Advertisement
E-Paper

লাঠি হাতে সাগরে ভিড় সামলাচ্ছেন বিশ্বকাপ জেতা মেয়ে

কবাডি বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য বছর আঠাশের সঙ্গীতা মণ্ডল এ বারের গঙ্গাসাগর মেলার সিভিল ডিফেন্স কর্মী। পাবেন প্রতিদিন ৫২৮ টাকা।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০২:০৭
কর্তব্যরত: গঙ্গাসাগরে সঙ্গীতা মণ্ডল। সোমবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ

কর্তব্যরত: গঙ্গাসাগরে সঙ্গীতা মণ্ডল। সোমবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ

অশোকচক্র আঁকা জাতীয় দলের ১০ নম্বর জার্সি তাঁর গায়ে নেই। রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের দেওয়া সাদা শার্ট আর খাকি ট্রাউজার্স। শার্টের উপরে কমলা রঙের লাইফ জ্যাকেট আর মাথায় সিভিল ডিফেন্স লেখা সাদা টুপি! বেচাল দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন লাঠি হাতে। কয়েক মাস আগেই কবাডি বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য বছর আঠাশের সঙ্গীতা মণ্ডল এ বারের গঙ্গাসাগর মেলার সিভিল ডিফেন্স কর্মী। পাবেন প্রতিদিন ৫২৮ টাকা।

জলের দিকে ছুটতে থাকা একটি শিশুকে মায়ের হাতে ফিরিয়ে সঙ্গীতা বললেন, “বাংলার কবাডি দল এখন অন্ধ্রপ্রদেশে। আমি যাইনি। রাগ করেই যাইনি। যাব কেন? বিশ্বকাপ জেতা মেয়ের চাকরি হয় না এ রাজ্যে। কয়েকটা টাকা তো পাব, ভেবে এখানে চলে এসেছি। যত কমই হোক, খেলতে গেলে এই টাকাটাও তো পেতাম না। তা ছাড়া কোনও কাজই ছোট নয়।” ভক্তদের কোলাহল, মাইকের অনর্গল ঘোষণাও চাপা দিতে পারে না সাত বার সিনিয়র ন্যাশনাল খেলা মেয়ের কেঁপে ওঠা গলায় বলা কথাটা।

মালয়েশিয়ায় শেষতম কবাডি বিশ্বকাপ হয় ২০১৯ সালের ২০-২৮ জুলাই। ‘লেফট কভার’ বা ‘লেফট লাইন’ পজিশনে খেলতে স্বচ্ছন্দ সঙ্গীতা। ২০১৭ সাল থেকে বেঙ্গালুরু, মাদুরাই ও চেন্নাইয়ে তিন দফার ক্যাম্পে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই জাতীয় দলে ডাক পান রায়দিঘি মথুরাপুরের এই মেয়ে। সেমিফাইনালে হংকংকে ভাল ব্যবধানে হারায় ভারত। ফাইনালে তাইওয়ানকেও কার্যত উড়িয়ে দেন সঙ্গীতারা। মোবাইলে জাতীয় পতাকা, বিশ্বকাপ হাতে নিজের সে-দিনের ছবি দেখাতে দেখাতে সঙ্গীতা বলেন, “ওই দিনটার পরে মনে হয়েছিল, এ বার বুঝি জীবনে ভাল কিছু হবে। একটা চাকরি হবে। কিন্তু কিছুই তো বদলাল না!”

আরও পড়ুন: পঞ্চসায়রে উদ্ধার দু’কোটি টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট, ধৃত এক, চিন্তায় গোয়েন্দারা

২০০৪ সালে মারা যান সঙ্গীতার বাবা মাধাই মণ্ডল। মা, বোন আর ভাইয়ের সংসারে তাঁর উপরে এখন অনেক দায়িত্ব। শাড়িতে পাড় বসিয়ে আর ঠোঙা বানিয়ে চলে সংসার। মা, বোনের সঙ্গে ওই কাজে হাত লাগাতে হয় তাঁকেও। তার সঙ্গেই চলে খেপ খেলা। সঙ্গীতার কথায়, “মেদিনীপুর থেকে খুব ডাক আসে। মেদিনীপুরের খেপই তো বংলার কবাডি খেলোয়াড়দের বাঁচিয়ে রেখেছে। তবে তাতে যে-টাকা আসে, তাতে

সংসার চলে না। তাই কাজের জন্য গঙ্গাসাগর মেলায় আসতে হয়েছে। এখানে কাজ করব বলে আলিপুরের ক্যাম্পে গিয়ে প্রশিক্ষণও

নিয়ে এসেছি।”

জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, গঙ্গাসাগরের নিরাপত্তা জোরদার করতে এ বারেই প্রথম মহিলা সিভিল ডিফেন্স কর্মী রাখা হয়েছে সাগরের কাছে। সঙ্গীতা তাঁদের মধ্যে একমাত্র, যিনি নিজে আবেদন করে আলিপুরে গিয়ে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বাকিরা নিযুক্ত হয়েছেন গঙ্গাসাগর এলাকার আশপাশের থানা থেকে।

বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্যা, সোনার মেডেল পাওয়া মেয়েকে এই কাজ করতে হবে কেন? সঙ্গীতা বললেন, “বিশ্বকাপ জেতার পরে আমাদের দলে থাকা অন্য রাজ্যের বাকি মেয়েদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু ভাল হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতেও গিয়েছিলাম সার্টিফিকেট নিয়ে। তিনি দেখা করেননি, কাউকে দিয়ে কোনও সাহায্যও পাঠাননি। কয়েক দিন বাদেই দিল্লিতে আমাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আমন্ত্রণ এসেছে। কিন্তু তাতে তো আর পেট ভরে না!”

কোনও বিশ্বকাপজয়ী দলের ক্রিকেটারের সঙ্গে এমনটা হত কি, লাঠি হাতে সাগর সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ার আগে প্রশ্ন ছুড়লেন সঙ্গীতা।

Gangasagar Mela
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy