Advertisement
E-Paper

নবান্ন অভিযান থেকে কালীঘাট চলো! আরজি কর-কাণ্ডের এক বছরে রাজ্য জুড়েই প্রতিবাদ, সতর্ক কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ

শুক্রবার কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর নবান্ন এবং ওই ভবন সংলগ্ন এলাকায় জমায়েত করা যাবে না। বিক্ষোভ-মিছিল করা যাবে না কালীঘাটেও। ঘটনাচক্রে, কালীঘাটে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৫ ২১:১৭
Kolkata Police and WB State Police on Alert as there will Nabanna and Kalighat Abhijan in protest against RG Kar Incident

শনিবার নবান্ন অভিযান এবং কালীঘাট অভিযানের ডাক। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার এক বছর পার। সেই ঘটনার প্রতিবাদে আগামী ৯ অগস্ট, শনিবার কলকাতার নানা জায়গায় মিছিল-বিক্ষোভ-সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন আরজি করের নির্যাতিতার মা-বাবা। তাতে সরাসরি সমর্থন করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তথা গোটা বিজেপি নেতৃত্ব। পাশাপাশি, কালীঘাট অভিযানেরও ডাক দিয়েছেন চিকিৎসকদের একাংশ।

কিন্তু তার আগে শুক্রবার কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর নবান্ন এবং ওই ভবন সংলগ্ন এলাকায় জমায়েত করা যাবে না। বিক্ষোভ-মিছিল করা যাবে না কালীঘাটেও। ঘটনাচক্রে, কালীঘাটে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। পুলিশের বক্তব্য, একে তো নবান্ন অভিযানের জন্য কোনও অনুমতি চাওয়া হয়নি। তার পরেও যদি বিধিনিষেধ অমান্য করে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়, কড়া পদক্ষেপ করা হবে। প্রতিবাদ কর্মসূচির জন্য দু’টি বিকল্প জায়গাও চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, হাওড়ার সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ড এবং কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে প্রতিবাদ করা যেতে পারে।

গত বছর আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বিধান সরণিতে প্রতিবাদ-মিছিল।

গত বছর আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বিধান সরণিতে প্রতিবাদ-মিছিল। ছবি: পিটিআই।

পুলিশি বিধিনিষেধ সত্ত্বেও নবান্ন অভিযান এবং কালীঘাট অভিযান হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ওই কর্মসূচির কারণে যাতে কোথাও কোনও বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না-হয়, তা নজরে রেখে কলকাতা পুলিশও প্রস্তুতি নিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বিশেষত নবান্ন অভিযানকে নজরে রেখে জায়গায় জায়গায় বসানো হবে স্টিলের ব্যারিকেড, কন্টেনার, জলকামান। বহু জায়গায় ব্যারিকেড বসেছে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেছেন, ‘‘পুলিশের বলে দেওয়া বিকল্প জায়গা ছাড়াও অন্যত্র ব্যবস্থা থাকবে।’’ হাওড়া সিটি পুলিশও নিজেদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডের বিচার চেয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা নবান্ন অভিযান ঘিরে তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই কর্মসূচিকে সমর্থন করে যোগও দিয়েছিল বিজেপি। তাতে ব্যারিকেড ভাঙা, ভাঙচুর, বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া ছাড়াও আন্দোলনকারী এবং পুলিশের মধ্যে জায়গায় জায়গায় সংঘর্ষে জখম হয়েছিলেন দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন। পুলিশের আশঙ্কা, গত বারের মতো এ বারেও আন্দোলনকারীরা মারমুখী হয়ে উঠতে পারেন। তাই পুলিশকর্মীদের একসঙ্গে থেকে বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলার নির্দেশ দিয়েছে লালবাজার। নবান্ন অভিযান আটকাতে কলকাতা হাই কোর্টে মামলাও হয়েছিল। কিন্তু ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সকলের মৌলিক অধিকার’ জানিয়ে সেই আবেদন খারিজ করেছে উচ্চ আদালত।

শনিবার নির্যাতিতার মা-বাবার ডাক দেওয়া নবান্ন অভিযানে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি থাকার কথা শুভেন্দুর। কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ’-এরও। বিজেপি সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত যা স্থির হয়েছে, তাতে তিনটি বড় মিছিল নবান্নের উদ্দেশে রওনা দেবে। একটি শুরু হবে শিয়ালদহ থেকে। আর একটি ডোরিনা ক্রসিং থেকে। তৃতীয়টি মিছিলটি নবান্নের উদ্দেশে রওনা দেবে হাওড়ার সাঁতরাগাছি থেকে।

গত বছর জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্য ভবন অভিযান।

গত বছর জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্য ভবন অভিযান। ছবি: পিটিআই।

বিজেপির একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি মিছিলের জন্য জমায়েত শুরু হবে ১১টা থেকে। নির্যাতিতার মা-বাবা থাকবেন ডোরিনা ক্রসিংয়ের মিছিলে। তাঁরা জমায়েতে যোগ দেবেন বেলা ১২টা নাগাদ। তবে শুভেন্দু কোন মিছিলে থাকবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পদ্মশিবিরের সূত্র জানিয়েছে, মূলত হাওড়া, দুই মেদিনীপুরের বিজেপি কর্মীরা যোগ দেবেন সাঁতরাগাছির মিছিলে। হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার দলীয় কর্মীদের যোগ দেওয়ার কথা শিয়ালদহের মিছিলে। আর ডোরিনা ক্রসিংয়ের মিছিলে থাকার কথা কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার দলীয় কর্মীদের। সিদ্ধান্ত হয়েছে, অন্য জেলার বিজেপি কর্মীরা মূলত ট্রেনে করে এসেই সাঁতরাগাছি বা শিয়ালদহের মিছিলে যোগ দেবেন। এর জন্য দিল্লিতে গিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে শুভেন্দু কথাও বলে এসেছিলেন, যাতে ট্রেনে কামরার সংখ্যা বাড়ানো হয়। যাতে মিছিলে যোগ দিতে এবং পরে বাড়ি ফিরতে তাঁদের কোনও সমস্যা না হয়।

অন্য দিকে, নবান্ন অভিযান ঠেকাতে পুলিশও প্রস্তুতি নিচ্ছে। লালবাজার সূত্রে খবর, বিশৃঙ্খলা এড়াতে শহরের চার জায়গা— এজেসি বসু রোডে টার্ফ ভিউয়ের সামনে, হেস্টিংস মোড়, খিদিরপুর ১১ ফার্লং গেট এবং হাওড়া সেতুতে স্টিলের ব্যারিকেড, কন্টেনার এবং জলকামান বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও শহরের মোট ১৯টি জায়গায় ব্যারিকেড বসবে। বিদ্যাসাগর সেতুর মুখেও ব্যারিকেড বসানো হবে। মোতায়েন থাকবে পুলিশবাহিনীও। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যাসাগর সেতুর আশপাশে যেখানে ব্যারিকেড হচ্ছে, সেখানে দায়িত্বে থাকবেন একাধিক অ্যাডিশনাল সিপি, ডিসি এবং এসি পদমর্যাদার অফিসার ও তাঁদের বাহিনী। হাওড়া সেতুতে থাকবেন এক জন করে অ্যাডিশনাল সিপি, ডিসি পদমর্যাদার অফিসার। ইতিমধ্যে তাঁরা ওই সব জায়গা পরিদর্শনও করেছেন।

গত বছর ডোরিনা ক্রসিংয়ের সামনে বিক্ষোভ।

গত বছর ডোরিনা ক্রসিংয়ের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।

হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রেও খবর, সেখানেও বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে বসছে ১০ ফুট উঁচু গার্ডরেল। মোতায়েন থাকবেন অন্তত ৪২ জন আইপিএস অফিসার। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক আইজি, ডিআইজি পদমর্যাদার অফিসার। বুধবার বিষয়টি নিয়ে একপ্রস্ত বৈঠক করেছিলেন হাওড়া পুলিশ লাইনে রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তারা। শুক্রবারও হাওড়ার শরৎ সদনে বৈঠক হয়েছে। সেখানে রাজ্য পুলিশের আইজি, ডিআইজি পদমর্যাদার অফিসারেরা ছাড়াও হাওড়া সিটি পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকেরা ছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাইরের জেলা থেকেও অন্তত ১৫০০ জন পুলিশকর্মীকে নিয়ে আসা হবে।

হাওড়া পুলিশ সূত্রে খবর, সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে সাঁতরাগাছি সেতু ধরে যে মিছিল নবান্নের দিকে যাবে, তা আটকাতে সেতুর আগে গ্যারেজ মোড়ে ১০ ফুট উঁচু গার্ডরেল ও সিসি ক্যামেরা বসছে। হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে থাকবে দু’টি জলকামান, র‍্যাফ, কমব্যাট ফোর্স, রোবোকপ-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। হাওড়া স্টেশন থেকে ময়দানের দিকে আসা মিছিল আটকাতে জিটি রোডে থাকছে উঁচু ব্যারিকেড, জলকামান। ব্যারিকেড করা হবে নবান্নের কাছে মন্দিরতলা, কাজিপাড়া, ফোরশোর রোডের সন্ধ্যাবাজার মোড়েও। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘শনিবার সকাল ১০টার পর থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, জিটি রোড-সহ বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’’ হাওড়ায় আর একটি নবান্নমুখী মিছিল আসবে গোলাবাড়ি থেকে হাওড়া স্টেশন হয়ে, ক্যাব রোড দিয়ে বঙ্কিম সেতু ছুঁয়ে হাওড়া ময়দান রুটে।

চিকিৎসকদের সংগঠন অভয়া মঞ্চও শনিবার ‘কালীঘাট চলো’ অভিযানের ডাক দিয়েছে। তাতে যোগ দেওয়ার কথা সিপিএম ঘেঁষা মঞ্চ ‘তিলোত্তমা বাহিনী’র। শনিবার রাখি পূর্ণিমা। জুনিয়র ডক্টর্স ফোরাম এবং অভয়া মঞ্চের সদস্যেরা সকালে রাখি বেঁধে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বার্তা দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর পর বিকেলে কালীঘাট অভিযান। বিকেল ৪টে নাগাদ হাজরা মোড়ে জমায়েত করে কালীঘাটের উদ্দেশে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। যদিও শুক্রবার কলকাতার সিপি মনোজ জানিয়ে দিয়েছেন, কালীঘাট অভিযান করা যাবে না। সে কথা আয়োজকদের জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। তবে অভয়া মঞ্চকেও প্রতিবাদ কর্মসূচির জন্য বিকল্প জায়গা বলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিপি। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও জমায়েতের ডাক দিয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের একটি অংশ।

শুক্রবারও প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে শহরে। রাত ৯টায় উত্তর কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত একটি মশাল মিছিলের ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্স ফোরাম (ডব্লিউবিজেডিএফ)। মধ্যরাত থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে অবস্থান চলবে তাদের।

কলকাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে জেলায় জেলায়ও শনিবার প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিভিন্ন মঞ্চ-সংগঠন। শিলিগুড়ির ভেনাস মোড়ে বিকেল ৫টায় রাখি বন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ‘দ্য নাইট ইজ় আওয়ার্স’ নামে একটি সংগঠন। মালদহে সন্ধ্যা ৬টায় মেডিক্যাল কলেজ চত্বর থেকে ‘দ্রোহের মিছিল’-এর ডাক দেওয়া হয়েছে। বিকেল ৫টায় বর্ধমান শহরের কার্জন গেট চত্বরেও জমায়েতের ডাক দিয়েছে অভয়া মঞ্চ।

Nabanna Abhijan for R G kar protest Kolkata Police West Bengal Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy