কেশরীনাথ ত্রিপাঠী
ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল।
তৃণমূলের অভিযোগ, নবান্নকে এড়িয়ে জেলার পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করছেন কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। এ নিয়ে আজ রাজ্যসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। পরে অধিবেশেন বয়কট করে তারা।
বিতর্কের সূত্রপাত রাজ্যপালের অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের লেখা চিঠি থেকে। মালদহ ডিভিশনের ডিভিশনাল কমিশনারকে লেখা সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, মালদহ ও মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প, গ্রামীণ এলাকায় বিভিন্ন এনজিও-র কাজকর্ম এবং জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা করতে চান রাজ্যপাল। পরে আর একটি চিঠি পাঠিয়ে মুর্শিদাবাদের আইজি-কেও বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
তৃণমূল এই চিঠিকে রাজ্যকে এড়িয়ে জেলা প্রশাসনে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ করলেও রাজভবন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, এর মধ্যে বেআইনি কিছু নেই। অতীতে নুরুল হাসান, গোপালকৃষ্ণ গাঁধী বা এম কে নারায়ণনের মতো রাজ্যপালেরা জেলা সফরে গিয়ে স্থানায় পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
কেশরীও এ দিনই একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মালদহে গিয়ে জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। (যদিও তাঁর দফতর থেকে পাঠানো দ্বিতীয় চিঠিতে বৈঠকের তারিখ লেখা হয়েছে ৬ ডিসেম্বর ২০১৮!) প্রশাসন সূত্রে খবর মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফর নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে ডিভিশনাল কমিশনার বৈঠকে আসেননি। অসুস্থতার কারণে গরহাজির ছিলেন মালদহের এসপি-ও।
আজ সংসদের দু’টি কক্ষই দিনভর উত্তাল হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। রাজ্যপালের অফিসের লেখা চিঠিটিও হাতে হাতে ঘুরেছে বিরোধী নেতাদের। আজ সকালে গাঁধী-মূর্তির সামনে ‘জনবিরোধী’ বাজেট ও পশ্চিমবঙ্গের বঞ্চনা নিয়ে ধর্না দেন তৃণমূল সাংসদেরা। এর পরে ‘রাজ্যপালের প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের’ অভিযোগ নিয়ে অন্য বিরোধী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। রাজ্যসভায় মুলতুবি প্রস্তাবের নোটিস দেয় তৃণমূল। পরে লোকসভাতেও রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে বলতে উঠে সরব হন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সংবিধান বহির্ভূত আচরণ করছেন।’’ অন্য দিকে ডেরেক বলেন, ‘‘রাজ্যপাল আরএসএস প্রচারকদের মতো ব্যবহার করছেন।’’
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবিধানের ১৬৭ (খ) ধারা অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাজ্যপালকে রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতে বাধ্য। তার পরেও রাজ্যপাল যদি বাড়তি কিছু জানতে চান, তা হলে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর দফতরকে সেটা জানাতে হবে। রাজ্য প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে তিনি কিছুই করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে সেই সাংবিধানিক প্রথা লঙ্ঘিত হয়েছে বলেই অনেকের অভিমত।
রাজভবনের মুখপাত্র অবশ্য নবান্নকে না জানিয়ে বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, চিঠির প্রতিলিপি মুখ্যসচিবকে পাঠানো হয়েছিল। তা ছাড়া, রাজ্যপাল তো সরকারি কপ্টারেই জেলায় গিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy