নতুন পাঁচশো টাকার নোট হাতে। —নিজস্ব চিত্র।
বারো দিনের অপেক্ষার অবসানে কলকাতায় ঢুকেছে নতুন পাঁচশো টাকার নোট। স্বভাবতই তাকে নিয়ে ‘আহ্লাদের’ শেষ নেই। এক বার হাতে পেলেই তার সঙ্গে সেলফি তুলে ফেলছেন বহু উৎসাহী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিও দিচ্ছেন অনেকে।
নোট বাতিল হওয়া ইস্তক একটা কথা বাজারে ঘুরছিল— ‘নতুন পাঁচশোর নোট না ঢুকলে বিকিকিনি মার খাবে।’ বৈধ নোটের আকালের বাজারে কার্যত মুশকিল আসান সেই নোট কলকাতায় ঢুকল রবিবার। অথচ বাজারে তেমন ছড়াল না মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত। তাই, নতুন পাঁচশোর নোট নিয়ে আশায়-আশায় থাকলেও তার আসা নিয়ে কার্যত হতাশ ক্রেতা, বিক্রেতারা।
বাজারের বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, দু’হাজার টাকার নতুন নোট ছাড়া হলেও, পাঁচশো টাকার নতুন নোট না পেলে অত বড় নোটের উপযোগিতা বাজারে নেই। শহরের বিভিন্ন বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, কারও কারও হাতে এলেও, পাঁচশো টাকার নতুন নোট বাজারে এখনও সে ভাবে ঘুরছে না। এক ক্রেতার বক্রোক্তি, ‘‘পাঁচশো টাকার নতুন নোট তো নয়,
যেন মরীচিকা।’’
বাঁশদ্রোণী সুপার মার্কেটের মাছ ব্যবসায়ী বাবু দাস জানান, সোমবার মাত্র দু’জন খদ্দেরের কাছ থেকে একটি করে পাঁচশো টাকার নতুন নোট পেয়েছেন। এ মঙ্গলবার অবশ্য একটিও তেমন নোট তিনি পাননি। সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ পাইকারি বাজার থেকে এনে পমফ্রেট, পার্শে, ভেটকি ঝুড়িতে সাজাচ্ছিলেন দক্ষিণ শহরতলির আজাদগড় বাজারের মাছ বিক্রেতা রবি সাহা। তার আক্ষেপ, ‘‘আড়তে তো নতুন পাঁচশো টাকার নোট কেউ দিল না। এ বার দেখা যাক ক্রেতারা ক’জন দেন।’’ তখন দোকানের সামনে মাছ কেনার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা জনা চারেক ক্রেতা জানিয়ে দিলেন, তাঁদের কারও কাছেই নতুন পাঁচশো টাকার নোট নেই।
গড়িয়াহাট বাজারের আনাজ বিক্রেতা সুবল সাহা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকাল ৬টায় দোকান খুলে, দুপুর ১টায় বন্ধ করেছি। পাঁচশো টাকার নতুন নোট দিয়েছেন মাত্র এক জন।’’ মানিকতলা বাজারে দোকানের সংখ্যা প্রায় সাতশো। ওই বাজারের ব্যবসায়ী কমিটির সম্পাদক প্রভাত দাস বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে মাত্র এক জন দোকানদারের কাছে একটি নতুন পাঁচশোর নোট দেখতে পেয়েছিলাম।’’
বিভিন্ন বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অভিযোগ, পাঁচশো টাকার নতুন নোট সব এটিএমে নয়, কেবল গুটিকতক এটিএমে পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য সব এটিএম-কে পাঁচশোর নোট ব্যবহারের উপযুক্ত করে তুলতে সময় লাগবে বলে আগেই ব্যাঙ্কগুলির তরফে জানানো হয়েছিল।
এ দিন ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে লেক মার্কেটে বাজার করতে গিয়েছিলেন টালিগঞ্জের বাসিন্দা, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার দীপাঞ্জন মজুমদার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাজারে আসার আগে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের এটিএমে গিয়েছিলাম। নতুন দু’হাজার টাকার নোট এড়াতে উনিশশো টাকা তুলেছিলাম। ভেবেছিলাম অন্তত তিনটে নতুন পাঁচশোর নোট মিলবে। কিন্তু সব একশো টাকার নোট পেলাম।’’
রানিকুঠির মুদির দোকানি অসিত কর বলেন, ‘‘রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। সোমবার রাত ন’টা নাগাদ এক জন ক্রেতা আমাকে নতুন পাঁচশো টাকার একটা নোট দেন।’’ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এক জনও দেননি।
ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার যোধপুর পার্ক শাখায় কারেন্সি চেস্ট থেকে এক দিন ২০ লক্ষ, এক দিন ৩০ লক্ষ, আবার কোনও দিন নগদ ৫০ লক্ষ টাকাও আসছে। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই ব্যাঙ্কে একটিও নতুন পাঁচশোর নোট ঢোকেনি বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানান।
আসলে রবিবার সন্ধ্যায় শহরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে নতুন পাঁচশোর নোট ঢোকার পরে আশায় বুক বেঁধেছিলেন শহরবাসী। তবে তাঁদের একটা বড় অংশ এখনও আশাহত।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি সূত্র বলছে, নাসিকের সিকিওরিটি প্রেস থেকে কলকাতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কে গত সপ্তাহে ১০ বাক্স নতুন পাঁচশোর নোট এসেছিল। প্রতি বাক্সে এক লক্ষ করে মোট ১০ লক্ষ পিস নোট এসেছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা স্বীকার করে নিচ্ছেন, ‘‘শহরের চাহিদার তুলনায় এই পরিমাণ খুবই কম। আরও দশ বাক্স নতুন পাঁচশোর নোট অবিলম্বে না এলে সমস্যার সমাধান হওয়া মুশকিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy