Advertisement
০৬ মে ২০২৪
ইঞ্জিনিয়ার-হত্যা

সিসিটিভি-র সূত্রে পুলিশের জালে অভিযুক্ত চার জন

দু’দল যুবকের মধ্যে বচসা, তার থেকে হাতাহাতি, গাড়ির কাচ ভাঙা ও সব শেষে এক পক্ষের ছোড়া টালির আঘাতে মৃত্যু অন্য পক্ষের এক যুবকের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৬ ০৭:২৭
Share: Save:

দু’দল যুবকের মধ্যে বচসা, তার থেকে হাতাহাতি, গাড়ির কাচ ভাঙা ও সব শেষে এক পক্ষের ছোড়া টালির আঘাতে মৃত্যু অন্য পক্ষের এক যুবকের। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ ও ধৃতদের স্বীকারোক্তি থেকে গত শুক্রবার রাতে ম্যাডক্স স্কোয়্যার এলাকায় রমিত মণ্ডল নামে ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে অবশেষে নিশ্চিত হয়েছেন পুলিশের তদন্তকারীরা।

শুধু ফুটেজই নয়, এলাকায় ঘোরাফেরা করা একটি নীল স্কুটারও নজর এড়ায়নি প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের। পুলিশ ফুটেজে দেখেছে, ঘটনাস্থলে দু’টি মোটরসাইকেল ও একটি স্কুটার ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গোলমালের সময়ে দুষ্কৃতীরা এসেছিল নীল রঙের স্কুটার নিয়ে। ‘এলাকায় গোলমাল হচ্ছে’, এ কথা জানিয়ে সেই রাতে ফোন করা যুবক পরের দিন সকালে নীল রঙের স্কুটার নিয়ে হাজির হয়েছিল থানায় ফের নালিশ জানাতে। আর, এলাকায় প্রতি রাতে নীল রঙের স্কুটার চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় এক যুবক। এই সব সূত্র জুড়েই সমাধান করা হয়েছে রমিত মণ্ডল খুনের ঘটনার।

ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে রণদীপ সরকার ওরফে বিশাল, শুভময় জানা ওরফে বাবুসোনা এবং সুরজিৎ টিকাদারকে। ধর্মেন্দ্র সাউ নামে আরও এক যুবককে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশালের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে সেই নীল স্কুটার। শুভময়কে বালিগঞ্জের পেয়ারাবাগান বস্তি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার পরেই সুরজিৎ তাঁর মাসির বাড়ি উস্তিতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। বুধবার রাতে সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের প্রত্যেকের বাড়ি বালিগঞ্জের পেয়ারাবাগান এলাকায়। তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতেরা প্রত্যেকেই ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তিন জনকেই আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ২৯ তারিখ পর্যন্ত তাঁদের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ওই ঘটনায় যুক্ত বাকি তিন জনকে খোঁজা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশের দাবি, গত ১৭ তারিখ রাতে গোলমালের পরে বিশালের ছোড়া টালির আঘাতেই গুরুতর জখম হওয়ার পরে মৃত্যু হয়েছিল রমিতের। আর ঘটনার দিন বিশালই নীল স্কুটার চালিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন অন্যদের সঙ্গে নিয়ে।

লালবাজার সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার রাত দেড়টা নাগাদ। ওই দিন রমিত-সহ পাঁচ বন্ধু বিরিয়ানি খেতে চিরঞ্জিত নন্দীর গাড়িতে সোনারপুর থেকে পার্ক সার্কাসে আসেন। সেখানে বিরিয়ানি কেনার পর এ জে সি বসু রোড দিয়ে মিন্টো পার্ক হয়ে ম্যাডক্স স্কোয়্যারে যান তাঁরা। সেখানে রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করানো হয়। এর পরে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে গান চালান এবং খাওয়া দাওয়া শুরু করেন তাঁরা। তদন্তকারীদের দাবি, সেই সময়ে তিনটি মোটরবাইকে সেখানে আসেন বিশাল, শুভময় ও সুরজিৎ। রাস্তার ধারে তাঁদের অপরিচিত গাড়ি ও জটলা দেখে ওই গাড়ির কাছে আসেন তাঁরা। গাড়ির যাত্রীরা ‘অসভ্যতা’ করছে, এই অভিযোগে বিশালদের সঙ্গে রমিত-চিরঞ্জিতদের বচসা শুরু হয়। যা এক সময়ে হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অভিযোগ, রাস্তার পাশে ফুটপাথে থাকা টালি তুলে গা়ড়ির সামনের কাচ ভেঙে দেয় ওই যুবকেরা। মারধর করা হয় চিরঞ্জিতকেও।

গাড়ি নিয়ে পালাতে শুরু করেন চিরঞ্জিতেরা। কিন্তু পালিত রোডের কাছে আবার তাঁরা গাড়িটিকে দাঁড় করিয়ে ইউ টার্ন নিয়ে ম্যাডক্স স্কোয়ারের সামনে চলে আসেন। তদন্তকারীদের দাবি, ওই ইউ টার্ন নেওয়ার পরে গাড়ির গতি দ্রুত করতে গিয়ে সাময়িক ভাবে নিয়ন্ত্রণ হারান তাঁরা। গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। সাদা গাড়িটি ফিরে এসেছে দেখে ফের বাবুসোনা, বিশালরা ছুটে আসেন। পুলিশের দাবি, ওই সময়ে বিশাল রাস্তার ধারে থাকা টালি তুলে গাড়ি লক্ষ করে ছোড়েন। গাড়ির জানলার কাচ খোলা থাকায় তা গিয়ে লাগে রমিতের মাথায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, চিরঞ্জিতেরা জানিয়েছেন, রমিতের মাথা থেকে রক্ত পড়তে দেখেই তাঁকে শরৎ বসু রোডে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভর্তি না নেওয়ায় ই এম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানেই সোমবার রাতে রমিতের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পরেই রমিতের বাবা বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নীল স্কুটারের সূত্র ধরেই বুধবার প্রথমে বিশালকে থানায় ডেকে আনা হয়। দফায় দফায় জেরার পরে ঘটনার কথা স্বীকার করে নেন তিনি। বাকি অভিযুক্তদের নামও জানিয়ে দেন বিশাল। পরে বাবুসোনা এবং সুরজিৎকে গ্রেফতার করা হলেও বাকিরা পালিয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (এসইডি) গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে আমরা দু’টি মোটরসাইকেল এবং একটি স্কুটির সন্ধান পেয়েছি। প্রথম মোটরসাইকেলে তিন জন, দ্বিতীয়টিতে দু’জন এবং স্কুটারে এক জন ছিলেন।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, রমিতের গাড়ির পিছনে ফুটপাথের টালি ছুড়েছিল বিশালই। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে এই তথ্যই উঠে এসেছে। রক্তমাখা ওই টালিটি ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, ইঞ্জিনিয়ার খুনে অভিযুক্ত রণদীপ ওরফে বিশাল নিজেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। কল্যাণীর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। ওই কলেজের মেসে থাকতেন বিশাল। ১৭ তারিখই তৃতীয় বর্ষের শেষ পরীক্ষা দিয়ে মেস থেকে পেয়ারাবাগান বস্তিতে ফিরেছিলেন তিনি। এলাকায় শীতলা পুজোর আয়োজন থাকায় রাতে দেখতে বেরিয়েছিলেন। অন্য দিকে, শুভময় এবং সুরজিৎ পার্ক সার্কাসের হোটেলে কাজ করতেন বলে জানা গিয়েছে। রণদীপের বাবা দীপক সরকার বলেন, ‘‘শুভময় এবং সুরজিতের সঙ্গে চেনাজানা থাকলেও ওরা ওর বন্ধু ছিল না। সকলের সঙ্গে আমার ছেলেও ওই যুবকদের অভব্য আচরণের প্রতিবাদ করতে গিয়েছিল।’’ তাঁর দাবি, বেকায়দায় তাঁর ছেলের ছোড়া ইট মাথায় লেগে যায় রমিতের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police cctv arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE