Advertisement
E-Paper

শান্তি রাখুন, ইলামবাজারে বার্তা তৃণমূলের

‘চড়াম-চড়াম’ নয়, ‘ভ্যানিশ’ করা নয়, শান্তি রক্ষা করা এবং তাতে বেচাল দেখলে দলের অন্দরে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি। শনিবার অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূমে লিফলেটে এমনই বার্তা দিয়েছে তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক কমিটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০৩:৩৩

‘চড়াম-চড়াম’ নয়, ‘ভ্যানিশ’ করা নয়, শান্তি রক্ষা করা এবং তাতে বেচাল দেখলে দলের অন্দরে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি। শনিবার অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূমে লিফলেটে এমনই বার্তা দিয়েছে তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক কমিটি। প্রচারের দায়িত্বে দলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম, যিনি নিজেই একাধিক খুন ও অপরাধমূলক মামলায় অভিযুক্ত।

হলটা কী!

জাফারুলের বক্তব্য, ‘‘এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজার রেখে দিদির (তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) উন্নয়নের কাজকে আরও বাড়াতে চাই। এই পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মীরা যাতে কারও কোনও প্ররোচনায় পা না দেন, সে জন্য ওই আবেদন।’’ তবে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ‘দশ-আনন’-এর অন্যতম জাফারুলের এই দাবিতে জল্পনা থামছে না তৃণমূলের অন্দরেও।

ভোটের আগে বীরভূমে প্রচারে বারবার ভোটারদের ‘গুড়-জল’ খাওয়ানোর হুমকি দিতে শোনা গিয়েছে অনুব্রতকে। বলেছিলেন, বিরোধীদের জন্য ‘চড়াম চড়াম’ ঢাক বাজবে। ভোটের পালা চুকলে জেলায় তাঁরাই থাকবেন, এমন হুমকি ফি দিন দিয়েছেন তৃণমূলের ছোট-সেজো-মেজো নেতারা। ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে’ বুঝে নেওয়ার ‘বার্তা’ শোনা গিয়েছে খোদ তৃণমূলনেত্রীর মুখে। বৃহস্পতিবার ভোটে জিতে শান্তি রক্ষার জন্য আবেদন করেছেন মমতা। কিন্তু তার আগেই ‘চড়াম চড়াম’ শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তে। অথচ, বিরোধীদের উপরে হামলা, তাদের কার্যালয়ে-বাড়িতে ভাঙচুর যেখানে জেলায়-জেলায় আকছার হচ্ছে, সেখানে শনিবার পর্যন্ত বীরভূম প্রায় শান্ত। শুক্রবার নানুরে শাসক দলেরই এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। শনিবার ওই একই কেন্দ্রে এক সিপিএম এজেন্ট ও তাঁর স্ত্রী আক্রান্ত হয়েছেন।

সাধারণ সভা ডেকে এ দিনই দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে কিছু সিদ্ধান্ত লিফলেট আকারে পৌঁছে দিয়েছে ইলামবাজার ব্লক তৃণমূল। সেখানে জাফারুলের আবেদন— ‘বিরোধী দলের কর্মী সমর্থক বা কোনও প্রতিষ্ঠান বা কোনও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা কোনও সরকারি বা বেসরকারি সম্পত্তির কোনও ক্ষতি হয়, এমন কাজ সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে’। আরও বার্তা—‘এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সকল স্তরের দলীয় কর্মীদের সজাগ থাকতে হবে’। ‘তোলাবাজ ও সমাজবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্তদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা বা ওই সব কাজে যুক্ত থাকা কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

তৃণমূলের জেলা-নেতাদের একাংশ বলছেন, জাফারুলের দাপটে গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের একমাত্র আসনটি বাদ দিলে আর কোনও আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বিরোধীরা। কার্যত বিরোধীশূন্য ব্লক গড়তে গিয়ে জাফারুল পেশিশক্তির সাহায্যে এলাকায় সন্ত্রাস ছড়াচ্ছেন, অবৈধ বালি কারবার থেকে যাবতীয় অনৈতিক কাজে যুক্ত হচ্ছেন— এমন অভিযোগ বহু বার তুলেছেন বিরোধীরা। এরই মাঝে লোকসভা ভোটের হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে ব্লকের পাড়ুই থানা এলাকায় প্রভাব বাড়াতে শুরু করে বিজেপি। ব্লক সভাপতি জনপ্রিয়তাও হারাতে শুরু করেছেন বলে অভিযোগ যায় জেলা নেতৃত্বের কাছে। বোলপুর বিধানসভার অন্তর্গত ইলামবাজার ব্লকে দলের প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহকে এ বার প্রায় ৩৬ হাজার ভোটের ‘লিড’ দিয়ে সমালোচকদের মুখ আপাতত বন্ধ করে দিয়েছেন জাফারুল। কিন্তু সময় গড়ালেই দলের ভিতর থেকে আবার ‘অনভিপ্রেত’ প্রশ্ন উঠবে। লিফলেট বিলি সেই তাগিদেই। অনুব্রত অবশ্য বলেছেন, ‘‘মানুষ দু’হাত তুলে আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। তাঁদের যাতে সমস্যা না হয়, এলাকায় যাতে অশান্তি না হয়, সে জন্য দলই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিটি ব্লককেই কর্মী-সমর্থকদের এই বার্তা দিতে বলা হয়েছে। এ দিন ইলামবাজার ব্লক কমিটি সেই নির্দেশ পালন করেছে মাত্র।’’ লিফলেটের বার্তা ‘অভিনন্দনযোগ্য’ বলে মনে করছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা। তবে তাঁর সংযোজন, ‘‘এমন লিফলেট বিলি করতে হয়েছে মানেই কিছু তো হয়েছে। দেখতে হবে যে সব বার্তা দেওয়া হল, সেগুলো আদৌ বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না।’’

TMC Ilambazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy