Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঢালাও কার্ডের পরিষেবা নিয়েই চিন্তায় বইমেলা

ভরা মেলায় থরে থরে বই। জমজমাট ভিড়। ক্রেতাদের কেনার ইচ্ছেরও অভাব নেই। তবু কেনা যাচ্ছে না বই— এমন একটা দৃশ্য দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করছে কলকাতা বইমেলার উদ্যোক্তাদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৩
Share: Save:

ভরা মেলায় থরে থরে বই। জমজমাট ভিড়। ক্রেতাদের কেনার ইচ্ছেরও অভাব নেই। তবু কেনা যাচ্ছে না বই— এমন একটা দৃশ্য দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করছে কলকাতা বইমেলার উদ্যোক্তাদের। মিলনমেলা প্রাঙ্গণে বইমেলা চত্বরে ঢালাও নগদহীন লেনদেনের ব্যবস্থা করা যাবে কি না, তা নিয়ে এখনও প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।

৮০০ স্টলে একই সময়ে বহু মেশিনে কার্ড ঘষাঘষি হলে তা নিষ্ফল (লিঙ্ক ফেলিওর) হওয়ার হার বাড়বে বলেই আশঙ্কা বইমেলা কর্তৃপক্ষের। একে তো বেশির ভাগ বাংলা বইয়ের প্রকাশক এখনও কার্ড ব্যবহারে আনাড়ি। তার উপরে গোটা মেলা জুড়ে অত দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা কি আদৌ থাকবে? গত বার বইমেলা চত্বরে ফ্রি ওয়াইফাই জোন চালু করার ঘোষণা সত্ত্বেও তা সে ভাবে সফল হয়নি। এ যাত্রা এত লোকের প্লাস্টিক মানির লেনদেন চালু করার মতো পরিকাঠামো আদৌ মিলবে কি না, সংশয় থাকছেই। ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেউই তাঁদের নিশ্চিন্ত করতে পারেনি।

যদিও টেলিকম শিল্প ও ব্যাঙ্ক সূত্রের দাবি, এই আশঙ্কা অমূলক। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র এক কর্তা জানান, আগ্রহী ব্যবসায়ী, দোকানদার বা মেলার সংগঠকদের কার্ড ‘সোয়াইপ’ করার জন্য ‘পয়েন্ট অব সেলস’ যন্ত্র তাঁরা দেন। সেটি ব্যবহারের জন্য যে ল্যান্ডলাইন ফোন বা সিম-এর সংযোগের প্রয়োজন হয় তা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বা মেলার সংগঠকদেরই নিতে হয় টেলিকম সংস্থাগুলির কাছ থেকে। বিএসএনএল-এর এক কর্তা জানান, সাধারণ ভাবে এই লেনদেনে খুব কম তথ্য আদানপ্রদান করা হয় বলে বেশির ভাগ সংস্থাই কম ক্ষমতার (৬৪ কেবিপিএস) সংযোগ নেন। তাই তাঁদের যুক্তি, বইমেলার সংগঠক বা ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষমতার সংযোগ নিলে সমস্যা হবে না।

এই পটভূমিতে মঙ্গলবার বিকেলে বইমেলার ‘ফোকাল থিম কান্ট্রি’ কোস্টারিকার নাম ঘোষণার আসরেও আতঙ্ক ঘনাল। ‘‘এ লড়াই বাঁচার লড়াই,’’ বলে ডাক দিলেন বুক সেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ড-এর সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। পরে তিনি জানালেন, গিল্ড-এর তরফে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো লেখকদের নিয়ে দিল্লিতে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন তাঁরা। শীর্ষেন্দুবাবু মানছেন, নগদের অভাবে বইয়ের ব্যবসা বড় ধাক্কা খেয়েছে। তাই তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে সম্মত হয়েছেন। তবে বর্তমান অবস্থায় রাষ্ট্রপতিই বা কী করতে পারবেন, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।

আগামী বছর ২৫ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি বইমেলা চলবে। তার আগে নগদের অভাবে বই তৈরির কাজ বিভিন্ন স্তরে ধাক্কা খাচ্ছে বলে উদ্বিগ্ন গিল্ড সভাপতি সুধাংশু দে। ফলে এ বার বইমেলায় নতুন বই প্রকাশ অন্য বারের তুলনায় কমে অর্ধেক হওয়ার সম্ভাবনা। অন্য বারের তুলনায় মেলার পৃষ্ঠপোষকতাও হয়তো কমবে। তবে ত্রিদিববাবুর কথায়, ‘‘বাজেট কমবে না। গিল্ড লাভের কথা ভাবছে না।’’ নোট-নাকাল দেশে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এ বার বইমেলার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন বলে এ দিন জানান তিনি। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র সিজিএম পার্থপ্রতিম সেনগুপ্তের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে। মেলার মাঠে নগদের ব্যবহারটাও সচল রাখতে ১৪-১৫টা এটিএম থাকবে বলে গিল্ড জানাচ্ছে। তাঁদের আশা, তত দিনে হয়তো এটিএম থেকে নগদ তোলার ব্যাপারে বিধিনিষেধ ঢিলে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Book fair
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE