ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ দাবি করেছিলেন, ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রচারে এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে পথ দুর্ঘটনা। তবে নিরাপদে গাড়ি চালিয়ে প্রাণ বাঁচানোর এই দাবি যে কতখানি সত্যি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল শুক্রবার ভোরের দু’টি মোটরবাইক দুর্ঘটনা। পুজোর শুরুতেই অম্বেডকর ব্রিজ এবং মা উড়ালপুলে পৃথক দু’টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে চার যুবকের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আরও এক। রাত ১০টার পরে উড়ালপুলে বাইক চালানো নিষিদ্ধ হলেও কী ভাবে পুলিশি নজরদারি এড়িয়ে সেখানে মোটরবাইক ঢুকে পড়ল, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।
ষষ্ঠীর ভোরে প্রথম ঘটনাটি ঘটে পৌনে তিনটে নাগাদ সায়েন্স সিটি থেকে গড়িয়ার দিকের অম্বেডকর ব্রিজের উপরে। ইএম বাইপাস ধরে পার্ক সার্কাস যাওয়ার সময়ে এই ব্রিজের উপরে ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় একটি মোটরবাইক। বাইকে ছিলেন তিন আরোহী। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রচণ্ড গতিতে আসা ওই বাইকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারলে রাস্তায় ছিটকে পড়েন চালক-সহ দুই আরোহী। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় কুণাল মিস্ত্রি (১৮) এবং কুশল মিস্ত্রি (১৭) নামের দুই যুবকের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাইক চালক সুমন মিস্ত্রিকে (১৬) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার দুপুরে মৃত্যু হয় তাঁরও। পুলিশ জানিয়েছে, ওই তিন যুবকই মুকুন্দপুর এলাকার বাসিন্দা। তিন জনেরই মাথায় হেলমেট ছিল না বলে জানায় পুলিশ।
এই ঘটনার মিনিট পনেরো পরেই ফের বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এক যুবক। ভোর তিনটে নাগাদ পার্কসার্কাসমুখী মা উড়ালপুলের উপরে ফের ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় একটি বাইক। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাইকে চালকের সঙ্গে থাকা আরোহী কার্তিক অধিকারীর (২৬) মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। মাথায় চোট নিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি বাইক চালক মহম্মদ আকিব।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে অবশ্য আকিব এবং কার্তিক দু’জনেরই মাথায় হেলমেট ছিল। কিন্তু প্রথমটির ক্ষেত্রে চালক এবং আরোহীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, নিয়ম না মানাটাই ক্রমশ নিয়ম হয়ে উঠছে কলকাতার বুকে। নির্দিষ্ট সময়ের পরে ট্রাফিক নিয়ম না মেনে উড়ালপুলে বাইক চালানো, বাইকে তিনজন সওয়ারি, হেলমেট নেই —তা সত্ত্বেও কী করে ওই বাইক পুলিশের নজর এড়িয়ে গেল, স্বাভাবিক ভাবেই তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বৃহস্পতিবারই কলকাতা পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল সুরজিৎ করপুরকায়স্থ দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘সামলে চালান, প্রাণ বাঁচান’ (সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ) প্রকল্প শুরুর তিন মাসের মধ্যে পথ দুর্ঘটনা কমে গিয়েছে ৫০ শতাংশ। ডিজির এই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বেপরোয়া নিয়মহীন বাইকে মৃত্যু হয় তিনজনের। গত বছর তৃতীয়া থেকে ষষ্ঠীর মধ্যে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৬ জনের। এ বছর তাই বাইপাস লাগোয়া এলাকায় বিশেষ পুলিশি নজরদারির কথা ভেবেছে পুলিশ। বাইপাস লাগোয়া এলাকায় প্রতিমা দেখার ভিড় না থাকলেও মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর আদর্শ জায়গা এই অঞ্চলগুলি। কিন্তু শুক্রবার রাতের এই ঘটনা বাইপাসের পুলিশি নজরদারিকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy