ২০০৭ সালে রাজ্য ও জিন্দল গোষ্ঠীর চুক্তি সাক্ষরের সময় থেকেই এলাকাবাসী শুনে এসেছেন, এই প্রকল্প শুধু জেলা বা রাজ্যের নয়, এশিয়ার বৃহত্তম ইস্পাত প্রকল্প হতে চলেছে। জমিদাতাদের চাকরি, কারখানার হাত ধরে গোটা এলাকার চেহারা পাল্টে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও ছিল। তাই কাজ সে ভাবে না এগোলেও আশাটা মরে যায়নি।

গত জুলাইয়ে প্রস্তাবিত কারখানার অদূরে গোদাপিয়াশালের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দল কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কারখানা চালু করতে দেরি হলে, জমিদাতাদের মাসে ৫ হাজার টাকা ভাতা দিতে হবে।’ এতে আশা আরও বেড়েছিল। রবিবারের ঘোষণা সে সবে জল ঢেলে দেওয়ায় শালবনি এখন ফুঁসছে। বরজুর বাসিন্দা বাবলু হেমব্রমের কথায়, “দু’বিঘে জমির এক বিঘে চলে গিয়েছে। চাকরির আশায় বসেছিলাম। এ বার কি ডাকাতি করব!” বাঁধঘুটুর লক্ষ্মণ সরেন বলেন, “১৪ কাঠা জমি দিয়েছিলাম। তখন কত ভাল ভাল কথা বলা হয়েছিল। এখন দেখছি সবই ভাঁওতা।”

সোমবার প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। দলের স্থানীয় নেতা মুক্তিনাথ পাত্র বলেন, “গরিব মানুষের জমির পরিবর্তে কাজ দিতেই হবে। নাহলে কারখানার গেটে আন্দোলন চালিয়ে যাব।” বিজেপি-র এই বিক্ষোভে অবশ্য জমিদাতাদের সে ভাবে দেখা যায়নি। তবে জমিদাতা সংগঠনও আন্দোলনের পথেই যাচ্ছে। ‘জেএসডব্লিউ ল্যান্ড লুজার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক পরিষ্কার মাহাতো বলেন, “চাকরির আশায় আড়াই একর জমি দিয়েছিলাম। জিন্দলদের ঘোষণার পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দেব। দাবি না মানলে অবস্থান হবে।” কী তাঁদের দাবি? পরিষ্কারের কথায়, “হয় চাকরি দিতে হবে, নয় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো মাসিক ভাতা।” তবে স্থানীয় তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্য উষা কুণ্ডুর বক্তব্য, “বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দার জন্য বিক্ষোভ করছে। কাঁচামাল না পেলে কারখানা হবে কী করে!”

৭ বছরে কর্মী আবাসন, কয়েকটি অফিস, গেস্ট হাউস এবং রাস্তা তৈরি ছাড়া কাজ বিশেষ হয়নি। তবু আশা হারাননি বাসিন্দারা। কারণ, জিন্দলদের উদ্যোগেই স্থানীয় জমিদাতাদের কর্নাটকের বল্লারিতে নিয়ে গিয়ে দেখানো হয়, জিন্দলদের কারখানার দৌলতে কী ভাবে এলাকার উন্নয়ন হয়েছে। শালবনিতে মেডিক্যাল ইউনিট গড়ে জমিদাতাদের কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। কারখানায় দক্ষ শ্রমিক হিসেবে নিয়োগের আগে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আবেদনপত্রও নেওয়া হয়েছে।

এখন শুধুই স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা। কারখানা সূত্রের খবর, কর্মীদের জন্য তৈরি মেডিক্যাল ইউনিট জানুয়ারিতে বন্ধ হবে। গ্রামে গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্প অবশ্য এখনই বন্ধ হচ্ছে না। সেখানে ১০ জন স্থানীয় মেয়েকে কাজে নেওয়া হয়েছে। তবে কারখানা না হলে সে কাজও যে থাকবে না, তা সকলেই টের পাচ্ছেন। শালবনির এই প্রকল্পের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট অলোক ভট্টাচার্য যদিও বলেছেন, “কয়লা আর আকরিক লোহার সমস্যাতেই কারখানা চালু করা যায়নি। কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করছেন। নিশ্চিত আশ্বাস পেলেই কাজ শুরু হবে।”

suman ghosh shalbani jindal steel plant remains postponed Jindal steel project orrisa CBI Jindal plant state news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy