ভেঙে পড়া সেই বাড়ি। প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটে। — নিজস্ব চিত্র
শহরে ফের বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে জখম হলেন ৪ মহিলা-সহ পাঁচজন। এ বার মুচিপাড়া থানা এলাকার প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটে। আহতদের মধ্যে তিন মহিলার অবস্থা গুরুতর। তাঁদের মধ্যে এক জন এসএসকেএমে ও অন্য দু’জন মেডিক্যালে ভর্তি। শনিবার সকালে ওই দুর্ঘটনার পরে বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে পুরসভার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠছে।
গত সেপ্টেম্বরে উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে এমনই একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে মারা যান দু’জন। দুর্ঘটনার খবরে সে সময়ে বিচলিত হয়ে পড়েন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে আর যাতে কোনও অঘটন না ঘটে, সে জন্য সতর্ক করেছিলেন পুর প্রশাসনকে। শহরের সমস্ত বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধান করার নির্দেশও দেন মেয়রকে। সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ দিনের মধ্যে সমাজের সর্বস্তরের বিশিষ্টজনেদের নিয়ে মেয়রের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয় ও সেই কমিটির বৈঠক হয়। গত সেপ্টেম্বরের সেই বৈঠকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয় শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলির সংস্কার নিয়ে নীতি নির্ধারণ করার জন্য। প্রণববাবু সম্প্রতি ওই নীতির একটি প্রাথমিক খসড়া মেয়রের কাছে জমা দিয়েছেন, তবে তার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার কাজ এখনও হয়নি। ফলে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে পুরসভার তৎপরতা নিয়ে। এর মধ্যে শনিবার ফের বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে পড়ায় অস্বস্তিতে পুরকর্তারাও। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এ দিনও অবশ্য জানিয়েছেন, বিপজ্জনক বাড়ি সংস্কারের বিষয়ে রাজ্য সরকার নতুন করে আইন প্রণয়ন করতে চলেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ ৭০/১ প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটে একটি দোতলার বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন গায়ত্রী দাস, রমা ঘোষ এবং পূর্ণিমা শিউলি নামে বাড়িরই ভাড়াটে তিন মহিলা। বারান্দা ভেঙে পড়ায় নীচে পড়ে যান তাঁরা। এ দিকে, উপর থেকে চাঙড় ভেঙে পড়ায় আহত হন এলাকার এক বাসিন্দা রিনা দাস এবং আরও এক পথচারী। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে কলকাতা মেডিক্যালে নিয়ে যান। রিনাদেবী ও এক পথচারীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছে়ড়ে দেওয়া হয়।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ছাদ আগাছায় ভর্তি। বয়সের ভারে ঝুঁকে গিয়েছে বাড়ির একাংশ। পুরসভা আগেই বাড়িটিতে ‘বিপজ্জনক’ তকমা লাগিয়ে গিয়েছিল। তার পরেও অবশ্য ভ্রূক্ষেপ করেননি বাসিন্দারা। পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, পুর আইন মোতাবেক বিপজ্জনক বাড়িতে নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়িতে কেউ বাস করলে মানবিক কারণেই তাঁদের জোর করে তুলে দেওয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রে জোর করে তুলতে গেলেও মামলা হয়। তাই নোটিস লাগিয়েই ক্ষাম্ত থাকে পুরসভা। বিপজ্জনক বাড়িতে বসবাস চলতে থাকাতেই বিপদ বাড়ছে বলে মনে করছেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ডিজি (২) দেবাশিস চক্রবর্তীও।
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সত্যেন্দ্রনাথ দে বলেন, ‘‘প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটে বহু বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। পুরসভা বিপজ্জনক নোটিস টাঙালেও বাড়ির মালিকেরা কর্ণপাত করেন না।।’’ কিন্তু পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না থাকলে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবেন, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি পুর কর্তাদের কাছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, শহরে এ রকম বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। যার মধ্যে উত্তর ও মধ্য কলকাতার পোস্তা, পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট, বড়বাজার, কলেজ স্ট্রিট, কলুটোলা, রবীন্দ্র সরণির মতো জায়গায় বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy