Advertisement
E-Paper

জয়দেবের স্মৃতি-তর্পণে শুরু কেঁদুলির মেলা

ধূ ধূ করছে বালি আর বালি। এর মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে শীর্ণকায় অজয়। কোথাও বা জলাশয়ের ছোট ছোট পকেট। এই অজয়ের তীরেই শুরু হয়েছে ভক্তকুলের পুণ্যস্নান। শুক্রবার মকর সংক্রান্তিতে ঠিক কোথায় অবগাহন করবেন, এ নিয়ে ওঁদের গভীর চিন্তা।

অশোক সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ ১৭:০১

ধূ ধূ করছে বালি আর বালি। এর মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে শীর্ণকায় অজয়। কোথাও বা জলাশয়ের ছোট ছোট পকেট। এই অজয়ের তীরেই শুরু হয়েছে ভক্তকুলের পুণ্যস্নান। শুক্রবার মকর সংক্রান্তিতে ঠিক কোথায় অবগাহন করবেন, এ নিয়ে ওঁদের গভীর চিন্তা।

কিন্তু এই অজয়কে নিয়েই তো কবি লিখেছিলেন, ‘অজয়ের ভাঙনেতে করে বাড়ি ভঙ্গ,/তবু নিতি নিতি হেরি নব নব রঙ্গ।’ কুমুদরঞ্জন মল্লিক, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ প্রভাবিত হয়েছেন অজয়ের দ্বারা। মেলা বেড়েছে। কিন্তু দিনে দিনে ক্ষীণ হয়েছে অজয়ের ধারা।

মেলাপ্রাঙ্গণে ঢোকার পরে বাঁ দিকে মাটির উঁচু বাঁধ। এই ঢিবির উপরে উঠলেই মালুম হবে কী অবস্থা। এ রকম শুখা অবস্থার মাঝে যেখানে স্নানার্থীদের সমাবেশ বেশি, সেখানে চরার উপর অবশ্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার। তাতে বসে নদীর দিকে লক্ষ রাখছেন এক পুলিশকর্মী। কোথাও কোথাও অবশ্য স্থানীয় প্রশাসন নোটিস লাগিয়ে রেখেছে, ‘সাবধান, এখানে জল গভীর’ বলে।

কথিত আছে, কবি জয়দেব প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে মকরস্নান করতে যেতেন কাটোয়ার গঙ্গায়। এক বার তিনি এমন অসুস্থ হয়ে পড়েন যে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেন তাঁর জন্য মা গঙ্গা উজান বেয়ে অজয় নদে এসে মিলিত হবেন। তাই অজয় নদে স্নান করলেই গঙ্গাস্নানের ফল পাবেন জয়দেব। এই কাহিনির বিস্তারেই কেঁদুলির মেলাকে বাঙালি উৎসর্গ করেছে কবি জয়দেবের স্মৃতি তর্পণে।

মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসার কথা থাকায় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, আরও জলের সংস্থান করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু কী ভাবে, কোথা থেকে, কতটা জল আসতে পারে, তার আন্দাজ নেই জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের কোনও স্তরে।

প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালি তোলা হচ্ছে। মূল মেলাপ্রাঙ্গণ থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার হেঁটে অনেকে যাচ্ছেন বিল্বমঙ্গল ধামে। ড্রেজিংয়ের বালি ফেলা হয়েছে এর ধারে। পথের অনেকটা তাই বালিতে ঢাকা। হাঁটতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দেখা গেল, দু’জায়গায় দু’টি ড্রেজার আছে ঠিকই, কিন্তু নদী থেকে অনেকটা দূরে। আপাতত ড্রেজিং হচ্ছে না। পাহাড়প্রমাণ বালি তুলতে লাগবে প্রচুর সময়, নিষ্ঠা এবং অর্থ।

বিহারের মুঙ্গের জেলায় ৩০০ মিটার উঁচু পাহাড় থেকে উৎসারিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অজয় বয়ে গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের উপর দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে বর্ধমান জেলার চিত্তরঞ্জনের কাছে। পরে কাটোয়া শহরের কাছে ভাগীরথীর সঙ্গে মিলে গিয়েছে। অজয়ের মোট দৈর্ঘ্য ২৮৮ কিলোমিটার, এর শেষ ১৫২ কিমি পশ্চিমবঙ্গে।

তথ্য যা-ই বলুক, বন্যাসঙ্কুল হিসাবে পরিচয় ছিল গঙ্গার অন্যতম শাখা অজয়ের। কবি লিখেছিলেন, ‘বাড়ি আমার ভাঙন ধরা অজয় নদীর বাঁকে,/জল যেখানে সোহাগ ভরে স্থলকে ঘিরে রাখে।’ মেলা দেখতে যাওয়া পুণ্যার্থীরা হতাশ হচ্ছেন ক্ষীণস্রোতাকে দেখে।

তবে, মেলা চলছে মেলার মতোই। বৃহস্পতিবার রাতভর কেন্দ্রীয় মঞ্চে, বিভিন্ন আখড়ায় হয়েছে বাউলগান, নামসঙ্কীর্তন। কেউ হ্যান্ডবিলে, কেউ ফ্লেক্সে— শিল্পীরা যে যাঁর মতো প্রচারপর্ব সেরেছেন মেলায়। হরেক আখড়ায় বাউল-কীর্তন পরিবেশন করছেন ভাগ্যান্বেষণে আসা গায়ক-গায়িকারা। কথা হল ওঁদেরই অন্যতম পিন্টু বিশ্বাসের সঙ্গে। পাতিপুকুরের ক্ষৌরকার এসেছেন ভাইয়ের সঙ্গে। বললেন, ‘‘মেলার আকর্ষণ তো আছেই। এ ছাড়া এখানে গান করলে অনেকে চিনবে। ডাক আসবে বেশি করে।’’

মেলাপ্রঙ্গণের অপরিসর নানা পথ লোকে গিজগিজ করছে। ওঁদের মধ্যে মিশে আছেন লাল-কালো-গেরুয়া-সাদা হরেক রঙের পোশাকের সাধু। হস্তশিল্পের হরেক পসরা নিয়ে বসেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মাটির হাঁড়ি থেকে লাউয়ের খোলে তৈরি দোতারা— চলছে দরদাম। মেলাপ্রাঙ্গণে তৈরি হয়েছে মিষ্টি থেকে সাজগোজের জিনিস, জাদু থেকে শিশুদের প্রমোদ— নানা রকম স্টল।

kenduli fair mela Joyde
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy