৬ অগস্ট, ২০১৪। নারকেলডাঙা থানা। নির্মল সাহা নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ছেলেকে যাদবপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করাতে একটি সংস্থার দফতরে গিয়ে তিন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চেকে দু’ধাপে ৩৮ লক্ষ টাকাও দেন। সংস্থাও কলেজে ভর্তির জাল প্রমাণপত্র বানিয়ে দেয়। কিন্তু ছেলেকে ভর্তি করাতে গিয়ে নির্মলবাবু দেখেন, সবই ভুয়ো। এর পরে লালবাজারের গোয়েন্দারা তদন্তে নেমে গ্রেফতার করে প্রবীর সাহা নামে এক জনকে। বাকি দু’জন এখনও পলাতক। টাকা উদ্ধার হয়নি।
২০ জুলাই, ২০১১। ভবানীপুর থানায় একটি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়। ভেলোর খ্রিস্টান মেডিক্যাল কলেজে ছেলের ভর্তির জন্য হাজরার বাসিন্দা অনীশ মুখোপাধ্যায় নামে এক যুবককে ১১ লক্ষ টাকা দেন ভবানীপুরের মহম্মদ আলি। কিন্তু বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও সে কোনও ব্যবস্থা না করায় তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অনীশ ধরা পড়লে সে সমস্ত টাকা ফেরত দেয়। বিনিময়ে জামিন পায় সে।
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টাকা ফেরত পান না অভিভাবকেরা। উল্টে বাবা-মায়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে মূলধন করে ভর্তির মরসুমে প্রচুর ছেলেমেয়েকে প্রতারিত করে বেশ কিছু ভুইফোঁড় সংস্থা।
প্রতি বছর জয়েন্ট এন্ট্রান্স বা অন্যান্য সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী। কিন্তু সফল হন খুব স্বল্পসংখ্যক। গোয়েন্দাদের দাবি, তখনই বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং-ডাক্তারি কলেজে ভর্তির জন্য তাঁরা শরণাপন্ন হন এই সমস্ত ভুইফোঁড় সংস্থার। শুধুমাত্র কলকাতা বা জেলার নয়, ইনদওর, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, চেন্নাইয়ের কলেজেও ভর্তির টোপ দেয় সংস্থাগুলি। অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্রছাত্রী বা অভিভাবকেরা সংস্থাগুলির সম্পর্কে খোঁজও করেন না।
গোয়েন্দারা জানান, অনেক সময়ে সংস্থাগুলি কলেজ-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজসের মাধ্যমে কিছু ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি করিয়ে দেয়। আর সেই বিশ্বাসকে মূলধন করেই ঠকায় তার চেয়ে বহুগুণ বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে। এই সমস্ত প্রতারণা সংস্থা গজিয়ে ওঠে মূলত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসে, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মরসুমে। ভুয়ো অফিস তৈরি করে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। থাকে তাদের ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সমস্ত খুঁটিনাটি নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকে তারা। আর এ ক্ষেত্রে ভর্তির বিষয়টি সহজ পথে না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মায়েদের কাছ থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নথিবিহীন নগদ লেনদেন হয়। জুলাই-অগস্ট থেকে এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়ে বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা বিভাগে। তদন্তের দায়িত্বে থাকে লালবাজারের প্রতারণা দমন বা জালিয়াতি দমন শাখার অফিসারেরা। গোয়েন্দাদের দাবি, এ ধরনের প্রতারণার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধদমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “বাবা মায়ের ইচ্ছেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতারণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা এই ঘটনাগুলি যতটা সম্ভব গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত করি।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অন্যান্য প্রতারণার মতো এটিও সামাজিক সমস্যা। অতিরিক্ত অর্থ দিলেই সাফল্য কেনা যায় না, এটা সবার বোঝা উচিত।” অন্য দিকে, রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রাস বোর্ডের চেয়ারম্যান ভাস্কর গুপ্ত জানান, তাঁদের ওয়েবসাইটের নকল তৈরি করেও প্রতারণা শুরু হয়েছিল। লালবাজারের সাইবার অপরাধ দমন শাখায় অভিযোগ জানানোর পরে তা বন্ধ হয়। তিনি বলেন, “এ রকম শুনলে আমরা পুলিশে অভিযোগ জানাতে বলি। আমাদের ওয়েবসাইটে সমস্ত রকম নিয়ম জানানো সত্ত্বেও কেউ ভুল পথে পা বাড়ালে কিছু করার নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy