Advertisement
E-Paper

চাকরি পরে, আগে ধরুন অপরাধীদের

সোমবার ভোরে প্রতিবাদী তরুণ অরূপ ভাণ্ডারীর মৃত্যুর পরেই আসরে নেমেছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু পরিবার ও পড়শিদের প্রতিবাদে খানিকটা হলেও পিছু হটতে হয়েছিল তাঁদের। মঙ্গলবার ধাক্কা খেলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। দলের নেতারা এ দিন সকালে নিহতের পরিবারকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়ার পরে বিকেলে তাঁদের বাড়িতে ফোন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অরূপের বাবা তখন স্পষ্ট ভাবে তাঁকে জানিয়ে দেন, চাকরি নয়, আগে অপরাধীদের শাস্তি চাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩২
অরূপের জন্য প্রতিবাদী মঞ্চ।—নিজস্ব চিত্র

অরূপের জন্য প্রতিবাদী মঞ্চ।—নিজস্ব চিত্র

সোমবার ভোরে প্রতিবাদী তরুণ অরূপ ভাণ্ডারীর মৃত্যুর পরেই আসরে নেমেছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু পরিবার ও পড়শিদের প্রতিবাদে খানিকটা হলেও পিছু হটতে হয়েছিল তাঁদের। মঙ্গলবার ধাক্কা খেলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। দলের নেতারা এ দিন সকালে নিহতের পরিবারকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়ার পরে বিকেলে তাঁদের বাড়িতে ফোন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অরূপের বাবা তখন স্পষ্ট ভাবে তাঁকে জানিয়ে দেন, চাকরি নয়, আগে অপরাধীদের শাস্তি চাই। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু ওই ঘটনায় এক জন অভিযুক্তও ধরা পড়েনি এখনও।

ইভ-টিজিংয়ের প্রতিবাদ করে দুষ্কৃতীদের মারে জখম অরূপের মৃত্যুর পর থেকেই ক্ষোভে ফুটছে গোটা সালকিয়া। তার উপর স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা যে ভাবে ফেস্টুন টাঙিয়ে অরূপের গায়ে তৃণমূল কর্মী তকমা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তাতে ক্ষোভ আরও তীব্র হয়। প্রতিবাদের মুখে পড়ে ওই ফেস্টুন খুলে নিতে হয়। পরিস্থিতি বিরূপ হচ্ছে বুঝে মঙ্গলবার সকালেই অরূপের বাড়ি গিয়ে তাঁর ছোট ভাইকে চাকরির দেওয়ার প্রস্তাব দেন হাওড়া জেলার তৃণমূল নেতারা। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না বুঝে বিকেলে ভাণ্ডারী পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে উদ্যোগী হন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন থেকে সালকিয়ার পথে রওনাও দেন তিনি। কিন্তু যানজটে আটকে মাঝ রাস্তা থেকে ফিরে আসতে হয় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত তিনি ফোন করেন নিহত অরূপের মা-বাবাকে। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন। আর তখনই তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আগে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হোক, বাকি কথা পরে হবে। সব মিলিয়ে অরূপ-খুনের কাঁটা জিইয়েই রইল শাসক শিবিরে। আজ, বুধবার খুনের প্রতিবাদে হাওড়ায় বন্‌ধ ডেকেছে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও এসইউসি।

অথচ অরূপের মৃত্যুকে বিরোধীরা যাতে কাজে লাগাতে না পারে, সে জন্য সোমবার দিনভর তাঁর বাড়ির সামনে ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। এলাকায় রীতিমতো ক্যাম্প খুলে বসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাতে লাভের থেকে ক্ষতিই যে বেশি হচ্ছে, সেটা বুঝে এ দিন অন্য রাস্তা নেয় শাসক দল। এ দিন সকালে উত্তর হাওড়ার তৃণমূল সভাপতি গৌতম চৌধুরী অরূপের বাড়ি এসে পরিবারের ছোট ছেলে অমরকে হাওড়া পুরসভায় চাকরির প্রস্তাব দেন। তাঁর কাছ থেকে বায়ো-ডাটাও নেন। কিন্তু অমরবাবু বলেন, “আমাদের আর্থিক দুরবস্থা সামাল দিতে চাকরির প্রয়োজন আছে ঠিকই। কিন্তু এখনই নয়। আগে দাদার মৃত্যুর বিচার হবে। খুনিদের গ্রেফতার করতে হবে। তবে ওই চাকরি নেব।”

চাকরির আশ্বাসেও ক্ষোভ কমছে না দেখে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এ পথে নামেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী তথা মধ্য হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অরূপ রায়কে সঙ্গে নিয়ে নিহত প্রতিবাদী যুবকের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তিনি। অরূপবাবু মুখ্যমন্ত্রীর সালকিয়া যাওয়ার বিষয়টি জানান গৌতম চৌধুরীকে। কিন্তু গৌতমবাবু জানান, এলাকার বিশেষ উত্‌সব শীতলামায়ের স্নানযাত্রার জন্য সালকিয়ার প্রচণ্ড ভিড় এবং যানজট রয়েছে। পুলিশ সূত্রেও একই খবর জানানো হয়। বাধ্য হয়ে মাঝপথ থেকেই ফিরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী এবং গৌতমবাবুকে নির্দেশ দেন অরূপের বাড়িতে যেতে। সেখানে গিয়ে গৌতমবাবু তাঁর ফোন থেকে অরূপের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রীর।

অরূপের পরিবারের সঙ্গে কী কথা হল মুখ্যমন্ত্রীর?

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর অরূপের বাবা প্রতাপবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেছেন বলে ভাল লেগেছে। কিন্তু আগে আমার ছেলের মৃত্যুর বিচার চাই। খুনিদের গ্রেফতার চাই। মুখ্যমন্ত্রীকে সে কথা জানিয়েওছি। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।”

সরকারে বিরুদ্ধে ক্ষোভ চাপা দিতে রাজ্যে চাকরির টোপ দেওয়া যে শাসক দলের কৌশল, তার প্রমাণ মিলেছিল কামদুনি কাণ্ডে। তখনও শাসক দলের তরফে ওই পরিবারের এক জনকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও পরে আর্থিক প্রয়োজনে ও পারিপার্শ্বিক চাপে চাকরি নেন পরিবারের এক সদস্য। গার্ডেনরিচে কলেজ নির্বাচনের সময়ে গুলিতে নিহত পুলিশ অফিসার তাপস চৌধুরীরও বাড়িতে গিয়ে তাঁর মেয়েকে দ্রুত চাকরি এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন শাসক দলের নেতা ইকবাল আহমেদ (মুন্না)।

শুভম দুবে

আনন্দ প্রসাদ

বরুণ শর্মা

অরূপের ক্ষেত্রে অবশ্য ক্ষোভ কমাতে চাকরির টোপের কথা মানছেন না মন্ত্রী অরূপ রায়। তাঁর দাবি, “ওই পরিবারের পক্ষ থেকেই চাকরি চাওয়া হয়েছিল। আর মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই এই ধরনের পরিবারের পাশে দাঁড়ান। সেই জন্য তিনি ওঁদের বাড়ি যেতেও চেয়েছিলেন।”

তবে প্রশ্ন উঠছে অন্যত্র। ভাণ্ডারী পরিবারকে চাকরি দিলেই কি স্থানীয়দের ক্ষোভ কমবে?

এ দিন এলাকা ঘুরে অবশ্য তা মনে হয়নি। এলাকার বিশেষ উত্‌সব শীতলামায়ের স্নানযাত্রায় সামিল হননি বহু মানুষ। পাড়া-প্রতিবেশীদের একাংশ রাস্তার পাশে একটা প্রতিবাদ মঞ্চ করে তাতে অরূপের ছবি ও অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি লেখা পোস্টার লাগিয়ে দিনভর বসে থেকেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সুজয় দত্ত বলেন, “এখনও খুনিদের ধরতে পারল না প্রশাসন! আগে সেই কাজটাই করা হোক। এই মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করতে দেব না।”

mamata pratibadi mancha murder arup bhandari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy