Advertisement
E-Paper

বিক্ষোভ বন্ধে ফের পুলিশে গেলেন উপাচার্য

ফের পুলিশের দ্বারস্থ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। প্রথম দফায় দ্বারস্থ হয়েছিলেন ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে। তাঁকে ঘেরাওমুক্ত করতে ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের বেদম পিটিয়েছিল পুলিশ। তাতে নিন্দা-বিতর্ক কম হয়নি। ওই ঘটনার আট দিন বাদে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যান উপাচার্য এবং সে দিনই ফের তিনি লিখিত ভাবে সাহায্য চেয়েছেন পুলিশের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫০
প্রহরা। অভিজিৎ চক্রবর্তীর বাড়ির সামনে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

প্রহরা। অভিজিৎ চক্রবর্তীর বাড়ির সামনে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

ফের পুলিশের দ্বারস্থ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী।

প্রথম দফায় দ্বারস্থ হয়েছিলেন ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে। তাঁকে ঘেরাওমুক্ত করতে ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের বেদম পিটিয়েছিল পুলিশ। তাতে নিন্দা-বিতর্ক কম হয়নি। ওই ঘটনার আট দিন বাদে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যান উপাচার্য এবং সে দিনই ফের তিনি লিখিত ভাবে সাহায্য চেয়েছেন পুলিশের।

কী তাঁর অভিযোগ? ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশকে বলেছিলেন, তাঁর প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার অভিজিৎবাবু জানিয়েছেন, হাইকোর্টের নির্দেশ না মেনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কিছু পড়ুয়া এবং বহিরাগত অরবিন্দ ভবনের চারপাশে জড়ো হয়ে অচলাবস্থা তৈরি করছিলেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও গেট পাস ছাড়াই ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করেছেন। পুলিশকে উপাচার্যের অনুরোধ, আদালতের নির্দেশ মানতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ যাতে হুমকির মুখে না পড়েন, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে-বেরোতে তাঁদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, পুলিশকে তা-ও দেখতে বলেছেন অভিজিৎবাবু।

ক্যাম্পাসে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার দায়িত্ব তো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সে ব্যাপারে তৎপর না হয়ে ছাত্রছাত্রী, বহিরাগত, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো কোন যুক্তিতে?

গত বুধবার দুপুরে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, যাদবপুর ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা কাটাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকা, বিক্ষোভ দেখানোর জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া এবং এই সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন ঠিক করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্যাম্পাসে কিছু নতুন নিয়ম চালু করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ওই দিন অভিজিৎবাবু যখন ক্যাম্পাসে ঢোকেন, অরবিন্দ ভবনের সামনে তখন ছাত্রছাত্রীরা ছিলেন না। পরে তাঁরা সেখানে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। বিকেলে উপাচার্য ক্যাম্পাস ছাড়ার সময় ছাত্রছাত্রীরা ফের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান, অভিজিৎবাবুর গাড়িতে চড়চাপড়ও পড়ে। নিরাপত্তারক্ষীরা অবশ্য একেবারে ঘেরাটোপে নিয়ে উপাচার্যকে গাড়িতে তুলে নির্বিঘ্নে ক্যাম্পাস ছাড়তে সাহায্য করেন।

পড়ুয়াদের দাবি, সে দিন তাঁরা যখন অরবিন্দ ভবনের সামনে জড়ো হন, তখনও হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও নির্দেশিকা জারি করেননি কর্তৃপক্ষ। আবার, নির্দেশিকা জারির কথা ঘোষণা করে রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষও জানিয়েছিলেন, আদালতের সব নির্দেশ কার্যকর করতে একটু সময় লাগছে।

বৃহস্পতিবার তো বটেই, শুক্রবারও বহু ছাত্রছাত্রী পরিচয়পত্র না দেখিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকেন। সংবাদমাধ্যমের অনেক প্রতিনিধিও ঢুকেছেন বিনা বাধায়। কোথায় নাম নথিভুক্ত করতে হবে বা গেট পাস মিলবে, তা জানানো কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব। সেই ব্যবস্থা ঠিক মতো না করেই উপাচার্য বহিরাগত, এমনকী সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দোষী সাব্যস্ত করতে তৎপর হলেন কেন, তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য রেজিস্ট্রারের দাবি, আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার প্রক্রিয়া শেষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশের মতে, এত নিন্দা সত্ত্বেও উপাচার্যের ফের পুলিশের সাহায্য চাওয়ার পিছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। বুধবার নবান্নে গিয়ে নিরাপত্তার জন্য তদ্বির করেন তিনি। বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। এর পরের ধাপে তিনি হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেও একই ব্যবস্থা চাইছেন। অভিজিৎবাবুর প্রতিক্রিয়া অবশ্য জানা যায়নি। বারবার চেষ্টা করেও টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উপাচার্যের ওই সাহায্য চাওয়া নিয়ে পুলিশের প্রতিক্রিয়া কী? পুলিশ জানিয়েছে, উপাচার্যের অভিযোগ, বহিরাগতদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অরবিন্দ ভবনের সামনে বেআইনি জমায়েত করে কাজে বাধা দিয়েছেন। এই ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় বহিরাগত এবং ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, অরবিন্দ ভবনের সামনের সব সিসিটিভি খারাপ থাকায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ছবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এরই মধ্যে যাদবপুর ক্যাম্পাসে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ধৃত দুই ছাত্রকে শনিবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, মারধর ও জোর করে আটকে রাখার অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল আদালতে জানান, পুলিশ ওই দুই অভিযুক্তের টিআই প্যারেড (টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন) করাতে চায়। তাই তাঁদের জেল হেফাজতে রাখা দরকার। অভিযুক্তদের আইনজীবীদের বক্তব্য ছিল, ওই পড়ুয়ারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লালবাজারে গিয়ে জানান, তাঁরা ওই ছাত্রীনিগ্রহের ঘটনার সাক্ষী। অথচ পুলিশ তাঁদেরই গ্রেফতার করেছে। আলিপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুমনা ঘড়ুই অভিযুক্ত দুই ছাত্রকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

যাদবপুর-কাণ্ডের প্রতিবাদ এ দিনও অব্যাহত ছিল। কলেজ স্ট্রিটে প্রতিবাদ সভা হয়। গোলপার্ক থেকে যাদবপুর মিছিল করে সিপিআই।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং তার স্থায়ী সমাধান চেয়ে কাল, সোমবার রাজ্যপালের দ্বারস্থ হচ্ছেন বেশ কয়েক জন প্রাক্তন উপাচার্য এবং বিশিষ্ট শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে থাকছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অমিতা চট্টোপাধ্যায়, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়, যাদবপুরের ইংরেজি বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী।

jadavpur university abhijit chakraborty kolkata police VC state news help student protest online state news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy