Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩

পুরভোটের সঙ্গে লড়াইয়ে হার জয়েন্টের

মুখ্যমন্ত্রী চান না। তাই কলকাতায় পুরভোটের দিন বদলাল না। মাস পাঁচেক আগে নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা সত্ত্বেও পিছিয়ে যেতে হল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাকেই। রাজ্য সরকারের পছন্দের তারিখে কলকাতা পুরসভার ভোট করার পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল রাজ্যেরই জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা। তাই মঙ্গলবার ওই পরীক্ষাটাই পিছিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী চান না। তাই কলকাতায় পুরভোটের দিন বদলাল না। মাস পাঁচেক আগে নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা সত্ত্বেও পিছিয়ে যেতে হল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাকেই।

Advertisement

রাজ্য সরকারের পছন্দের তারিখে কলকাতা পুরসভার ভোট করার পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল রাজ্যেরই জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা। তাই মঙ্গলবার ওই পরীক্ষাটাই পিছিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড মঙ্গলবার জানিয়েছে, আগামী ১৮ এবং ১৯ এপ্রিলের বদলে ওই পরীক্ষা হবে ৫ এবং ৬ মে। পুরভোটের সঙ্গে দ্বৈরথের প্রসঙ্গে না-গিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান ভাস্কর গুপ্ত জানিয়ে দেন, পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের উদ্বেগমুক্ত করার জন্যই পরীক্ষার এই দিন বদল।

কিন্তু এর ফলে সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ভর্তিতে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা থাকছে। কারণ, জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা পিছোনোয় তার ফলপ্রকাশও যে কমপক্ষে ১০ দিন পিছিয়ে যাবে, চেয়ারম্যান নিজেই তা জানিয়েছেন। অথচ জয়েন্টের পরীক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়ে যান। পরে জয়েন্টের কাউন্সেলিং মারফত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ডিগ্রি কলেজ ছেড়ে দেন। এ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্স এবং তার ফলপ্রকাশ পিছিয়ে যাওয়ায় সেই প্রবণতা বাড়বে এবং তার জেরে আখেরে ডিগ্রি কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়াটাই বিঘ্নিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অথচ জয়েন্টের তারিখ ঘোষণার অনেক পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আগামী ১৮ এপ্রিল কলকাতা পুরসভার ভোট করানোর প্রস্তাব দিয়েছিল রাজ্য সরকার। অনেক আগে থেকেই ওই তারিখে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা নির্দিষ্ট থাকায় পুর নির্বাচন কী ভাবে হবে, সেই প্রশ্ন তোলে কমিশন। পূর্বনির্দিষ্ট পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার কী ভাবে এবং কেন ১৮ এপ্রিলই কলকাতায় পুরভোট চাইছে, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এই অবস্থায় মঙ্গলবার কমিশনের তরফে সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়, ১৮ এপ্রিল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা। তাই হয় পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হোক অথবা কলকাতার পুরভোটের জন্য অন্য তারিখ প্রস্তাব করুক রাজ্য সরকার।

Advertisement

তৃণমূলের অন্দরের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় পুরভোটের জন্য অন্য কোনও দিনের কথা ভাবতেই রাজি নন। তাই জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। এবং এ দিনই তা পিছিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়।

বোর্ড-প্রধান ভাস্করবাবু অবশ্য রাজনীতির কাছে শিক্ষার এই হারের কথা স্বীকার করতে চাননি। তাঁর দাবি, সরকারের তরফ থেকে তাঁদের উপরে কোনও রকম চাপ ছিল না। তিনি মঙ্গলবার বলেন, “কয়েক দিন ধরে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের দিনে পুরভোটের প্রস্তাব নিয়ে জল্পনা চলছিল। এতে পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাঁদের অনেকে বারবার আমাদের কাছে টেলিফোন করছেন। ই-মেল পাঠিয়েও অনেকে জানতে চাইছেন, পরীক্ষা কবে হবে। তাঁদের উদ্বেগ কমাতেই আমরা পরীক্ষা পিছোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যে রাজনৈতিক শিবির থেকে শুরু করে শিক্ষাজগতের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করছেন। ভাস্করবাবু নিজেই জানিয়েছেন, পরীক্ষার দিনক্ষণ স্থির হয়ে গিয়েছিল সেপ্টেম্বরে। পাঁচ মাস আগে নেওয়া সেই সিদ্ধান্ত দিন তিনেকের জল্পনার ধাক্কায় পিছিয়ে দেওয়া হল কেন, চেয়ারম্যানের কাছে তার সদুত্তর নেই। এই প্রসঙ্গে গত বারের জয়েন্টের কথা তোলেন জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ দত্ত। তিনি বলেন, “গত লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা পড়েছিল। তখন বোর্ড কিন্তু পরীক্ষার সূচি পরিবর্তন করেনি। এ বার পুরসভার নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ওই পরীক্ষা কেন পিছিয়ে দেওয়া হল, বোঝা যাচ্ছে না।” আর বাম জমানার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী বলছেন, “নির্বাচন না পরীক্ষা সরকারের কাছে অগ্রাধিকার কীসের, সেটা তো এই সিদ্ধান্তেই স্পষ্ট!”

কোনও জল্পনায় যেতে চাননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গলায় ভাস্করবাবুর বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। পার্থবাবু বলেন, “বোর্ডের কর্তারা পরীক্ষা পিছোনোর সিদ্ধান্ত নিয়ে তা জানিয়েছেন। এবং এতে যে আমাদের কোনও আপত্তি নেই, সে-কথাও ওঁদের জানানো হয়েছে।”

বোর্ডের তরফে এ দিন জানানো হয়েছে, পরীক্ষায় বসার জন্য রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.